কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আইনের সার্জনের মহিমাময় মৃত্যু

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

জরুরি জমানা। বেশিদিন হয়নি আইন রিপোর্টিং শুরু করেছি। মানুষটাকে দেখতাম দূর থেকে। শুনেছি বেশ মেজাজি। তখনো সেভাবে মিডিয়ায় কথা বলে অভ্যস্ত নন। খ্যাতিমান কয়েকজন প্রবীণ আইনজীবীকে পরে অনেক বছর দেখেছি। কোর্ট রুমে তারা একেবারেই আলাদা। শুনানিতে কথা বলেন প্রাণখুলে। কারো কারো কথা এতো জীবন্ত। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে হয়। মামলার রায় যেদিকেই যাক না কেন। কিন্তু কোর্ট রুম থেকে বের হওয়ার পর তারা আর শুনানির সব কথা বলেন না। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস যা বলার শুনানিতেই বলেছেন। মিডিয়ায় সব বলা উচিত নয়।যাক সেই আলোচনা ভিন্ন। কিন্তু জরুরি অবস্থায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক কেবল আদালতেই নন, সরব হলেন মিডিয়াতেও। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে কথা বাড়তে থাকলো। সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার, পুরানা পল্টনের বাসায় হানা দিয়েছি বারবার। মোবাইলেও কথা হয়েছে অনেক। বেশির ভাগ সময়ই স্যার ছিলেন দিলখোলা। মতামত দিয়েছেন অত্যন্ত সাহসীকতার সঙ্গে। জরুরি সরকারের সময়ে যা ছিল একেবারেই বিরল। হেভিওয়েট সব রাজনীতিবিদ একে একে গ্রেপ্তার হতে থাকলেন। আইনি লড়াইয়েও তারা অসহায়। সিনিয়র আইনজীবীরা পাশে নেই। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে সবারই গন্তব্য পল্টনে। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের চেম্বারে। কাউকেই ফেরাননি তিনি। অকুতোভয়, নিষ্কম্প। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে সামিল হলেন তিনি। লড়লেন সবার সামনে থেকে। সেকালেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষেও আইনি লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন তিনি।কীভাবে সম্ভব হয়েছিল অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেয়া? কী চাইতেন তিনি? রফিক-উল হক বারবারই বলেছেন, তার আয়কর নথিতে কোনো ঘাপলা নেই। সব ছিল একেবারে পরিষ্কার। আইনের শাসন ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া। এজন্য এইতো সেদিন পর্যন্ত লড়ে গেছেন তিনি। একেবারেই বিরামহীন। কখনো এজন্য সমালোচনারও শিকার হয়েছেন। কিন্তু নিজ অবস্থানে ছিলেন অনড়, অবিচল। বলতেন, যা হয় আইন অনুযায়ী হোক। জরুরি অবস্থার সময় তার সাফ কথা ছিল, নতুন আইনে পুরনো অপরাধের বিচার বেআইনি। এটা সংবিধানের বরখেলাপ। আইনের শাসন থেকে মুহূর্তের বিচ্যুতিও তিনি মেনে নিতে পারতেন না। রুল অব ল’ এর কথা জীবনে যে কতবার বলেছেন হিসাব করা দায়। কাজ করেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সব প্রধান চরিত্রের সঙ্গে। স্নেহ পেয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। সে সময় বেশকিছু আইনের সংস্কারে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কাজ করেছেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গেও। স্বল্পকালীন এটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের সময়েও ইতিহাসে দাগ কেটে গেছেন রফিক-উল হক। বেতন না নেয়া তার সবচেয়ে বড় কীর্তি ছিল না। সে সময়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ডিটেনশনের বিরুদ্ধে হেবিয়াস কর্পাস মামলা হতো হাইকোর্টে। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বহুক্ষেত্রে নিজ থেকেই পরামর্শ দিতেন আসামিকে ছেড়ে দেয়ার। আদালতে সরকারি স্বার্থ নয় আইনকে প্রাধান্য দিতেন তিনি। অসীম সাহসী, তুখোড় মেধাবী এই আইনজীবী শুধু আদালত পাড়াতেই নিজের কীর্তিকে আবদ্ধ করে রাখেননি। এখানে তিনি আর দশটা মানুষ থেকে আলাদা। এটা সত্য, বাংলাদেশের প্রায় সব ভিআইপিরই কখনো না কখনো তিনি আইনজীবী ছিলেন। টাকা উপার্জন করেছেন দু’হাতে। কিন্তু প্রায় সব অর্থই ব্যয় করে দিয়েছেন মানবতার সেবায়। একবার এই লেখককে বলেছিলেন, বাড়িটা ছাড়া ছেলের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারবো না। বস্তুত রেখে যানওনি। বাংলাদেশের বহু বড় বড় হাসপাতালের জন্ম আর বেড়ে ওঠার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তার নাম। অকাতরে দান করেছেন এসব হাসপাতালে।পরিণত বয়সেই মৃত্য হয়েছে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের। তবুও কিছু কিছু মৃত্যুতো আসলেই পাহাড়ের মতো ভারী। প্রবীণ এই আইনবিদের মৃত্যুতে শোকের মিছিলে শামিল হয়েছেন দল-মত নির্বিশেষে সবাই। শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। বাংলাদেশে ইদানীং মৃত্যুর পরপরই বড় বড় মানুষদের এক ধরনের ফেসবুক ট্রায়াল হয়ে যায়। আইনের  সার্জন ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুর পরও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে প্রায় সব মানুষই তার জন্য শোক প্রকাশ করছেন। কামনা করছেন মাগফিরাত। এ যেন মহিমাময় মৃত্যু। সত্যিকারের এক কিংবদন্তির জন্য প্রার্থনা করছি আমরা সবাই। পরম করুণাময়ের করুণা যেন বর্ষিত হয় তার প্রতি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত