কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ঈদের সেমাই খেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি কোভিড পজেটিভ

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

এটা শুধু একদল করোনাজয়ীর গল্প নয়। করোনায় তাদের জীবন কীভাবে বদলে গেছে সে গল্প। দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে লড়েছেন তারা। করোনা থেকে সেরে উঠলেও এখনো অনেকে বয়ে বেড়াচ্ছেন তার ভয়ঙ্কর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। করোনার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ প্রথম সারিতে কাজ করা ব্যক্তিরা। তাদেরই একজন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সম্প্রতি আনু মুহাম্মদ এবং তার স্ত্রী শিল্পী বড়ুয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আনু মুহাম্মদ বলেন, যখন থেকে আমার স্ত্রীর জ্বর আসে তখন থেকেই একটি মানসিক স্ট্রাগলের মধ্যে ছিলাম। করোনা পজেটিভ কি না? হলে কি হবে ইত্যাদি। তখন একদিকে যেমন ভয় কাজ করছিল আবার ভয়কে দমন করে সেটাকে মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদিতে ছিলাম। তারপরও আমরা ধারণা করেছিলাম কোভিড পজেটিভ হবে। মানসিক প্রস্তুতি নিতে হচ্ছিল ধীরে ধীরে। যখন রিপোর্ট হাতে পেলাম ওটা একটি বড় ধরনের ধাক্কা ছিল। প্রথমে রিপোর্ট পাওয়ার পর আমার স্ত্রীকে কিছু জানাইনি। এরপর কয়েক ঘণ্টা মানসিকভাবে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করে শক্তি অর্জন করার চেষ্টা করি কীভাবে এটাকে মোকাবিলা করা যায়। মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে তাকে জানাই। এদিকে ঈদের দিন সকালে বাসা থেকে সেমাই খেয়ে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি আমার করোনা পজেটিভ। সুস্থ হওয়ার পরেও মনে হয়েছে একটি বড় পরিস্থিতি বা ঝুঁকি পার হয়ে এসেছি। এখন দেশে অকাল মৃত্যু নিয়ে এতো পথ আছে যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর চেয়ে সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হচ্ছে শ্বাসকষ্ট কিংবা মনোকষ্ট। এটা সবচেয়ে খারাপ। এই ঝুঁকি পার হওয়াটা বিরাট একটি স্বস্তি।     এই অধ্যাপক বলেন, গত ১৮ই জুলাই প্রেস ক্লাবে আমাদের জাতীয় কমিটির একটি সমাবেশ ছিল। সেখানে আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনেই অংশ নেই। সমাবেশ শেষে মিছিল চলাকালীন সময়ে বৃষ্টি হয়। এ সময় মাস্ক পরলেও সামাজিক দূরত্ব ওভাবে রাখা যায়নি। রিকশায় যাওয়া আসা, সমাবেশ, মানুষজনের ভিড়, বৃষ্টি সব মিলিয়ে কিছু একটা ঘটতে পারে। এটা একটি উৎস হতে পারে। সেখান থেকে আসার পর ২১শে জুলাই রাতে আমার স্ত্রী শিল্পী বড়ুয়ার জ্বর আসে। পরদিন থেকে আমরা আইসোলেশনে চলে যাই। এ সময় তার জ্বর ছিল ১০৪ ডিগ্রি। তখন আমার একটু জ্বর জ্বর ভাব মনে হলেও পরবর্তীতে সেটা চলে যেতো। এমনিতে অন্যান্য অসুবিধা ছিলনা। জ্বর না কমায় চিকিৎসকের পরামর্শে বাসা থেকে আমাদের নমুনা পরীক্ষা করে নিয়ে যায়। এরমধ্যে রক্ত পরীক্ষায় কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ ধরা পড়েছে। পরবর্তীতে ২৬শে জুলাই আইসিডিডিআরবি,তে টেস্ট করালে স্ত্রীর করোনা পজেটিভ আসে। তার রিপোর্ট হাতে পেলে উদ্বেগের তৈরি হলো। এবং এটা কি হবে না হবে, কতোদূর যাবে সেটা একটু সামলাতে সময় লেগেছে। তারপর আমরা দেখলাম যে দুশ্চিন্তা না করে চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে আমার স্ত্রীও ছিলেন খুবই শক্ত মনের মানুষ। অসুস্থতার মধ্যে তিনি মানসিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। পরদিন পরিস্থিতি আরো যখন খারাপ হতে থাকে তখন চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিল্পীকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে যথেষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গেলেও ২৯শে জুলাই আমার জ্বর আসে। খুব বেশি না। ৩০শে জুলাই রাতে যখন দেখি জ্বর নামার কোনো ব্যবস্থাই হচ্ছেনা তখন হাসপাতালে করোনার টেস্ট করতে নমুনা দেই। ৩১ তারিখ মুগদা হাসপাতালে আমার স্ত্রীকে ভর্তি করি। ১লা আগস্ট শনিবার ঈদের দিন আমার করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে পজেটিভ। তিনি বলেন, তখন আমিও মুগদা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ১১ই আগস্ট পর্যন্ত ছিলাম। ওইদিন টেস্টে করোনা নেগেটিভ আসলে আমরা বাসায় চলে আসি। পুরোটা সময় হাসপাতালেই ছিলাম। এই পুরোটা সময় হাসপাতালের এবং বাহিরের পরিচিত চিকিৎসকরা ছিলেন। এ ছাড়া হাসপাতালের বাহিরের একটি এজেন্সি থেকে নার্সের সেবা নেই। আমরা একদম আইসোলেটেড হইনি। কারণ আমাদের কোনো কোনো বন্ধু যারা তরুণ তাদের নিষেধ করা সত্ত্বেও খাওয়া-দাওয়াসহ যাবতীয় সার্ভিস দিয়েছেন। ফলে সামাজিকভাবে আমরা একটি সমর্থন পাওয়ার কারণে মানসিকভাবে শক্ত ছিলাম। আর আমরা নিজেরা যেহেতু এসব বিষয় আগে থেকে দেখে আসছি। অনলাইনেও আমরা বিভিন্নভাবে স্টাডি করেছি। সুতারং এক্ষেত্রে কি ধরনের ঝামেলা হতে পারে, করণীয় যে সমস্ত ব্যবস্থা, শ্বাসকষ্ট যাতে না হয় এজন্য কি করা উচিৎ ইত্যাদি বিষয়ে আগের থেকেই কিছু কিছু পড়েছিলাম। সেগুলো আমাদের সাহায্য করেছে। খাদ্য তালিকায় যেগুলো ছিল সেগুলো বন্ধু তালিকায় থাকা এবং আত্মীয়-স্বজনরা সরবরাহ করেছে। ১১ই আগস্ট বাসায় আসার পরে আমাদের কিছু ওষুধ নিয়মিত সেবন করতে হয়েছে। এখন মোটামুটি ভালোই আছি। কিন্তু করোনা পরবর্তী কিছু সমস্যা সেগুলো এখনো কিছু কিছু আছে। এর মধ্যে কফ হচ্ছে বেশি, চুল পড়ার প্রবণতা, হাত-পায়ে ব্যথা, অবসাদ, কাজের গতিতে সমস্যা ইত্যাদি সমস্যাগুলো হচ্ছে। চিকিৎসক জানিয়েছে এটা করোনার প্রভাবে হচ্ছে। এ জন্য খুব শক্তিশালী ভিটামিন ডি ওষুধ খেতে হবে। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এখন মানুষজন করোনার সামগ্রিক বিষয়ে সচেতন হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি এ সময় সবার জন্য তিনটি কাজ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা। করোনা থেকে বাঁচতে ঘরে নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থাকলে করোনা ছাড়াও অন্যান্য অসুস্থতার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর কিভাবে সময় কেটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর জ্বর এতোটাই বেশি ছিল যে তার টেলিভিশন দেখা বা বই পড়ে সময় কাটানোর মতো অবস্থা ছিলনা। তবে মাঝে মধ্যে ভাই-বোনের সঙ্গে কমবেশি কথা হতো। এছাড়া আমার বই পড়ে, মোবাইল ফোনে কথা বলে সময় কেটেছে। এ সময় আমরা নিজেরা কখনো নিঃসঙ্গ বা বিচ্ছিন্নবোধ করিনি। এটা আমাদেরকে অনেক সাহস এবং শক্তি জুগিয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত