কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলন, রোহিঙ্গাদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য এবং মিয়ানমারের বাইরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলন হয়েছে। এতে বিভিন্ন দেশ এবং দাতা সংস্থা তাদের নিজ নিজ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে ভার্চ্যুয়াল ওই সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে বড় ভিকটিম বাংলাদেশ এবং এ সংকটের উৎপত্তি ও সমাধান যেখানে নিহিত সেই মিয়ানমারও এতে অংশ নিয়েছিল। সম্মেলনে ঢাকার তরফে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপক চেষ্টা সত্ত্বেও ৩ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণে রোহিঙ্গারাও হতাশ। তারা তাদের জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ওই অনিশ্চয়তা এবং হতাশা থেকে কালক্রমে তারা মানব পাচার, উগ্রবাদ, মাদক চোরাচালানসহ অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। সম্মেলনে সদ্য ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই-বিগান সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং অঙ্গীকার তুলে ধরেন। দীর্ঘ বক্তৃতায় তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ সংকটের সৃষ্টি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও সেখানেই নিহিত রয়েছে। সুতরাং মিয়ানমারকে এতে কার্যকরভাবে এগিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিগান বলেন, গোটা এশিয়া অঞ্চলের জন্য চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে জাতিসংঘের স্থায়ী ৫ সদস্যকে এক এবং অভিন্ন অবস্থান নিতে হবে। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ২০০ মিলিয়ন ডলারের নয়া তহবিল প্রদানের ঘোষণা দেন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিগান।৫২৩ কোটি টাকার নয়া সহায়তার ঘোষণা বৃটেনের: এদিকে দাতা সম্মেলন শুরুর আগেই বৃটেনের তরফে ৫২৩ কোটি টাকার সহায়তার নতুন ঘোষণা আসে। বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ মিনিস্টার ডমিনিক রাব ওই ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি চরম ঝুঁঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অবর্ণনীয় দুর্দশা থেকে এক মুহূর্তের জন্যও চোখের পলক না সরাতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিতে আয়োজিত দাতা সংস্থাগুলোর ভার্চ্যুয়াল আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বৃটিশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন বৃটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদ উইম্বলডন। তিনিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবের বক্তব্যের পুনরুল্লেখ করে রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টি রাখতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আর্জি জানান। একই সঙ্গে  বলেন, বৈশ্বিক দায় বিবেচনায় বৃটিশ সরকার রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় সর্বতোভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে। বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেয়া ৮ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে সুরক্ষা এবং করোনাভাইরাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে বৃটেনের তরফে অতিরিক্ত ৪৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড (৫২৩ কোটি টাকা) সহায়তা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। ইইউ’র তহবিল এবং অন্যান্য: সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে ২০২০ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে ৯৬ মিলিয়ন ডলার তহবিল সরবরাহের ঘোষণা দেয়া হয়। ওই অর্থের একটি অংশ উন্নয়ন সহযোগিতা এবং সংঘাত প্রতিরোধ বা কনফ্লিক্ট প্রিভেনশন সাপোর্ট হিসাবেও ব্যয় হবে বলেও জানানো হয়েছে। ওদিকে দাতা সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয়ক মার্ক লোকক বলেন, দেশ ছেড়ে আসার তিন বছর পরেও রোহিঙ্গারা এখন বিশ্বের সব থেকে বড় রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠী। দাতা সম্মেলন রোহিঙ্গা এবং রোহিঙ্গাদেরকে যারা আশ্রয় দিয়েছে তাদের কাছে এই বার্তা পাঠিয়েছে যে, বিশ্ব তাদের কথা ভুলে যায়নি। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের সাহায্যে জাতিসংঘ এবং তার সহযোগীরা অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি এই সকল দাতাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি ধন্যবাদ দিতে চাই বাংলাদেশের সরকারকে। তবে আমাদের ভুলে যাওয়া চলবে না মিয়ানমারের মধ্যেও ৬ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। যাদের মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা দেখা দিয়েছে। বক্তব্যের শেষে তিনি বাংলাদেশ সরকার এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, স্বল্প সম্পদ নিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আয়োজকদের তরফে আগেই জানানো হয়, কক্সবাজারে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ৮ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো আনুমানিক ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক বাস্তুহারা রোহিঙ্গা প্রান্তিক জীবনযাপন করছে- যারা মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি, নির্ভরযোগ্য খাদ্য সরবরাহ, অর্থবহ কাজ ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯’র ফলে তাদের জীবনযাত্রা আরো খারাপ হয়েছে। সেবা গ্রহণের সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যৌন ও জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যের মতো জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকিও বেড়েছে উদ্বেগজনকহারে। দুনিয়ার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওই জনগোষ্ঠীর জীবনের প্রয়োজন বিবেচনায় অনুষ্ঠেয় দাতা সংস্থার ওই সম্মেলনে যে তহবিল পাওয়া যাবে তা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে, গোটা অঞ্চলে এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের আওতায় এই সংকট নিরসনে কমর্রত সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে প্রদান করা হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত