ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হাইকোর্টের অভিমত
নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, কোনো সরকারি বা বেসরকারি ফোন কোম্পানি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জব্দ বা চাহিদাপত্র ছাড়া কোনো কল লিস্ট বা বার্তা সংগ্রহ বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে, ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতেই তার কল লিস্ট বা বার্তা সংগ্রহ থামাতে হবে। একটি হত্যা মামলায় আইনি প্রশ্ন সুরাহা করতে গিয়ে হাইকোর্ট এ অভিমত দেন। বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস এবং বিচারপতি এএসএম আবদুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। সম্প্রতি রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। হাইকোর্টের অভিমতে বলা হয়েছে, নাগরিকদের মধ্যেকার ব্যক্তিগত অডিও/ভিডিও আলাপ আজকাল প্রায়ই ফাঁস করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন উদ্দেশে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের নথিপত্র এবং যে কোনো ধরনের যোগাযোগে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এটি চাইলেই কোনো স্বার্থে লঙ্ঘন করা যায় না। নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এবং ফোন কোমপানিগুলোরও বড় দায়িত্ব রয়েছে। তারা দেশের কোনো নাগরিক ও ব্যবহারকারীর তথ্য প্রদান করতে পারে না যদি না এটি সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন দ্বারা অনুমোদিত না হয়। তাই, কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তাকে যখন কোনো তদন্তের জন্য কোনো কল লিস্ট বা তথ্যের প্রয়োজন পড়বে তাকে অবশ্যই কোমপানির যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করতে হবে। অনুরোধপত্রে তাকে তথ্য চাওয়ার কারণ এবং এই তথ্য তার তদন্তের জন্য কেন জরুরি তা উল্লেখ করতে হবে। শুধুমাত্র এমন পর্যায়েই ফোন কোমপানিগুলো কল লিস্ট বা তথ্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রদান করতে পারবে। এই প্রক্রিয়ার বিষয়ে ব্যবহারকারীকেও জানাতে হবে। নইলে প্রদানকৃত নথি তার সত্যতা হারাবে এবং যেই কর্মকর্তা এই নথি প্রদান করবেন তিনিও তার বৈধতা হারাবেন। একইসঙ্গে তাকে একজন নাগরিকের সংবিধানে ঘোষিত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করা হবে। বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য অগ্রগতি হচ্ছে এবং সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার হচ্ছে। এজন্য এভিডেন্স অ্যাক্ট সংশোধনের পক্ষেও মত দিয়েছেন হাইকোর্ট।এই মামলার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মানবজমিনকে বলেন, এই রায়টি আইন অঙ্গনের যুগান্তকারী রায় হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা প্রত্যাশা করি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকার আদালতের এই রায় বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন।