কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ভ্যাকসিনে ধনী গরিব বৈষম্য

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

করোনা মহামারি থেকে মুক্তি পেতে ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় এখন গোটা বিশ্ব। আর এই ভ্যাকসিন পাওয়ার দোরগোড়ায় উন্নত দেশগুলো। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ডিসেম্বরে তাদের নাগরিকদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করতে যাচ্ছে। সেখানে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলো কবে নাগাদ ভ্যাকসিন পাবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। বাংলাদেশে কবে টিকা আসবে, কবে নাগাদ দেশের মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার সুযোগ ঘটবে তাও পরিষ্কার নয়। উন্নত দেশগুলো হাজার হাজার কোটি টাকার ভ্যাকসিন বুকিং দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশও ভ্যাকসিনের জন্য  প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে রেখেছে। দেশের ১৭ কোটি মানুষ কীভাবে ভ্যাকসিন পাবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেও বিষয়টি খোলাসা হয়নি। গ্যাভির মাধ্যমে প্রায় ৭ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আসবে আরো ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন।আগে থেকেই বলা হচ্ছিল ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য তৈরি হলে বিশ্বের জন্য তা মঙ্গল হবে না। বর্তমানে ভ্যাকসিন দৌড় পরিস্থিতিতে সেটাই প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর করোনার টিকা প্রাপ্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও। একইসঙ্গে বিশ্বের ধনী দেশগুলোকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। দরিদ্র দেশগুলোর ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রগতি সামান্য। সম্প্রতি জি-২০ শীর্ষক সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে বিশ্ব নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, তারা সকলেই করোনার টিকা সুষ্ঠু বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দরিদ্র দেশগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। সেদিক থেকে তাদের জন্য টিকা কেনা সহজ নয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে বিশ্বের ধনী দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সে প্রক্রিয়ায় এখন ধীরগতি খেয়াল করা যাচ্ছে। তিনি জি-২০ চুক্তিতে স্বাক্ষর করা দেশগুলোকে কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদন, সুষ্ঠু বিতরণ, ভাইরাসের চিকিৎসা এবং পরীক্ষা করার বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বিশ্বনেতা এবং ধনী দেশগুলোকে আহ্বান জানান।৭ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ: বিশ্বব্যাপী গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ৬৮ মিলিয়ন ডোজ (৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ) কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। প্রতিজনে ২ ডোজ করে এই ভ্যাকসিন পাবেন। কমপক্ষে ২০ শতাংশ হিসাবে ৩৪ মিলিয়ন লোককে (৩ কোটি ৪০ লাখ) এই টিকা দেয়া হবে। এমনটাই আশা প্রকাশ করেছেন, সমপ্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক। প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য ব্যয় হবে ১ দশমিক ৬ থেকে ২ ডলার। এই সুবিধায় আসা ভ্যাকসিন ছাড়াও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে। গত ৫ই নভেম্বর সরকার ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। সমঝোতা স্মারক মতে, দেড় কোটি মানুষের জন্য এই ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে সরবরাহ করা হবে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘কোভিড-১৯ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্যান্য হালনাগাদ তথ্য অবহিত করণ’ শীর্ষক সভায় ডা. শামসুল হক আরো বলেন, যারা আগে জাতীয় ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা জমা দেবে তারাই আগে ভ্যাকসিন পাবে। গ্যাভি যখন থেকে পরিকল্পনা জমা নেয়া শুরু করবে, আশা করছি আমরা প্রথমদিনই আমাদের পরিকল্পনা জমা দিতে পারবো। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে গ্যাভির ভ্যাকসিনের প্রথম চালান বাংলাদেশে আসবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আসবে ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিনের জন্য প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে  অর্থ মন্ত্রণালয় ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সরকারের প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণে ব্যয় হবে ১ দশমিক ২৫ ডলার।গত ৯ই জুলাই বাংলাদেশ কোভ্যাক্সে আবেদন করে এবং গ্যাভি সেটি গ্রহণ করে গত ১৪ই জুলাই। বাংলাদেশ গ্যাভির কাছ থেকে ৬৮ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন পাবে ( দুই  ডোজ করে) ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য। ভ্যাকসিন আসার আগে জরুরি হচ্ছে ন্যাশনাল ভ্যাকসিন ডেপয়মেন্ট প্যান নিয়ে কাজ। আর যেটা একেবারেই শেষ পর্যায়ে বলে জানান ডা. শামসুল হক। এ ছাড়াও গ্যাভি ভ্যাকসিন ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার সরাসরি ভ্যাকসিন কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে এই ভ্যাকসিন অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রি কোয়ালিফায়েড হতে হবে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকতে হবে। জনগণের সেফটির (নিরাপত্তা) কথা চিন্তা করে সবকিছু করা হবে- যদিও চুক্তি করা হয়েছে। এ দু’টি ভ্যাকসিনের সোর্স ছাড়াও সিনোভ্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে, রাশিয়ার স্পুৎনিক এগিয়ে আসছে, তাদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ রয়েছে বললেন ডা. শামসুল হক। তিনি বলেন, জেএসকে গ্রুপের সানোফি এবং ফাইজারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং যদি সেরকম ‘আর্জেন্সি’ হয় তাহলে কীভাবে তাদের ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে সে নিয়েও কথা হচ্ছে। তবে কোন কোন ভ্যাকসিন আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খুবই ‘কোয়েশ্চেনেবল’ এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই এতো ‘লো টেম্পারেচার’-এর ব্যবস্থা না থাকায় তারাও এ নিয়ে চিন্তিত। এসব ভ্যাকসিন বিষয়ে কাজ করতে কোভিড ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করেছে সরকার। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অব ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট কাজ করছে। রয়েছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রিপায়ের্ডনেস অ্যান্ড ডেপয়মেন্ট কোর কমিটি। ডা. শামসুল হক বলেন, সারা পৃথিবীতেই এখন ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ হচ্ছে। কিন্তু ভ্যাকসিন যেটাই আসুক আমরা যেন সেটা পেতে পারি সে লক্ষ্যেই কাজ হচ্ছে। করোনার এন্টিজেন টেস্ট ও কিট প্রসঙ্গ: করোনার টেস্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ১১৭টি পরীক্ষাগারে এ মুহূর্তে ৫০ হাজার কীট পরীক্ষা করার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু মানুষ পরীক্ষা করানোর জন্য সেন্টারে আসছেন না। মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনার এন্টিজেন টেস্ট প্রসঙ্গে বলেন, করোনার এন্টিজেন টেস্টের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে এই পরীক্ষা শুরু করা হবে। প্রাথমিকভাবে জেলা পর্যায়ে যেখানে আরটি-পিসিআর টেস্ট নেই এমন ১০টি জেলায় এন্টিজেন টেস্ট করা হবে। টেস্ট শুরুর আগে ওইসব জেলার সংক্রমণ পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেয়া হবে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক আবু হেনা মোর্শেদ জামান বলেন, করোনা পরীক্ষার কিট সংকট নেই। ১ লাখ ৮২ হাজারের বেশি কিট হাতে আছে। আজ-কালের মধ্যে আরো ৫৫ হাজার কিট চলে আসবে। এ ছাড়া আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দু’টি চালানে আরো সাড়ে ৪ লাখ কিট চলে আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৬শ’ পিপিই বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়েছে। যাদের কারণে এগুলো নষ্ট হয়েছে দায়ী দু’জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিভাগী ব্যবস্থার জন্য অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ে টিআইবি’র প্রতিবেদন সম্পর্কে অধিদপ্তরের এমআইএস’র পরিচালক ডা. মো হাবিবুর রহমান অনুষ্ঠানে বলেন, সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে নেতিবাচক বিষয়গুলো নিয়েই বেশি মতামত দিয়েছে। ভালো কাজের কোনো উল্লেখ নেই। এতে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। যত কাজ করেছি সংক্রমণ আইন, দুর্যোগ আইন এবং ক্রয় সংক্রান্ত আইন অনুসরণ করেই সবকিছু করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সিডিসির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী, পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া, ডা. মো. মারুফুর রহমান অপু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে