কাউন্সিলর খোরশেদ ও তাঁর স্ত্রীকে স্কয়ারে ভর্তির ব্যবস্থা করলেন শামীম ওসমান
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। গতকাল শনিবার থেকে খোরশেদের স্ত্রী লুনার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাঁর জন্য আইসিইউ সাপোর্ট পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন স্বামী খোরশেদ। পরে তাঁকে কাঁচপুরের সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়।
আজ রোববার বিকেলে নিজের ফেসবুক আইডিতে কাউন্সিলর খোরশেদ স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর রহমত ও অনেকের ভালোবাসায় লুনা ও আমি এখন স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছি। দোয়া করবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, “আমি এই ভর্তির বিষয়ে এমপি শামীম ওসমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। করোনা নিয়ে কোনো রাজনীতি নয়। এটা মানবতা প্রদর্শনের সময়। এমপি শামীম ওসমান আমার স্ত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন শুনে মোবাইল ফোনে রোববার দুপুরে যোগাযোগ করে স্কয়ার হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করেছেন। এমপি বলেছেন, ‘খোরশেদ তুমি দ্রুত তোমার স্ত্রীকে নিয়ে স্কয়ারে চলে যাও। এটা রাজনীতির সময় নয়। এটা একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর সময়। তুমি যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছ। তোমার এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমারও দায়িত্ব তোমার ও তোমার স্ত্রী পাশে দাঁড়ানো’।”
খোরশেদ আরো বলেন, ‘দয়া করে এ নিয়ে কোনো রাজনীতি করবেন না প্লিজ। আমি বিএনপি করি। শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের এমপি। এখানে কে কোন দলে করে, কার প্রতি কে সহাযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল এগুলো নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করবেন না। এখন মানবতার সময়।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি সবার আগে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আল্লাহর। পরে বলব আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও আমার মাতৃতুল্য নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল- কে কোন দল করে, তা নয়। করোনায় মানবতার ভালোবাসা পৌঁছে দিতে হবে বাংলার প্রত্যেকটি ঘরে। খোরশেদ কোন দল করে এটি কোনো বিষয় নয়। সেও মানুষের সেবায় অনেক কাজ করে যাচ্ছে। দলমত নির্বিশেষে এখন দেখার বিষয় হচ্ছে ওর স্ত্রীর অবস্থা ভালো নয়। আর সেই পরিস্থিতিতে আমাদের সবার উচিত বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমার ও সবার দায়িত্ব। শুধু খোরশেদ বা তার স্ত্রী-ই নয়, এর আগেও স্কয়ার হাসপাতালে অনেক সংকাটপন্ন রোগীকে জরুরি চিকিৎসা নিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ৬০ জনের দাফন সম্পন্ন করার পর দেশজুড়ে প্রশংসিত কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এমনকি করোনায় মৃত হিন্দু ব্যক্তিদেরও সৎকার করেন তিনি ও তাঁর টিম। এ কারণে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’, ‘করোনা যোদ্ধা’, ‘সুপার হিরো’সহ নানা খ্যাতি পেয়েছেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোরশেদ ফেসবুক লাইভে জানান, গতকাল শনিবার তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তবে তিনি আশা করছেন, তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ফলাফল নেগেটিভ আসবে। তিনি মাঠে কাজ করতে না পারলেও সারাক্ষণ ফোন খোলা রেখে টিম ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান।
এদিকে, খোরশেদের স্ত্রী লুনা করোনায় আক্রান্তের পর বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তবে, শনিবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় লুনার। তিনি প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এরপর তাঁকে কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেন খোরশেদ। কিন্তু পারেননি। এরপর কাউন্সিলর খোরশেদ শনিবার মধ্যরাতে সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে পৌঁছানোর পর জানান, লুনাকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তাঁর পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। সবার কাছে দোয়া চান তিনি।
খোরশেদ বলেন, ‘আমি নিজেও এখন করোনায় আক্রান্ত। আমার করোনা পজিটিভ আসার খবর পেয়ে লুনা আরো ভেঙে পড়েছে।’