কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

কাজী হাকিম দাদ চৌধুরী : যাকে মনে পড়ে

দৈনিক আজাদী প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:৪৪

.tdi_2_237.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_237.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});১৯৮০ সালে কাজী হাকিম দাদ চৌধুরী চাচার সাথে আমার দেখা হয় তার জয়নগরের বাসাটি ভাড়া নিতে গিয়ে। বেশিক্ষণ কথা হয়নি। আন্তরিকতার ছোঁয়ায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। এক কথায় স্বল্প মূল্যে বাড়িটি ভাড়া দিয়েছিলেন। আমি তখন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল প্যাথোলজি বিভাগে চাকরি করি। কিছু দিন পর বাসায় ল্যাব স্থাপন করতে চাইলে এক বাক্যে রাজি হয়ে যান। তাঁর আন্তরিকতা আমাকে আরো মুগ্ধ করে। তখন বেশ রোগী হতো। উপরে উনি উনার ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকতেন। আমি ভাবতাম কবে না জানি রোগীর কারণে বিরক্ত হয়ে ঘর ছাড়তে বলেন। না তেমন কিছুই হলো না। উল্টো সময় পেলেই নীচে এসে রোগীদের ঠিক মতো সেবা দিতে পারছি কি না, কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না তা জানতে আসতেন। আমি নিশ্চিন্ত হলাম। প্রায়ই পরিবারসহ আমাদের ডাক পড়তো ছাদে। উনার নিজের হাতে রান্না করা খাবার খেতে। সবাই যেতাম। আমার গিন্নিকে মা বলে ডাকতেন। বাপের গুণে ঘর আলোকিত ছিল। উনার ছেলে মেয়েরা আমাদের সবাইকে আপনজন বলেই ভাবতো। কোনো এক পর্যায়ে আমি পরিবারের বড় ছেলে, আমার গিন্নি পরিবারের বড় বউ হয়ে উঠলো। মহসিন, বাবু সবাই আমাকে তাদের বড় ভাই মনে করে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতো। বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার মাঝে এমন সম্পর্কের উদাহরণ একান্তই বিরল বলে আমার ধারণা। কাজী হাকিম দাদ চৌধুরীর চালচলন এতোই সাধারণ ছিল যে দেখে বুঝার কোনো উপায় ছিল না যে তিনি বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছেন, সফলভাবে পরিচালনা করেছেন। আমি শুধুই জানতাম তিনি কোনো একটি চা বাগান পরিচালনা করেন। এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা শিষ্টাচারের বাইরে পড়ে বলে আমি কখনো কিছু জানতে চাইনি। পরে যতই জেনেছি ততই অবাক হয়েছি এই ভেবে এতোগুলো প্রতিষ্ঠান যিনি চালিয়েছেন তিনি এতো সহজ সরল নিরহঙ্কার হন কি করে? তিনি তাই আমাদের কাছে এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রিগ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, ১৯৫২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মিল্কভিটা ডেইরি ফার্ম এবং তাঁর দক্ষতার কারণে তিনি পরিচালক নিযুক্ত হন, ১৯৫৪ সালে প্লান্টার্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক হন, ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশ কামডিটিস লিমিটেডের পরিচালক, ১৯৯৫ সালে প্রগ্রেসিভ ব্রোকারস লিমিটেড এর নির্বাহী পরিচালক, ১৯৯১ সালে লেবার কোর্ট এর সদস্য, ১৯৭৫ সালে গ্লাডস্টোন ওয়াইলী এন্ড কোম্পানির পরিচালক, ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান, ১৯৮৫-৮৬ সালে লায়ন্স ক্লাব খুলশির চেয়ারম্যান, ১৯৮২ সালে কাটির হাট মফিদুল ইসলাম মাদ্রাসার সহসভাপতি , মফিদুল ইসলাম এতিম খানার সভাপতি, ১৯৬৬-৬৯ সালে কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সেক্রেটারী, ১৯৯৫ সালে কাটির হাট মহিলা কলেজের উপদেষ্টা সহ বিভিন্ন পদে আসীন ছিলেন। এতাগুলো পদে যিনি আসীন তিনি নিরহঙ্কারী হবেন এটা কি ভাবা যায়? আমি ব্যক্তিগতভাবে টেরই পাইনি উনি এতাসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এটাই হলো দাদ চাচার বৈশিষ্ট্য। দাদ চাচা আমাকে বলেছিলেন ৭০ সালের নির্বাচনে তিনি হাটহাজারী থানা থেকে প্রাদেশিক পরিষদের প্রার্থী হতে তিনি সরাসরি বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে জানিয়েছিলেন জনাব এম. এ. ওহাবকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তিনি যেন ওহাব সাহেবের পক্ষে কাজ করেন। দাদ চাচা বঙ্গবন্ধুর কথামতো হাটহাজারীতে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেন। আজীবন তিনি বঙ্গবন্ধুর ভক্ত ছিলেন। উনার ছেলে মহসিন বাবু বড় হয়ে গেলে ভাবলাম নীচের ঘরটি দাদ চাচার লাগবে কিন্তু কোনো দিন তা আমাকে বলবেন না। এই চিন্তা করে নিজ থেকেই ঘর ছেড়ে দেয়ার কথা জানালে উনি মর্মাহত হন। পরে আবার আমি উনার অনুরোধে উনার জীবিতকাল পর্যন্ত উনার ওখানেই ল্যাব প্র্যাকটিস করি। আমার প্রতি তাঁর ভালবাসার এর চাইতে বড় প্রমাণ কি হতে পারে। ভাড়াটিয়া চলে যাওয়ার পর আবার তাকে টেনে নেয়ার উদাহরণও সম্ভবত এটিই হবে। বড় মনের মানুষ আর কাকে বলে। দাদ চাচার বড় ছেলে কাজে কাজী মহসিন চৌধুরী এখন প্রতিষ্ঠিত একজন আয়কর আইনজীবী। সুনামের সাথে প্র্যাকটিস করছেন। তাঁর বাবার নামে কাজী হাকিম দাদ চৌধুরী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর বাবার স্মৃতি রক্ষা করে চলেছেন। এ জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানাই। হাকিম দাদ চৌধুরী আর নেই। ২০০১ সনের ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন। তবে তিনি আমারসহ অনেকের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আজীবন। তিনি পরলোকে শান্তিতে থাকুন এই কামনা করছি।লেখক : মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও চিকিৎসক.tdi_3_5ae.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_5ae.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত