কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

‘স্বামীর লাশ নিজে দাহ করার যে কষ্ট...’

প্রথম আলো প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২০, ১৫:১৯

‘ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। ও কিছু বুঝতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতে ওকে শ্মশানে নেব না। ওর শরীরে একটি কাঠি ছুঁইয়ে নিই। সেই কাঠি নিয়ে ছেলের হয়ে নিজেই দাহ করি। তারপর বাড়ি ফিরে ছেলেকে ঢাকায় ওর নানার বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে আমি কোয়ারেন্টিনে আছি। ছেলে হয়তো ঠিকই অনুভব করতে পারছে—ওর বাবা নেই। দুটো মুঠোফোন হাতের কাছে রেখে বসে থাকে আর বলে, “বাবা ফোন করবে।” আমার কাছে জানতে চায় তার বাবা কই?’

কথাগুলো বললেন ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ ঊমা রানী দাস। ৭ জুন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান তাঁর স্বামী দেবাশীষ দাস। তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাকশিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মারা যাওয়ার পর করোনা পজিটিভের সনদ হাতে পান ঊমা রানী দাস।

আজ বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে কথা হয় ঊমা রানী দাসের সঙ্গে। তিনি এখন ময়মনসিংহে একাই আছেন। গত ৩১ মে ঢাকায় স্বামীকে রেখে তিনি কর্মক্ষেত্রে ফেরেন। জানালেন, স্বামী যে কারখানায় কর্মরত ছিলেন, সেখানে বেতন-ভাতা নিয়ে শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দেয়। কারখানার মালিক তাঁকে সরাসরি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য পাঠান। তারপর স্বামীর জ্বরসহ অন্যান্য অসুস্থতা শুরু হয়। রক্তে সংক্রমণের জন্য কারখানার পক্ষ থেকে রাজধানীতে একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনি বাসায় থাকলে ভালো থাকবেন বলে তাঁকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। জ্বর বা করোনার কিছু উপসর্গ থাকলেও হাসপাতাল থেকে কোনো পরীক্ষা করা হয়নি। বাসায় শ্বাসকষ্ট শুরু হলে করোনা পরীক্ষার কোনো সনদ না থাকায় বাসার কাছের কোনো হাসপাতালে ভর্তি নেয়নি। তখন অ্যাম্বুলেন্সে করে স্বামীকে ময়মনসিংহে আনা হয়। প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শহরের এস কে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই তিনি মারা যান। শহরের কেওয়াটখালী শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

ঊমা রানী দাস বলেন, ‘আমেরিকা থেকে ও মার্কেটিংয়ে পিএইচডি করে। ও বিদেশেই ছিল। শুধু আমার জন্য দেশে ফিরে এসেছিল। ও বাঁচতে চেয়েছিল, ওকে বাঁচানো গেল না। কারখানার অব্যবস্থাপনা, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ওকে বাঁচতে দিল না। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজেও আইসিইউর জন্য মনে হয় চিকিৎসকদের শুধু পা ধরার বাকি রেখেছিলাম।’

দেবাশীষ দাসের বাড়ি সাভারে। পড়াশোনা করেন ময়মনসিংহে। দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। পৈতৃক বাড়িতে তেমন যাতায়াত ছিল না। ঊমা রানী দাস বলেন, ‘করোনা উপসর্গ ছিল স্বামীর। পরে মারা গেলেন। তাই আমি নিজেই পরিবারের অন্যরা যাতে সংক্রমিত না হন, সে ব্যাপারে সচেতন ছিলাম। স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় আমি নিজেই আমার স্বামীর লাশ দাহ করি। তবে আমার কর্মক্ষেত্র বা স্বামীর কর্মক্ষেত্র থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি—এ ক্ষোভ থাকবে সব সময়।’

ঊমা রানী দাস স্বামীর লাশ দাহ করছেন এবং হাতে চিকন একটি কাঠি নিয়ে হেঁটে একা বাড়ি ফিরছেন এ ধরনের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ফেসবুকে আলোচনায় এলেও ঊমা রানী দাস বলেন, ‘ফেসবুকে আমি আমার পরিবারের কথা বা ছবি তেমন শেয়ার করি না। আমি চাইও না আমার পরিবার বা আমার ছবি আলোচনায় থাকুক। স্বামীর লাশ নিজে দাহ করার যে কষ্ট, তা তো সারা জীবন বহন করতে হবে। আর এই ধরনের ছবিও আমাকে কষ্ট দেবে।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও