তাদের ম্যারাডোনা, আমাদের ম্যারাডোনা
ম্যারাডোনার চলে যাওয়ার খবরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম এমন কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এটা ঠিক যে, সেদিন ‘স্মৃতি নামের রেলগাড়ি’ চলতে শুরু করেছিল মনের মধ্যে। সাল ১৯৮৬। সেই কোন দূরে মেক্সিকোতে বিশ্বকাপ জমেছে। খেলা শুরু হয় আমাদের মাঝরাতে। কোনোটা শেষ হয় ফজরের আজান পেরিয়ে। সাদা-কালো টিভি। তা–ও সব বাসাতে নেই। রঙিন টিভি হাতে গোনা। পাশের বাসায় টিভি দেখতে যায় পড়শীরা। পুরো পাড়া খেলা দেখে এবাসা-ওবাসায়। রাত যত গভীর, পাড়া তত গমগম। ‘কারেন্ট’ চলে যাবে? অসুবিধা কি? ব্যাটারি ভাড়া করে এনে রাখা আছে।
স্টেডিয়ামে দেশের নামে, প্লেয়ারের নামে জয়ধবনি ওঠে। আমরা কেঁপে কেঁপে উঠি। পছন্দের টিম বা প্লেয়ার গোল মিস করলে মেক্সিকোর স্টেডিয়ামের হাহুতাশের সঙ্গে, আমাদের পৌর শহরের ‘ধুৎ’ মিশে যায়। হাফ টাইমে সবাই সামনের রাস্তায়। একটু হাত-পা ছড়িয়ে নাও হে! রাত তিনটায় গরম চায়ের কাপ, টোস্ট–বিস্কুট। দিনেরবেলা স্কুলে যাও, কলেজ যাও, দোকানে কি অফিসে—বিশ্বকাপ আর বিশ্বকাপ। সেই একটা মাস! কী বাহারি! স্পষ্ট দেখতে পাই।
সেবার কটা দল খেলেছিল? গুগুল খুলে দেখি দুই ডজন। ব্রাজিল তো বটেই, সব বড় দলে একাধিক তারকা। তবু একজনকে লাগে কেন অন্য রকম? ছোট্টখাট্টো। গাট্টাগোট্টা। বাঁ পা-খানা জাদু জানে নাকি! আর অমন ছোটে কেমন করে? বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বেচারা বানিয়ে দেয় কী রকম! আমাদের মফস্বলি চোখে ঘোর কাটে না। গোল করায়, গোল করে। সে তো অনেকে করে। কিন্তু এরটা দেখে এত তৃপ্তি লাগে। কোনো বিশেষজ্ঞ হাতের কাছে থাকলে হয়তো বিলাতি টার্ম ব্যবহার করে একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতেন। বেঁচে গিয়েছিলাম, কেউ তেমন ছিলেন না।