কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জাহিদ হাসানের শৈশবের এক ভয়ংকর ঈদের দিন

প্রথম আলো প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২০, ২২:৪৬

‘সেটা খুবই ভয়ংকর ঘটনা। আমার বয়স তখন চার বছরের মতো হবে। জন্ম ১৯৬৭ সালে। ১৯৭১ সালের কথা বলছি। আমি তখন নানার বাড়িতে। দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলায় তখন ঈদগাহে অল্প পরিসরে ঈদের নামাজ হচ্ছে। ঈদের নামাজটা পরে বাসার দিকে হাঁটছি আমি আর আমার ভাই ইকবাল হোসেন। ভাইয়ের বয়স তখন ছিল ৯ বছর। আমরা গ্রামের বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছি। এমন সময় হঠাৎ শুনি গর্জন। শব্দ শুনে দৌড়ে বাঁশঝাড়ের মধ্যে যাই। দেখি দুইটা প্লেন থেকে ক্যাট ক্যাট করে ওপর থেকে গুলি করছে। সেগুলো লেগে বাঁশঝাড়ের বাঁশগাছগুলো ঠাসঠাস পড়ে যাচ্ছে। আমরা যেদিক দিয়ে যাচ্ছি, সেদিক দিয়েও গুলি হচ্ছে। আমরা দুই ভাই দৌড়ে পালাই। আমরা একটা পুকুরের মধ্যে ছিলাম। স্বাভাবিক হলে উঠে আসি।’ বলছিলেন অভিনেতা জাহিদ হাসান। এই অভিনেতা শৈশবের ভয়ংকর সেই স্মৃতি সম্পর্কে আরও বলেন, ‘এই স্মৃতি আমাকে অনেক দিন ভুগিয়েছে। এটা নিয়ে অনেক দুঃস্বপ্ন দেখতাম। আমার জ্বর হলে দেখতাম আমাকে অনেক বড় বড় প্লেন তাড়া করছে। আমি দৌড়াচ্ছি। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত আমি এটা নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছি। ’৭১–এর সেই ঈদে তখন বন্দী অবস্থায় খুবই বিপদগ্রস্ত ছিলাম। এই স্মৃতিটা আমাকে অনেক পেইন দিত। আমি ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। আমার ভেতরে এই ভয়টা ঢুকে গিয়েছিল।’

যুদ্ধ–পরবর্তী স্বাধীন দেশে শৈশবের ঈদ কেমন ছিল, জানতে চাইলে জাহিদ হাসান বলেন, ‘তখন আমরা থাকি সিরাজগঞ্জে। আমাদের ওইখানে একটা পাড়ার মতো ছিল। সব সময় ফুর্তিতে থাকতাম। সেখানে রোজার ঈদের আগের রাতে গরু জবাই হতো। গরুটা অনেকগুলো ভাগে কেনা হতো। কেউ দুই ভাগ, কেউ তিন ভাগ, কেউ এক ভাগ। তখন গরু জবাইয়ের ওইখানে লাইট থাকত। সেখানে আমাদের একটা কুস্তি প্রতিযোগিতা হতো। তা ছাড়া আমরা ঈদের চাঁদ রাতে মিছিল করতাম। আমাদের মিছিলের স্লোগান ছিল, ‘চাঁদ উঠেছে, উঠেছে, কিসের চাঁদ কিসের চাঁদ, ঈদের চাঁদ ঈদের চাঁদ’। আমরা সবাই মিলে ঘুরে ঘুরে মিছিল করতাম। মশাল জ্বালানো হতো। মুখের ভেতর কেরোসিন দিয়ে ফুঁ দিতাম। এই সবই ছিল কিশোর জাহিদ হাসানের ঈদের আগের রাতের স্মরণীয় ঘটনা। ওই সময়ে ঈদের দিন কীভাবে কাটত জানতে চাইলে জাহিদ হাসান বলেন, ‘ঈদের ঐ সময়ে ক্লাস সিক্স, সেভেনে পড়ি। তখন একটা ফ্যাশন আসছিল একদম পাতলা সাদা শার্ট গায়ে দেওয়া। যে শার্টের পকেটে এক টাকা, ৫ টাকার নোট রাখলে দূর থেকে দেখা যেত। এই শার্ট পরে ঘুরতাম।’ এই অভিনেতার সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায় তিনি ঈদে কিছু কিনে কাউকে দেখাতেন না। সবই লুকিয়ে রাখতেন। জাহিদ হাসান বলেন, ‘ঈদের অন্য কেনা জুতা কখনোই শৈশবে কাউকে দেখাতাম না। তবে আমি নিজেই মাঝেমধ্যেই রাত ২টা হোক আর রাত ১০টা হোক, সেই জুতা বের করতাম। দেখতাম সব ঠিক আছে কি না। জুতার গন্ধটা নিয়ে রেখে দিতাম। ঈদের দিন নতুন পোশাকের সঙ্গে পরতাম।’ বাবা–মা যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন সিরাজগঞ্জে ঈদ করেছেন এই অভিনেতা। এখন পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই ঈদ করেন। মাঝেমধ্যে রাস্তাতেও বের হন। ঘুরতে বেশ ভালোও লাগে তার। এই অভিনেতা বলেন, ‘এখন কিছু সময়ের জন্য কোথাও গেলে আমি ইনজয় করি।

অনেকেই চেনার কারণে কাছে এসে কথা বলে চলে যায়, ছবি ওঠে। ভালোই লাগে কিন্তু বেয়াদবি যখন হয়, তখন খারাপ লাগে। সেটা যেখানেই হোক। আমাদের মিডিয়াতেও আছে অনেক বেয়াদব। এই বেয়াদব এবং ননসেন্স সব জায়গায়ই থাকে। কেউ বেয়াদবি করলে তখন মন খারাপ হয়ে যায়।’ সিরাজগঞ্জে মায়ের কাছে ঈদ করতে যাওয়ার সময় রাস্তার তাদের চেনার কারণে অনেক সময় ঝামেলা পোহাতে হতো। এই প্রসঙ্গে অতীত সেসব দিনের কথা শেয়ার করে এই অভিনেতা বলেন, ‘মৌকে এবং আমাকে অনেকেই চিনত। যাবার পথে জ্যামে গাড়ি আটকে থাকলে আমাদের মৌমাছির মতো চারপাশ থেকে মানুষ আটকে রাখত। আমার বাচ্চা ছেলেমেয়েরা সঙ্গে থাকত।’ আগে চাইলে যেকোনো জায়গায় ইচ্ছেমতো চলে যেতে পারতেন এই অভিনেতা। শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারতেন। কিন্তু এখন তারকা হওয়ার কারণে অনেক সময় সেটা সম্ভব হয় না। তবে ভক্তদের ভালোবাসা সিক্ত এই অভিনেতা দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকাতেই বাসায় ঈদ করবেন। করোনায় শুটিং না থাকায় এই অবসরে ঘরে বসে এই অভিনেতা বেশ কটি কবিতা লিখেছেন। তার লেখা ‘রাস্তা’ শিরোনামের একটি কবিতা আবৃত্তি করে শোনালেন জাহিদ হাসান।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও