কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

করোনায় স্থবির কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ

মানবজমিন চট্টগ্রাম প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর চীন থেকে এ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না আসায় এ স্থবিরতা। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, এই প্রকল্প কাজের মূল উপকরণ হচ্ছে সেগমেন্ট। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে ১০ হাজার সেগমেন্ট এসেছিল চীন থেকে। করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন শুরুর পর চীন থেকে সেগমেন্ট আর আসেনি। এমনকি দেশীয় শ্রমিকরাও কাজে না আসায় নির্মাণ কাজে স্থবিরতা নেমে আসে।  তিনি জানান, মূলত চীন থেকে আসা সেগমেন্ট দিয়েই নদীর তলদেশে টানেলের রিং তৈরি করা হচ্ছে। একটি রিংয়ের ২ মিটার সমপন্ন করতে ৮টি সেগমেন্ট লাগে। প্রকল্পের জন্য মোট ২০ হাজার সেগমেন্ট আসার কথা। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে সেখানে সেগমেন্ট তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে লকডাউনের কারণে পরিবহন ব্যবস্থায়ও নেমে আসে বিপর্যয়। যে কারণে প্রকল্পের জন্য যথাসময়ে সেগমেন্ট আসার বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবে করোনা মহামারিতেও প্রকল্প কাজে নিয়োজিত ২৯৩ জন চীনা প্রকৌশলী ও শ্রমিকের ২৬৬ জনই দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলেননি। তারাই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের সহযোগী ৬০০ দেশীয় শ্রমিকের অধিকাংশই এখনো কাজে যোগ দেয়নি। ফলে যৎসামান্য কাজ চলছে। এখন যা হচ্ছে সব নদীর ভিতরের কাজ। যান্ত্রিক ছাড়া এখন অন্য কোন কাজ নেই বললেই চলে। বাইরের কাজ না হলে ভিতরের কাজের কোনো অগ্রগতি হবে না। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি যদি এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হতো তাহলে আমরা কাভার করতে পারতাম। কবে নাগাদ আবার আমরা স্বাভাবিক কাজে ফিরতে পারব, তাও বলা যাচ্ছে না। দেশের পরিস্থিতি নির্ভর করছে বিশ্ব পরিস্থিতির উপর। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে কি না তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সরজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি থেকে শুরু হয়ে আনোয়ারা উপজেলার কাফকো ও সিইউএফএল সীমানার মাঝখান দিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মেগা প্রকল্পে কর্মযঞ্জের মাঝে এখন নীরবতা নেমে এসেছে। অথচ করোনা পরিস্থিতিতেও চট্টগ্রাম মহানগরের আর কোথাও এমন নিরবতা নেই।  প্রকল্পের সূত্রমতে, চীনের আর্থিক সহায়তায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকায় মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার রিভার কর্ণফুলী প্রজেক্ট শীর্ষক প্রায় ৯.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরমধ্যে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি খরচ বাংলাদেশ সরকারের। কাজের মেয়াদ ধরা হয়েছে পাঁচ বছর। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। চীনের সাংহাই শহরের মতো চট্টগ্রাম শহরকে ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলে গড়ে তোলা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আধুনিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এ প্রকল্পের মূল্য উদ্দেশ্য। কিন্তু চীনের পক্ষ থেকে সময়মতো অর্থ ছাড় না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ শুরু করতেই যথেষ্ট বিলম্ব হয়। যে কারণে টানেল খননের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের শেষের দিকে। কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ উদ্যোগের এই মেগা প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোমপানি (সিসিসিসি)। গত মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ছিল ৫১ শতাংশ। কিন্তু এরপর করোনা-পরিস্থিতির কারণে গত ৫ মাসে কাজের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। উল্লেখ্য, সার্ক দেশগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলই হচ্ছে প্রথম সড়ক টানেল। প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় এর অর্থনৈতিক প্রভাব সমপর্কে বলা হয়েছে, এ টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে।  এছাড়া কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ফলে ভ্রমণ সময় ও খরচ কমবে এবং পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। এছাড়া টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলঘেঁষা আউটার রিং রোডের সংযোগ থাকছে। অপরদিকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলাকে এ প্রকল্প মূল নগরের সাথে যুক্ত করবে। ফলে সেখানে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে। এতে সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ, আধুনিকায়ন, শিল্পকারখানার বিকাশ সাধন ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ফলে বেকারত্ব দূর হওয়াসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও