কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

কুসুমে কুসুমে চরণ চিহ্ন

দৈনিক আজাদী প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫৭

.tdi_2_a57.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_a57.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});ষাটের দশক আইয়ুবের একনায়কত্ববাদী শাসনের যুগ। তখন শহর আধুনিক যুগে প্রবেশ করছে। গণপরিবহন এবং ব্যক্তিগত যানবাহন কিছু কিছু চলাচল করছে। আরও একটা জিনিস ঘটেছিলো সকলের অজান্তে। সেটি হলো একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি যার দেখা মিলেছিলো পঞ্চাশের দশকে, ষাটের দশকে এসে সেই শ্রেণীটির পরিপুষ্টি দেখা যাচ্ছিলো। চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলো এই শিক্ষিত মধ্যশ্রেণির বাঙালি। তখনই পশ্চিমাদের সঙ্গে বাঙালির বৈষম্যটা দৃষ্টিকটুভাবে ধরা পড়ে। এই সময় জহুর-আজিজের আওয়ামী লীগের মধ্যে এই নতুন শ্রেণীর একাংশ তারুণ্যের দীপ্তি ও তেজ নিয়ে ভিড় করে। তখন তরুণতর তিনজন নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করে নতুন শক্তি ও প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন। এরা হচ্ছেন জেলায় আবদুল্লাহ আল হারুন ও এম এ হান্নান এবং শহরে ডা. সৈয়দুর রহমান চৌধুরী। ডা. সৈয়দ ৬২ থেকে ৬৮ পর্যন্ত শহরময় চষে বেড়ান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য। তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সহ-সভাপতি হন। বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দেয়ার পর ৮ মে ’৬৬ সভাপতি জহুর আহমদ চৌধুরী গ্রেফতার হয়ে গেলে ডা. সৈয়দ হন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। এন জি মাহমুদ কামাল ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। তিনি অসুস্থতার জন্য ছুটি নিলে এম এ মান্নান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা ও পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ নেতা, কলামিস্ট ইদরিস আলম, যিনি নিজেকে এম এ মান্নানের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন, তিনি তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছেন- “মনে হয় ১১ মে দুপুরবেলা ২৩ নং রেস্ট হাউসে আয়োজিত সভায় নগর আওয়ামী লীগের একজন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ডা. সাহেব ও অন্যান্য নেতা একযোগে প্রস্তাব করেন যে এই দায়িত্ব এম এ মান্নানকে দেয়া উচিত। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ হলে আমি সভাস্থল থেকেই একটি বেবি ট্যাঙি নিয়ে জনাব এম এ মান্নানের দামপাড়াস্থ বাসায় গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসি এবং আমার প্রস্তাব ও ডা. সৈয়দুর রহমানের সমর্থনক্রমে মান্নান সাহেব এসে সোজাসুজি কোন আনুষ্ঠানিক যোগদান ছাড়াই নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দিয়ে তখন ভিমরুলের চাকে ঢিল মেরে দিয়েছেন, ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘুম হারাম করে ফেলেন আইয়ুব”। এদিকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে ভাল করে গুছিয়ে বসার আগেই ১৩ মে এম এ মান্নান গ্রেফতার হয়ে যান। সরকার তাঁকে চট্টগ্রাম জেলে রাখা নিরাপদ মনে না করে প্রথমে চট্টগ্রাম, পরে কুমিল্লা, সিলেট হয়ে সর্বশেষ বরিশাল জেলে তাঁকে অন্তরীণ করে রাখে। জেলে থাকাকালেই জনাব মান্নানের পিতৃবিয়োগ হয় আর একটানা সাড়ে তিন বছর জেলে থেকে ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় তিনি মুক্ত হন। কোন আওয়ামী লীগ নেতার এককালীন দীর্ঘকাল আটক থাকার এটাই একমাত্র ঘটনা। অতঃপর আওয়ামী লীগে মান্নান যুগ শুরু হলো। সেই যুগ পরবর্তী তিন দশক পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। জহুর আহমদ চৌধুরীর ছত্রছায়ায় এম এ মান্নান সংগঠন গোছাতে আরম্ভ করেন। ৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, তখন শহরের পুরো আওয়ামী লীগ সংগঠনের চাবিকাঠি এমএ মান্নানের হাতে চলে এসেছিলো। ৭ মার্চ রেসকোর্সের ভাষণে বঙ্গবন্ধু প্রত্যেক জেলায় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করার নির্দেশ দেয়ার পর চট্টগ্রামে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, এম এ মান্নানকে তাঁর সদস্য নিযুক্ত করা হয়। সংগ্রাম পরিষদের অন্য সদস্যরা ছিলেন, জহুর আহমদ চৌধুরী এম আর সিদ্দিকী, এম এ হান্নান ও অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। স্বাধীনতার পর জহুর আহমদ চৌধুরী মন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর এম এ মান্নানের ওপর চাপ আরো বেড়ে যায়। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম শহর ও জেলা আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁর উপর। ১৯৭৩ সালে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে সাংগঠনিক জেলা ভাগের পর উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম-৮ ডবলমুরিং আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আহবায়ক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭-২০০৬ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালে এমএ মান্নান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিল নির্বাচন পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৯৬ সালে জনাব মান্নান চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালী আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় স্থান লাভ করেন। তাঁকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৭৬-৭৮ সালে জিয়া সরকারের আমলে জনাব মান্নান কারাবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে সিটি আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুর আহমদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমএ মান্নান, সিরাজুল হক মিয়া, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নুরুল আলম চৌধুরী, সুলতান উল কবির চৌধুরী, ইদরিস আলমসহ শহরের বহু নেতা ভারতে যান। জহুর আহমদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রশাসন গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী এবং কুমিল্লারও কিছু সংসদ সদস্য এক বৈঠকে মিলিত হয়ে জহুর আহমদ চৌধুরীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে লিবারেশন কাউন্সিল ইস্টার্ন জোন নামে একটি সংস্থা গঠন করেন। পরে মুজিব নগর সরকার গঠিত হলে জহুর আহমদ চৌধুরীকে আরো প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পক্ষান্তরে এম এ মান্নান আওয়ামী লীগ নেতা এবং শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকলেও তিনি ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মুজিব বাহিনী (বিএলএফ) গঠনের কাজে জড়িয়ে পড়েন। মুজিব বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান এবং আবদুর রাজ্জাক ষাট দশকের ছাত্রনেতা। তাঁদের সঙ্গেই ছাত্র রাজনীতি করেছেন এমএ মান্নান। মুক্তিযুদ্ধে এমএ মান্নান ১নং সেক্টরের সেক্টর ইনচার্জ এবং ১নং সেক্টরের মুজিব বাহিনীর ইস্টার্ন জোনের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর আরো তিন বছর বেঁচে ছিলেন জহুর আহমদ চৌধুরী। মন্ত্রিত্ব নিয়েই তাঁকে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হতো। এমএ মান্নান ৭৩-এ এমপি নির্বাচিত হলেও তিনি মূলত দলই সামাল দিতেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের পর ৭৭-৭৮ সালে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংগঠিত করেন এমএ মান্নান। আশির দশকের মধ্যভাগে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে এমএ মান্নান সভাপতি ও মহিউদ্দিন চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ক্রমান্বয়ে এমএ মান্নানের নেতৃত্বের অংশিদার হয়ে উঠতে থাকেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। ৯৪ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী রাজনীতির ফোকাল পয়েন্ট হয়ে ওঠেন। তবুও সংগঠনের র‌্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইলে, তৃণমূলের নেতা কর্মীদের কাছে মান্নানই নেতা থেকে যান। মহিউদ্দিন তাঁরই শিষ্য, তাঁরই প্রযত্নে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মহিউদ্দিন যুগের অভিষেক ঘটে। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে আবদুল্লা আল হারুন, এমএ মান্নান, শহীদ মুরিদুল আলম, এসএম ইউসুফ, ইদরিস আলম-এরা একই গোত্রের নেতা। রাজনীতিতে কনটিনিউ করলে রউফ খালেদ, অধ্যক্ষ শায়েস্তা খান একই গোত্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতেন। এমএ মান্নান ক্ষণজন্মা রাজনীতিক। এমন নেতা গণ্ডায় গণ্ডায় জন্মান না। একদিন নয়, বছর নয়, এমন কি একটি যুগও নয়; কয়েক যুগ পর পর এমন একজন নেতার দেখা মেলে। সময় তাঁদের সৃষ্টি করে, তাঁরা যুগপুরুষ। কোন বিশেষ অঞ্চলে মানুষের অনেক বছরের তপস্যায় একজন এমএ মান্নানের জন্ম হয়। যখন কোন অঞ্চলে রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করে, তখন সেই শূন্যতা পূরণ করার জন্য এমএ মান্নানরা উদয় হন। ৭৪ সালে জহুর আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিলো। সেই শূন্যতার মধ্যে মান্নান নেতৃত্বের উত্থান। তবে মান্নান যে আসবেন, তার মহড়া কিন্তু ষাট দশকের শেষ ভাগেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো। এখন মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর নেতৃত্বের আর একটা শূন্যতা বিরাজ করছে। কে এই শূন্যতা পূরণ করবেন সেটা এখনো ভাবীকালের গর্ভে নিহিত। এমএ মান্নানের নেতৃত্বের একটা বৈশিষ্ট্য ছিলো, যার কথা এখনো বলা হয়নি। সেটা হলো তিনি আপাদমস্তক একজন ভদ্রলোক রাজনীতিবিদ ছিলেন। নমিত স্বভাবের এই বিনয়ী মানুষটিই আবার প্রয়োজনে ইস্পাতের কাঠিন্য নিয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে যেতে পারতেন। তিনি কটু কথা বলতেন না, গালিগালাজ করতেন না, খিস্তি-খেউর জানতেন না। আস্তে আস্তে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে কথা বলতেন। রেগে গেলেও তিনি উচ্চকণ্ঠ হতে পারতেন না। লেখক : সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, মুক্তিযোদ্ধা.tdi_3_7f6.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_7f6.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত