বাসায় করোনা চিকিৎসায় আছে শান্তি, আছে ভয়-শঙ্কা
বাসায় নতুন অতিথি এসেছে। একদম অপিরিচিত। অর্থ, ক্ষমতা আর প্রভাবের দিক থেকে আপনার চেয়ে অনেক গুণ এগিয়ে। আপনার বাড়ি আর জায়গা দখল করে নিতে চায়। আপনাকে উচ্ছেদ করতে চায়। মুহূর্তেই পুরো পরিবারসহ আপনাকে শেষ করে দিতে চায়। সবার জীবন শতভাগ হুমকির মুখে। মামলা? সে তো লম্বা প্রক্রিয়া! আপনাকে এখনই এই অতিথির মুখোমুখি হতে হবে। আমার কাছে কোভিড নাইন্টিনকে ঠিক এমনই মনে হয়েছে।
তাই এই অপরিচিত ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর মনের দিক থেকে শক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। মৃত্যুর ভয়কে এক মুহূর্তের জন্যও মনের মধ্যে জায়গা করে নিতে দেইনি। বন্ধুরা আপনারা জানেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের জন্য সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর ১ এপ্রিল থেকে মাদল পথের ধারের অভুক্ত মানুষদের রান্না করা খাবার দিচ্ছে। শুরুতে ২০০-২৫০ হলেও ঈদের আগে ১৫০০ জনকে পর্যন্ত আমরা খাবার দিয়েছি। এই কাজ এখনো অব্যাহত আছে। তাই মনের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার ভয় তো সব সময়ই ছিল। শেষ পর্যন্ত ভয়টাই সত্যি হলো। ৮ মে ইফতারের পর হঠাৎ শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, ১০২।
সঙ্গে বাড়তে থাকে গায়ের ব্যথা, গলা ব্যথা, কাশি আর ডায়রিয়া। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গায়ের ব্যথা সহ্য সীমার বাইরে চলে যায়। বাথরুমে যাওয়া–আসা বেড়ে যায়। জ্বর শুরু হওয়ার পর থেকেই কথা হচ্ছে ভাই–বন্ধু শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদের সঙ্গে। তিনি আমাকে কোভিড নাইন্টিন পজেটিভ হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেন। তখনই সবার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আমি আলাদা রুমে চলে যাই। যাকে বলে ‘নিভৃতবাস’ (আইসোলেশন)। ডা. মিলুর সহায়তায় ৯ মে স্কয়া্র হাসপাতালে ডা. প্রতীক দেওয়ানের সঙ্গে দেখা করি। তিনি কোভিড নাইন্টিন পরীক্ষার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ তখনই শুরু করতে বলেন। ১২ মে বিকেল ৪টা ৩২ মিনিটে হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে জানানো হয়, আমার কোভিড নাইন্টিন পজেটিভ।