কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ঢাকায় বাস রুট রেশনালাইজেশন দৃশ্যমান হবে আগামী বছর

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

ঢাকা যানজটের শহর। বছরের পর বছর বেড়েই চলেছে যানজট আর গণপরিবহন নিয়ে ভোগান্তি। সড়কে বেড়েছে বিশৃঙ্খলা। জনজীবনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। নানা সময় একাধিক সংস্থা বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও গণপরিবহনের নৈরাজ্য কমেনি। এবার যানজট কমাতে উদ্যোগী হয়েছেন বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখে ১০টি টার্মিনাল নির্মাণ করার প্রস্তাব করেছে এ কমিটি। যার ফলে আন্তঃজেলা বাসগুলো রাজধানীতে ঢুকতে পারবে না। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শহরে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী এই প্রধান তিনটি টার্মিনালে বর্তমানে দেড় হাজার বাসের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। অথচ এসব স্থানে বাস রয়েছে প্রায় ১০ হাজারের অধিক। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের ওপর পার্কিং করে রাখা হয় কয়েক হাজার বাস। যার ফলে সরু হয়ে যাচ্ছে যানবাহন চলাচলের সড়ক। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে গাজীপুর (১১ দশমিক ৭০ একর), নবীনগর-চন্দ্রা রোডের বাইপাইল (৪০ দশমিক ৪০ একর), কাঁচপুর উত্তর (১৫ দশমিক ৪৬ একর), কাঁচপুর দক্ষিণ (২৭ দশমিক ৭১ একর), কেরানীগঞ্জের বাঘৈর (৩৩ দশমিক ৬৩ একর), সাভারের হেমায়েতপুর (৩৬ দশমিক ৫০ একর), বিরুলিয়া (১৪ দশমিক ৫৩ একর), কাঞ্চন এলাকা (২৪ দশমিক ২৪ একর), আটিবাজারের ভাওয়াল (২৫ দশমিক ৭৮ একর) এবং ভুলতা (২৪ দশমিক ২২ একর)  এলাকায় টার্মিনাল করার প্রস্তাব করেছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। এসব স্থানে টার্মিনাল নির্মাণ হলে আন্তঃজেলার বাসগুলো রাজধানীর মধ্যে ঢুকতে পারবে না। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গণপরিবহনগুলো টার্মিনালেই যাত্রীদেরকে নামিয়ে দেবে। যাত্রীরা সেখানে থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করবে নগরীর ভিতরে চলমান গাড়িতে করে। এদিকে রাজধানীর বাসগুলো ৬ কোম্পানির আওতায় ২২টি রুটে ভাগ করে চলবে। এতে নগরের গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আসবে, কমবে যানজট। এদিকে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির প্রস্তাবনাটি বাস্তবায়নের আগে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখতে হবে। এ প্রকল্পে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পর যাতে গণপরিবহনগুলো নিয়ম-নীতি মেনে চলে, তার জন্য সুনির্দিষ্ট তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। যাত্রীরা যাতে ভোগান্তি না পোহায়, সে লক্ষ্যে সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।জানা যায়, ডিএনসিসির তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজধানীর যানজট কমাতে উদ্যোগী হন। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মাঠে নামেন। একাধিক সভা করেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার মৃত্যুতে এ উদ্যোগ থেমে যায়। পরে রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো ও যানজট নিরসনে ২০১৮ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর  প্রেসিডেন্টের আদেশে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমদ খান ১০ সদস্যের একটি কমিটি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে। কমিটিতে রাখা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তখনকার প্যানেল মেয়র, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহ উদ্দিন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালকে। তখন কমিটির কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তনের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মাধ্যমে বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে। বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তনের রোডম্যাপসহ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা ও এসব বিষয়ে জড়িত অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং কমিটির কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে নিয়মিত অবহিত করতে হবে। পরে নিয়োগ দেয়া হয় পরামর্শকও। তবে গতি ফিরেনি তাতে। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলেছে নানা সমীক্ষা। এই সময় কমিটির সভা হয় ১২টি। বর্তমানে ওই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। গত ১০ই নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে বসে ১৩তম সভা। জমা দেয়া হয় সমীক্ষার প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন ১০টি বাস টার্মিনালের। এসব টার্মিনাল নির্মাণ হলে দূরপাল্লার গণপরিবহনের কারণে সৃষ্ট যানজট থেকে মুক্তি পাবে রাজধানীবাসী। এ ব্যাপারে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাইরে ১০টি টার্মিনালের প্রস্তাব করেছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। তবে এখনো জায়গা পূর্ণাঙ্গভাবে ঠিক হয়নি। এসব স্থানে টার্মিনাল নির্মাণ হলে শহরের যানজট কমে আসবে। আগামী বছরের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এখন সরকারের ওপর সবকিছু নির্ধারণ করছে। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহ উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, স্বাধীনতার পর গণপরিবহনের উপর তেমন একটা নজর দেয়া হয়নি। টার্মিনাল নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার ফলে ধীরে ধীরে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরকার বর্তমানে আন্তরিক। আমরা রাজধানীর যানজট কমাতে ১০টি টার্মিনাল করার প্রস্তাব করেছি। আমরা চাচ্ছি সরকারি জায়গা। সেখানে এসব টার্মিনাল নির্মাণ হবে। এতে দূরপাল্লার কোনো বাস রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে না। আগামী সভায় (৮ই ডিসেম্বর) এসব কিছু নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। আর আগামী বছরে নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে। তার আগে একটা বাস্তব ভিত্তিক পরিসংখ্যান তৈরি করা হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত