কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র চালু করেছি আমরা (ভিডিও)

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

এক বছর ধরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন জি এম কাদের। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা তিনি। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মানবজমিন-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে দেশে ক্রমে একনায়কতন্ত্র চালু করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দল সব সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। দেশে সুশাসনের প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কে কোন্‌ আদর্শের এটা বড় কথা নয়, মানুষ সুশাসন চায়। যারা সুশাসন নিশ্চিত করবে জনগণ তাদের সমর্থন দেবে। সাক্ষাৎকারে নিজের দলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন জি এম কাদের। মানবজমিন-এর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। মানবজমিন: পেশাগত জীবনে মূলত আপনি একজন প্রকৌশলী ছিলেন। বর্তমানে একটি বড় রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান। রাজনীতিতে আপনার প্রবেশ, সংসদে যাওয়া এবং সবশেষ দলের সর্বোচ্চ দায়িত্ব নেয়া; এটিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?জি এম কাদের: এটিকে আমি একটি অর্জন এবং একই সঙ্গে খুবই স্বাভাবিক বিষয় বলেই মনে করি। কেননা, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ আছেন, যারা রাজনীতি করে দেশের সর্বোচ্চ শিখরে গেছেন। তারা বিভিন্ন পেশা থেকে আসছেন। অনেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, আর্মি অফিসার ছিলেন। তারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই রাজনীতি করে সব স্টেপ পার হয়ে নির্বাচিত হয়ে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ে এসেছেন। আমিও পেশাগতভাবে প্রকৌশলী ছিলাম। বিশেষ কারণে রাজনীতিতে আসতে হয়েছে। মোটামুটি তৃণমূল রাজনীতি থেকে শুরু করে নির্বাচিত হয়ে পর্যায়ক্রমে জাতীয় সংসদ এবং জাতীয় রাজনীতিতে বিভিন্নভাবে অবদান বা ভূমিকা রেখে একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি।  সেদিক থেকে চিন্তা করলে এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। মানবজমিন: জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জনমনে একটি প্রশ্ন ছিল জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ কী? কারণ, পার্টির সবচেয়ে বড় শক্তিই ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। প্রশ্ন হলো- আপনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলকে সুসংগঠিত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিলেন? এই মুহূর্তে দল কি অবস্থায় আছে। জি এম কাদের: এরশাদ সাহেবের জীবিতকালে একটি কথা প্রচলিত ছিল এবং সবাই এটি বিশ্বাস করতো। সেটা হলো জাতীয় পার্টি মানেই এরশাদ এবং এরশাদ মানেই জাতীয় পার্টি। তার এই ইমেজ বা ভাবমূর্তি সারা দেশে এমনকি দেশের বাইরেও ছড়িয়েছিল। কাজেই তিনিই এই দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকবেন- এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উনার অবর্তমানে দলটি তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারবে কি-না এটি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অনেক ধরনের সংশয় ছিল। অনেকে সুনিশ্চিত ছিল যে, এটা হয়তো হবে না। হয়তো জাতীয় পার্টি বিভিন্নভাবে ভাগ হয়ে যাবে এবং দলটি বিলীন হয়ে যাবে। এভাবে অবশ্য আমাদের দেশের অনেক বড় বড় রাজনৈতিক দলও বিলীন হয়ে গেছে। নেতৃত্ব শূন্য হয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি। তো আমরা যখন এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম তখন আমি মোটামুটি দলের যারা শীর্ষ পর্যায়ের নেতানেত্রী ছিলেন তাদের সঙ্গে আলাপ- আলোচনা করলাম। এখানে আমি একটি জিনিস তুলে ধরার চেষ্টা করলাম সেটা হলো- এরশাদ সাহেবের যে বিরাট  অবস্থান। সেই অবস্থান থেকে তিনি যখন চলে গেলেন তখন একটা শূন্যতা সৃষ্টি হলো। তখন স্বাভাবিকভাবেই এই শূন্যতা কেউ এককভাবে পূরণ করতে পারবো না। এজন্য আমরা সবাই মিলে যার যতটুকু সক্ষমতা আছে, বা যে যেটাতে ভালো সবগুলোকে যদি আমরা সমন্বয় করতে পারি এবং সবাই মিলে যদি কাজ করতে পারি তাহলে হয়তো শূন্যতাটি কিছুটা হলেও পূরণ হবে। সেই প্রেক্ষিতে দলের স্বার্থে এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মোটামুটি আমরা সবাই একমত হই। ফলে আজ আমাদের দল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নিয়ামক শক্তি এবং ব্যালেন্সিং ফ্যাক্টর। এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষের প্রত্যাশিত বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেও জাতীয় পার্টির একটি সুযোগ আছে।  মানবজমিন: একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আগে দলীয় এক অনুষ্ঠানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছিলেন, মৃত্যুর আগে আমি জাতীয় পার্টিকে আবারো ক্ষমতায় দেখতে চাই। আমি দেখে যেতে চাই, জাতীয় পার্টি জনগণের দল হয়েছে, তারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটাই আমার শেষ ইচ্ছা। ক্ষমতায় যাওয়ার তার শেষ ইচ্ছাটি পূরণ হয়নি ঠিকই। কিন্তু জাতীয় পার্টি কতোটা ‘জনগণের দল’ হিসেবে গড়ে উঠেছে সেটা একটি প্রশ্ন? জি এম কাদের: জাতীয় পার্টি শুরু থেকেই জনগণের দল ছিল। কিন্তু বিভিন্নভাবে প্রচার মাধ্যমে কথাবার্তা দিয়ে এই জিনিসটিকে ঢেকে রাখা হয়েছিল। তবে সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয়েছে যে ৯০ সালের আন্দোলনের পরে এরশাদ সাহেবকে কথা দেয়া হল যে আপনি ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচনে আসুন এবং সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আপনি যদি দেখাতে পারেন তাহলে আমরা মেনে নেব। নির্বাচনে সকলে সমানভাবে থাকবো কেউ সরকারের থেকে সুযোগ নেব না। সেই পরিস্থিতিতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে উনি যখন পদত্যাগ করে আসলেন তখন কিন্তু অঙ্গিকার ভঙ্গ করে তাকে জেলে নেয়া হল এবং দলের নেতাকর্মীদেরও জেলে নেয়া হলো। তখন সর্বোতভাবে সব গণমাধ্যমে তার নামে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হলো। ওই নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য এরশাদ সাহেবকে অনুমতিই দেয়া হলো না। পরে জনগণের চাপে উনাকে নির্বাচন করতে দেয়া হলো। সেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে বিভিন্নভাবে বাধা দেয়া হলো। শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে নেতাকর্মীরা জেলে থাকাকালীন, এরশাদ সাহেব জেলে থেকে ৫টি আসনে জয়ী হলেন এবং ৩৫টি আসনে জাতীয় পার্টি নির্বাচিত হয়ে সেই সময়ে সংসদে গেল। এরশাদ সাহেবের দল তখনকার সময়েও রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার মতো অবস্থান নিয়ে সংসদে এসেছিল। এরশাদ সাহেব মারা যাওয়ার সময়ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। এরপরও যারা বলেন জাতীয় পার্টি জনগণের দল নয়, তাহলে সেই সময়ে জনগণ ছাড়া তার পাশে যখন কেউ ছিল না তখন কীভাবে তিনি এতদূর এগিয়ে গেলেন? তার মানে জাতীয় পার্টি জনগণের দল তখন থেকেই ছিল, সব সময়ই ছিল। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল সবাই চেষ্টা করেছে কিন্তু আমরা আমাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছি। মানবজমিন: রাজনীতির দাবার ছকে টিকে থাকার জন্য এইচ এম এরশাদ শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সখ্য রেখে গেছেন; পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব, আর মারা গেছেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে। বর্তমানে সংসদে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে দেখা গেলেও অনেকে মনে করেন, দলের আদর্শিক দৃঢ়তা না থাকায় দলটি বরাবরই আবর্তিত হয়েছে রাজনৈতিক সুবিধা বিবেচনায়। সমালোচকদের এমন সমালোচনার জবাবে আপনি কী বলবেন?জি এম কাদের: এই কথাগুলোর সঙ্গে আমি একমত হতে পারলাম না। রাজনীতির অর্থই হল যে আমরা দেশের সেবা করতে চাই, এবং সেবা করার জন্য আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চাই। পৃথিবীর যেকোনো রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদরাও সেবা করার জন্য ক্ষমতায় যেতে চায় বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চায়। তো জাতীয় পার্টি নয় কেন? এটা সুবিধাবাদির বিষয় নয়। এটা রাজনীতির স্বাভাবিকতা। এটা রাজনীতির সংজ্ঞা যে জনগণের সেবা করতে গেলে আমাকে ক্ষমতায় যেতে হবে বা ক্ষমতাসীনদের প্রভাবিত করতে হবে। তো সেটা জাতীয় পার্টি করে আসছে এখানে অপরাধটা কী? আর সাধারণ মানুষের কাছে কোন আদর্শ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কে উদারপন্থি, কে রক্ষণশীল, কে ইসলামপন্থি কে বামপন্থি, কে সাম্যবাদী, কে সমাজতান্ত্রিক- এগুলো মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। সাধারণ মানুষ যেটা দেখতে চায় সেটা হলো সুশাসন। এমনকি গণতন্ত্রও তাদের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তারা দেখতে চায় সুশাসন। সুশাসন যে দিতে পারবে তারা তাকেই সমর্থন দিতে চায়। আর সুশাসন অর্থ হলো আইনের শাসন, ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা। সেটা কমিউনিস্টরা যদি পারে তারা তাকেই সমর্থন দিতে চায়, যদি ইসলামপন্থিরা পারে তারা তাদেরকেই সমর্থন দিতে চায়। তবে মানুষ গণতন্ত্রকে সমর্থন করে এজন্য যে গণতন্ত্র থাকলে সুশাসন পাওয়া যায়। মানবজমিন: বিরোদী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি কতোটা সফল? অনেকের প্রশ্ন যে, সংসদে এবং দেশের সার্বিক বিষয়গুলোতে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির যে ভূমিকায় থাকা দরকার তা দেখা যায় না? জি এম কাদের: আমাদের দেশের শাসন ব্যববস্থায় বিরোধী দলের যে ভূমিকা থাকার কথা, সত্যিকার অর্থে যদি কোনো মার্কিং সিস্টেম থেকে থাকে তাহলে জাতীয় পার্টি এক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি মার্ক পাবে। এর আগে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন আওয়ামী লীগ সংসদে কিছুদিন থেকেই চলে আসছে। কেন না ৯১ এর পর থেকে যে সংসদ তারা তৈরি করেছে সেখানে কথা বলা যায় কিন্তু কথা শোনানো যায় না। কাজেই সংসদে থেকে কি করবে? সংসদ বর্জন করেছে। যখন আওয়ামী লীগ সংসদে ছিল তখন বিএনপিও একই কাজ করেছে। সুতরাং সংসদে তারা কেউ বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেনি। সংসদের বাইরে যে মারামারি, ভাঙচুর, হরতাল জনগণ এসব পছন্দ করতো না। সেটা করলেই যে ভালো বিরোধী দল হওয়া যায় সেটারও প্রমাণ হয়নি। কাজেই সংসদের বাইরে শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক যে আন্দোলন সেটা জাতীয় পার্টি করছে বিএনপিও করছে। সেখানে আমরাও বরং কারো চেয়ে কম করছি না। মানবজমিন: অনেকেই মনে করেন দেশে এখন গণতন্ত্রের পূর্ণ উপস্থিতি নেই। মতামত প্রকাশের সুযোগ কম। দলগুলো স্বাধীন রাজনীতি চর্চা করতে পারছে না। আপনি কী তাই মনে করেন?জি এম কাদের: গণতন্ত্রের কিছু পদ্ধতি আছে। রাজতন্ত্র মানে রাজার দ্বারা শাসিত। আর প্রজাতন্ত্র মানে প্রজার দ্বারা শাসিত। প্রজারা তো দেশ শাসন করতে পারেন না, তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। এই প্রতিনিধি নির্বাচনের কতগুলো পন্থা আছে। এর একটি হলো প্লুরালিটি মেজরিটি ভোটিং সিস্টেম। যেটা আমরা সাধারণ সংসদ নির্বাচনে করি। আরেকটি হলো প্রোপারশনাল রিপ্রেজেন্টেশন ভোটিং সিস্টেম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। আরেকটি হলো দেশের জনগণের মতে দেশ শাসন হয় সেটার জন্য আছে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি। সেখানে প্রেসিডেন্টই সব, তিনিই সব ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু সেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার একটি ব্যবস্থা থাকে। আর পার্লামেন্টারি সিস্টেমে পার্লামেন্টই সমস্ত কিছুর কেন্দ্রবিন্দু হবে। পার্লামেন্ট সরকার পরিবর্তন করবে, মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করবে। কারণ সেখানে সরকারি দল বা বিরোধী দল হিসেবে কেউ থাকে না। সেখানে থাকে সরকারি সদস্য আর বেসরকারি সদস্য। সরকারি সদস্য শুধু মন্ত্রীরা থাকেন। আর বেসরকারি সদস্য হলো সমস্ত দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তারা সরকারি বা মন্ত্রীদের যেকোনো বিলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে পারেন। এটা পার্লামেন্টারি সিস্টেম। সেখানে আবার সরকারি দলের সদস্যরা সব সময় সরকারি দলের পক্ষে থাকবেন এরকম কোনো কথা থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশের ৭০ ধারায় করা হয়েছে যে সেখানে সরকারি দলের সদস্যরা সব সময় সরকারি দলেরই সমর্থন করবেন। সরকারের দলের যিনি প্রধান, তিনি হন সরকার প্রধান, সংসদ প্রধান। তিনি যা বলবেন সেটাই পাস হবে। মেজরিটিরা তার বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না। সেই প্রেক্ষিতে সরকারি দল যেটা চাইবে সেটাই পাস হবে। ক্ষমতা যেখানে কেন্দ্রীভূত করা হয় এবং যে ক্ষমতাকে কোনো নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকে না। সেটাই হলো একনায়কতন্ত্র। আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে আমার বিশ্লেষণে আমরা একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছি সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে। এখানে সমস্ত ক্ষমতাকে আমরা কেন্দ্রীভূত করেছি সরকার প্রধানের ওপরে। এমনকি সেই সরকার প্রধানকে নিয়ন্ত্রণের যে প্রতিষ্ঠান সংসদ, সেটাকেও করেছি সরকার প্রধানের ওপরে। মানবজমিন:    নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনাগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গণতন্ত্রের জন্য এটি কতোটা নেতিবাচক? এবং দেশের সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে আপনার দলের অবস্থান কী?জি এম কাদের: আমরা সব সময়ই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। নির্বাচন তো গেটওয়ে টু ডেমোক্রেসি। নির্বাচন সঠিক না হলে গণতন্ত্রের চর্চা কখনোই করতে পারবো না। এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। দেশ চালানোর জন্য জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। সেটা আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ হবে, এটিই স্বাভাবিক এবং হওয়া উচিত। সেটা না হলে অবশ্যই এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। মানবজমিন: বেকারত্বের সমস্যা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মাদক, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এসব সমস্যা সমাধানে বিরোধী দল হিসেবে আপনাদের কোন ভূমিকা আছে? জি এম কাদের: সমস্যা সমাধানে সরকার ছাড়া আর কারো কোনো পদক্ষেপ থাকে না। আমরা শুধু সুপারিশ দিতে পারি। এবং সরকার যদি কোনোভাবে কোথাও সহযোগিতা করতে বলে আমরা শুধু সেখানেই সাহায্য করতে পারি। আপনি যে সমস্যার কথাগুলো বললেন- এই প্রতিটি ব্যাপারে জাতীয় পার্টির বক্তব্য আছে সংসদে এবং সংসদের বাইরে। সব ব্যাপারে আমাদের সুপারিশ জানিয়েছি। কিছু কিছু সুপারিশ উনারা শোনার চেষ্টা করেছেন কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই শোনেননি। কিন্তু কোন বিষয়ে উনাদের বাধ্য করার অবস্থা কোনো সময়ই ছিল না এখনো নেই। কোনো বিরোধী দলই পারেননি আমরাও সেটা পারবো না। বাধ্য করার কোনো সিস্টেম আমাদের সংবিধানেও নেই।মানবজমিন: আপনি প্রায়ই বলতেন জাতীয় পার্টি গৃহপালিত দলের ভূমিকা পালন করছে। দলের দায়িত্ব নেয়ার পর আপনার এই উপলব্ধির কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে? জি এম কাদের: না, এখন আর জাতীয় পার্টিকে আমার মনে হয় না যে কেউ গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে মনে করে। এখন আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। একটা সময় ছিল যখন আমরা মন্ত্রী ছিলাম আবার একইসঙ্গে বিরোধী দল ছিলাম। সেই প্রেক্ষিতে এটা বলা যেত। তবে এখন আমরা সত্যিকার অর্থে বিরোধী দলের কাজ করছি। আর বিরোধী দল হিসেবে প্রতিটি বিষয়ে আমাদের জোরালো ভূমিকা আছে। মানবজমিন: মানবজমিনকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদজি এম কাদের: আপনাকে এবং মানবজমিনকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত