কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মিজানুর গ্রেপ্তার, গ্যাং লিডার সাকিব কোথায়?

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

সাভারে নীলা রায় নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান, মা নাজমুন নাহার ও তার সহযোগী সেলিম পাহ্‌লোয়ানকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেয়া হয়। গতকাল ১২টার দিকে সাভার মডেল থানা চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার। পুলিশ সুপার বলেন, গত ২০শে সেপ্টেম্বর  রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে নীলা নামে ওই স্কুল শিক্ষার্থীকে তার ভাইয়ের কাছ থেকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বখাটে মিজান। পরে পৌরসভার দক্ষিণপাড়া এলাকায় নিয়ে নীলাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় মিজানুর। গুরুতর জখম অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরদিন সোমবার নিহতের বাবা নারায়ণ রায় সাভার মডেল থানায় বাদী হয়ে মিজানুর রহমান, তার বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন নাহারসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর গত ২২শে সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পলাতক মিজানুরের সহযোগী  সেলিম পাহ্‌লোয়ান নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করলে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর ২৫শে সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর থানার চারিগ্রাম এলাকা থেকে মিজানুরের বাবা ও মা’কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাদেরও সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হলে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পুলিশ সুপার জানান, সবশেষ গতকাল শুক্রবার রাতে নীলা হত্যায় প্রধান আসামি মিজানুরকে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া কর্নেল ব্রিকস এলাকার একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ বেশকিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। শনিবার দুপুরে তাকে দশদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকার কর্নেল ব্রিকস ফিল্ডের পাশে অবস্থিত পারভেজের বাড়ি থেকে ঘাতক মিজানুর ও তার গ্যাং লিডার সাকিব এবং জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছিলেন সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ একজনের কথা শিকার করায় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সংবাদ সম্মেলনে ঘাতক মিজানুরের কথা বলা হলেও কিশোর গ্যাং লিডার শাকিব ও জয়ের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় তাদেরকে আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘাতক মিজানুরের খুঁটির জোর ছিল শাকিব ও শাকিল নামের দুই সহোদর। তাদের বাবা সিরাজুল ইসলাম শিরু পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং চাচা সাইদুল ইসলাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তাদের দলের কিশোর গ্যাং সদস্যরা ড্যাম কেয়ার স্টাইলে চলতো। স্থানীয় একটি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সে। এর আগে একবার টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি মিজান। কলেজটির প্রিন্সিপাল কামরুজ্জামান বলেন, এক বছর আগে শিক্ষকদের সঙ্গে ঊচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য তাকে কলেজ থেকে বের করে দেয়া হয়। তার আচরণ ছিল অস্বাভাবিক। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে রিহ্যাবে ভর্তি করে চিকিৎসা করান। ভুক্তভোগী স্থানীয়রা জানান, ব্যাংক কলোনি মহল্লার মাদকের স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করে পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শিরুর দুই ছেলে শাকিব ও শাকিল এসব স্পটে ইয়াবা, হেরোইনসহ সব ধরনের মাদক ছিল অহরহ। মিজানুর ও তার বন্ধুরা গ্যাং তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন, মেয়েদের ইভটিজিং, নিরীহ মানুষকে ধরে এনে মারপিট, ব্যবসায়ীদের দোকান ভাঙচুরসহ নানা অপকর্ম করে আসছিল। তাদের ভয়ে স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা অন্য এলাকা দিয়ে ঘুরে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতো। এসব কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিত কিশোর গ্যাং লিডার শাকিল ও শাকিব নামে দুই সহোদর। তাদের দুই ভাইয়ের ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি এলাকার বাসিন্দারা। নীলাকে যে পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে হত্যা করেছে সেখানে প্রায় দুই বছর ধরে মাদক সেবনসহ ও নানা অপকর্ম করে আসছিল মিজানুর ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা। বাড়িটি মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমানের। তাদের আড্ডাসহ অপকর্মের স্থান পরিত্যক্ত ওই বাড়ি ও তার আশপাশে। প্রায় দুই বছর আগে মিজানুরের বাবা ওই বাড়ির ভাড়াটিয়াদের উঠিয়ে দেয়। এরপর থেকে মিজানুর ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা সেখানে আড্ডাসহ নানা অপকর্ম করতো। তাদের দলনেতা শাকিল ও শাকিবের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পেতো না। ২০১৭ সালে একই স্থানে একজন গানের শিক্ষককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে মামলায় আসামি করা হয়েছিল তাদের দলনেতা শাকিলকে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, মিজানুর গ্যাং এর দলনেতা শাকিল ও শাকিবের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তাদের ভয়ে ভাড়াটিয়ারা থাকতে চান না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয়। এ ভাবে চলতে থাকলে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না। এছাড়া মিজানুর ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা বিভিন্ন দোকান থেকে পণ্য কিনে টাকা দিত না। গত তিন মাস আগে ওই এলাকায় এক ব্যবসায়ীর দোকান ভাঙচুর ও তাকে মারধর করে তারা। তাদের ভয়ে জিম্মি ব্যবসায়ীরা। এসব বিষয়ে প্রতিবেশী বাড়ির মালিক পৌর মেয়র আব্দুল গণিকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অন্যদিকে খুনি মিজানের ফাঁসির দাবিতে সাভার নাগরিক কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান কিশোর গ্যাং লিডার শাকিবের বাবা সিরাজুল ইসলাম শিরুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে কলঙ্কমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সাভারে কোথায় কিশোর গ্যাং রয়েছে এবং তাদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ এমন কোনো ঘটনায় কেউ পুলিশে অভিযোগ করেনি এমনকি আমাকেও জানায়নি। কিশোর গ্যাং বলতে কোনো কিছু নাই বলেও জানান তিনি। তবে যদি কেউ সুনির্দিষ্টভাবে অভিযাগ করেন তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রসঙ্গত, গত ২০শে সেপ্টেম্বর রাতে নীলা রায়কে তুলে নিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মিজান। এ ঘটনায় ২১শে সেপ্টেম্বর নিহতের বাবা নারায়ণ রায় হত্যাকারী মিজানুর রহমান, তার বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন নাহার সিদ্দিকাসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত