কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ ও তার প্রতিকার

দৈনিক আজাদী প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২০, ০৭:০৪

.tdi_2_f95.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_f95.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});শারমিন সুলতানা, বয়স ২৩ বছর। সদ্য বিবাহিত। এ সময় যখন তার স্বামী ও নতুন সংসার নিয়ে আনন্দ উৎফুল্ল থাকার কথা, সে কিনা সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে। তার এই বিষণ্নতা স্বামীর দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। নানা ভাবে স্ত্রীকে খুশি করার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলেন, তখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়লো, শারমিন থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগে ভুগছেন, যা ছিলো হাইপোথাইরয়ডিসম বা থাইরয়েড হরমোন স্বল্পতা। অতঃপর চিকিৎসা শুরু হলো। এদিকে নাসরিনের শাশুড়ি বেঁকে বসলেন, বৌমার হরমোন রোগ ধরা পড়েছে, এর মানে হল, তার আর বাচ্চা হবে না। নেমে এলো বৌয়ের উপর মানসিক নির্যাতন এবং ছেলেকে পুনরায় বিয়ে করানোর তোড়জোড়। এ অবস্থায় শারমিনের মানসিক অবস্থা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন?এ রকম শারমিন আমাদের চারপাশে হাজারো ছড়িয়ে আছে, যাদের কান্না আমাদের কান অব্দি পৌঁছায় না। এই সমস্যা গুলোর সমাধান করতে হলে, আমাদের থাইরয়েড হরমোন সম্পর্কে কিছু বিষয় জানা থাকতে হবে। প্রচলিত ভাবে হরমোন রোগ বলতে আসলে অনেক রকম হরমোনের রোগ কে বোঝানো হয়, কেননা আমাদের শরীরে বেশকিছু হরমোন আছে, যাদের মধ্যে থাইরয়েড হরমোন অন্যতম। আমাদের গলায় শ্বাসনালীর সামনের দিকে প্রজাপতির মতো একটি গ্রন্থি আছে, যা থাইরয়েড গ্রন্থি নামে পরিচিত। এই গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ও ট্রাই- আয়োডোথাইরনিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের বিপাক ক্রিয়াসহ শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণ পরিচালনা করে ঞঝঐ নামক হরমোন, যা মস্তিষ্কে অবস্থিত পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে আসে। পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের ঞঝঐ নিঃসরণ পরিচালিত হয় হাইপোথ্যালামাস থেকে নিঃসৃত ঞজঐ দিয়ে। কাজেই এই তিন গ্রন্থির যে কোন একটিতে সমস্যা দেখা দিলে, থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগ দেখা দিতে পারে। সচরাচর থাইরয়েড গ্রন্থির যে রোগ গুলো দেখা যায়, সেগুলো হলো # হাইপোথাইরয়ডিসম- অর্থাৎ শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় হরমোন উৎপাদন কমে যাওয়া। # হাইপারথাইরয়ডিসম- প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হরমোন তৈরি হওয়া # থাইরয়ডাইটিস- থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের প্রদাহ # থাইরয়েড নডিউল- গ্ল্যান্ডের টিউমার, যা ভালো (ইবহরমহ) বা খারাপও (গধষরমহধহঃ) হতে পারে। এছাড়া যে কোন কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি আকারে বড় হয়ে যেতে পারে, যাকে আমরা গয়টার (এড়রঃবৎ) বলি। এক্ষেত্রে হরমোনের তারতম্য থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ গুলোর অন্যতম কারণ হলো, শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন নিজের বিরুদ্ধেই কাজ করে, তাছাড়া আয়োডিনের অভাব, বা আধিক্য, গ্রন্থির প্রদাহ, বা কিছু কিছু ওষুধ সেবনের মাধ্যমেও এ রোগ হতে পারে। হাইপোথাইরয়ডিসম বা হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলো হলো, ক্লান্তি বা অবসাদ, শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া, সারা গায়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া, ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পারা, কোষ্ঠ কাঠিন্য,শুষ্ক ত্বক, অত্যধিক ঘুম ঘুম ভাব, বিষন্নতা, মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, এমনকি বন্ধ্যাত্বও হতে পারে। অনেকের শরীরে পানি আসে, পা ফুলে যেতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে যদি বাচ্চার থাইরয়েড গ্রন্থি অনুপস্থিত থাকে, বা ভালোভাবে তৈরি না হয়, অথবা তৈরি হওয়া সত্ত্বেও হরমোন উৎপাদনের ক্ষমতা না থাকে, তবে বাচ্চাদের জন্মগত ভাবেই হাইপোথাইরয়ডিসম থাকতে পারে। এ রোগে বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাপক ভাবে বাধাগ্রস্ত হয় এবং বাচ্চা খর্বকায় হয়। দ্রুত রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। হাইপারথাইরয়ডিসমে উল্টো ঘটনা ঘটে, যেখানে অতিরিক্ত হরমোন তৈরি হতে থাকে। শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ভারসাম্যহীনতার পাশাপাশি গ্রন্থিতে টিউমার থাকলেও এই রোগটি হতে পারে। এ রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে, ঠিকমত খাওয়া সত্ত্বেও শরীরের ওজন দিন দিন কমে যাওয়া, বুক ধরফর, অতিরিক্ত ঘাম, দুর্বলতা, সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা, গরম সহ্য করতে না পারা, অস্থিরতা, ঘন ঘন পায়খানা হওয়া, মহিলাদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ঋতুস্রাব এমনকি বন্ধ্যাত্ব ও হতে পারে। অনেকের চোখ বড় হয়ে অক্ষিকোটর থেকে কিছুটা সামনের দিকে বের হয়ে আসে, এতে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, ব্যথা অনুভূত হওয়া এমনকি চোখে দেখতে অসুবিধা, যেমন কোন জিনিসকে দ্বিগুণ দেখা যাওয়া সহ মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ হলে, হালকা বা মাঝারি জ্বর, গলা ব্যথা ও উপরে উল্লেখিত হরমোন আধিক্যের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। টিউমার হলে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার বড় হবে। টিউমার এক বা একাধিক হতে পারে। টিউমার থেকে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসৃত হয়ে হাইপারথাইরয়ডিসম এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে হরমোন স্বাভাবিক বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমও দেখা যেতে পারে। রোগ শনাক্তের জন্য রক্ত পরীক্ষা করে, রক্তে ঞঝঐ ও থাইরয়েড হরমোনগুলো দেখা হয়। গ্রন্থির গঠন ও কার্যকারিতায় সমস্যা আছে কিনা, তা দেখার জন্য থাইরয়েড আলট্রাসনোগ্রাফি ও থাইরয়েড স্ক্যান করা হয়। এছাড়া কিছু এন্টিবডির উপস্থিত আছে কিনা দেখে রোগের ধরন ও প্রকৃতি নির্ণয় করা হয়। টিউমার থাকলে সুই দিয়ে পরীক্ষা করে (ঋঘঅঈ) দেখতে হয়, এটি ভালো নাকি খারাপ টিউমার? বলে রাখা ভালো, থাইরয়েডের টিউমার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভালো হয়। কিন্তু তা অবশ্যই সুই দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, কেননা খারাপের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও থেকে যায়। রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করতে হয়। হরমোন কম থাকলে উক্ত হরমোন ওষুধের মাধ্যমে সারাজীবন সেবন করতে হয়। হরমোনের আধিক্য থাকলে তা ওষুধ, রেডিও আয়োডিন বা অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়, তবে রোগের কোন পর্যায়ে কি চিকিৎসা লাগবে, সেটা রোগের মাত্রা দেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই সিদ্ধান্ত দিবেন। টিউমার যদি খারাপ প্রকৃতির হয়, তবে তা অতিসত্বর অপারেশন করে ফেলতে হবে। অপারেশনের পর টিউমারটি পরীক্ষা করে (ঐরংঃড়ঢ়ধঃযড়ষড়মু) চিকিৎসার পরবর্তী ধাপগুলো ঠিক করা হয়। আমাদের দেশে প্রায় ৫ কোটিরও বেশি মানুষ থাইরয়েডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত, যার প্রায় ৩ কোটিই জানে না যে তাদের এই রোগটি আছে। পুরুষের তুলনায় নারীদের এই রোগের প্রকোপ বেশি। সাধারণত একজন পুরুষের বিপরীতে দশজন নারী থাইরয়েডজনিত রোগে আক্রান্ত। তাই বিয়ের আগে বা গর্ভধারণের পূর্বে একজন নারীকে অবশ্যই থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বাংলাদেশে আয়োডিনের ঘাটতি এবং এন্টিবডি উপস্থিতির আধিক্যের কারণে এ অঞ্চলে থাইরয়েড রোগের প্রকোপ বেশি বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। মহিলাদের ক্ষত্রে একটি হতাশার কথা প্রায়ই শোনা যায় যে, যেহেতু হরমোনের রোগ আছে, সেহেতু তার পক্ষে গর্ভধারণ কখনোই সম্ভব নয়। যেমনটা হয়েছে শারমিনের শাশুড়ির ক্ষেত্রে। কিন্তু একথা একেবারেই সঠিক নয়। সাধারণত থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য, মহিলাদের ডিম্বস্ফুটনের ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে গর্ভধারণ কঠিন করে তুলতে পারে। ডিমের গুণগত মানেরও ত্রুটি দেখা যায়। আবার গর্ভধারণ হয়ে থাকলেও, গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, এমনকি সন্তানের জন্মগত ত্রুটি ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু এতে ভয় পাওয়ায় বা হতাশ হবার কিছু নেই। সঠিক সময়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ সেবন করে গর্ভধারণের পূর্বেই হরমোনের মাত্রা এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে, যা গর্ভকালীন হরমোনের নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে থাকে। তাই আজকাল থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষাকে বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে রুটিন পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। পরিশেষে বলবো, দুঃচিন্তা নয়, থাইরয়েড জনিত উপসর্গ দেখা দিলে, অবহেলা না করে তৎক্ষণাৎ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। কেননা, এ রোগের আধুনিক চিকিৎসা আমাদের দেশেই আছে। থাইরয়েড গ্রন্থি যদিও আকারে ছোট, এর কার্যকারিতা ব্যাপক। ভ্রূণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থাইরয়েড হরমোন অপরিহার্য। তাই এ রোগ সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান ও সচেতনতার মাধ্যমে এ গল্পের শারমিনের মত হাজারো শারমিনের জীবনকে সহজতর করা সম্ভব। লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।.tdi_3_281.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_281.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও