করোনায় ভার্চুয়াল রাজনীতি
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্বের সীমানা বজায় রাখতে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে ডান-বাম ও মধ্যমপন্থী কয়েকটি রাজনৈতিক দল ত্রাণ কার্যক্রম ও সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড বজায় রাখলেও তাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি কম। শীর্ষ পর্যায়ের দুয়েকজন নেতা শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসকদের মধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করলেও বেশিরভাগ দলের অধিকাংশ নেতাই কোয়ারেন্টিন মেনে চলছেন। তবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লাইভে এসে বক্তব্য প্রচারে ‘ভার্চুয়াল অ্যাক্টিভিটি’র (অনলাইন প্রচার) ডিজিটাল পন্থা গ্রহণ করেছেন নেতারা। চলতি বছরের মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বেড়েছে রাজনৈতিক নেতাদের বিবৃতিও।
রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন,করোনাভাইরাস শেষ হওয়ার আপাতত কোনও সুসংবাদ এখনও মেলেনি। সে কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজপথের রাজনীতি ও রাজনৈতিক কর্মসূচিভিত্তিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আর এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য বিশ্লেষণেও। গত দুমাসে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে ‘লকডাউন’ সীমিত করার সমালোচনা করেছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি দল কারফিউ ঘোষণার দাবি করেছে। যদিও ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ লকডাউন শিথিল করার পক্ষে গণমাধ্যমে যুক্তি তুলে ধরেছেন, আবার কোনও কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কাও করেছেন। সবমিলিয়ে নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে রাজনীতিতেও নানা প্রভাব পড়বে এবং তা দীর্ঘমেয়াদে।
রাজনৈতিক দলগুলোর গত দুই মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিরোধীদলগুলোর মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন। গত ১২ মে ‘বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতিশীল’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আগের দিন ১১ মে, করোনা সংকটকালে স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতার কথা তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। সেদিন এক ভিডিও বার্তায় হানিফ বলেন, ‘জীবন ও জীবিকা, দুটোই আজ বিপন্ন।। করোনাভাইরাসের প্রকোপ যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাও ততটাই প্রকাশ পাচ্ছে। প্রকাশ পাচ্ছে আমাদের সামর্থ্যের ঘাটতি ও সমন্বয়ের অভাব। গত ২০ মে ওবায়দুল কাদের ভিডিওবার্তায় বলেন,‘ঘর থেকে বের হয়ে কেউ আটকা পড়বেন না। সংকট মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করুন। অন্যথায় সরকারকে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।’ করোনাকালে দেশে ২১ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে। আম্পান পরবর্তী অবস্থা বিশ্লেষণে সামাজিক দূরত্ব মেনে একটি বৈঠকও করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
ক্ষমতাসীন জোটের শরিক রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু গত এপ্রিল ও মে মাসে দফায় দফায় সরকারি নানা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নিয়মিত বিবৃতি দিয়েছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ লাখ মানুষকে সরাসরি আর্থিক সহযোগিতা করার নির্দেশের পর এই নেতারা তার প্রশংসাও করেন।
বিএনপির ভার্চুয়াল রাজনৈতিক কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরপরই সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে দলটি। ২৫ মে পর্যন্ত দলীয় কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা ছিল। তবে শুক্রবার (২২ মে) বিকালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানিয়েছেন, দলের সাংগঠনিক স্থগিতাদেশ আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এই সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে ইতোমধ্যে দলীয়ভাবে ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বিএনপির কমিউনিকেশন্স সেল। গত ১৬ মে দলটির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন আলোচনা করেছেন এই বৈঠকে। জহির উদ্দিন স্বপনের সঞ্চালনায় আগামী পর্বের সভায় দলটির আরেক নেতা নজরুল ইসলাম খান অংশ নেবেন। একদিকে যেমন অনলাইনে আলোচনা শুরু হয়েছে, অন্যদিকে এর মধ্যেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানাতে গুলশানে সংবাদ সম্মেলন ও ত্রাণ দিতে দক্ষিণখান, তেজগাঁওসহ কয়েকটি স্থানে গেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ নিয়মিত অনুসারী নেতাদের আয়োজনে ত্রাণ ও সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করে চলেছেন।
একইসঙ্গে নয়া পল্টনের কার্যালয় থেকে কয়েকদিন সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তিনি, দলীয় ফেসবুক পেজে তা প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নেতৃত্বে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পর্যবেক্ষণ সেল রয়েছে, এই সেলের পক্ষ থেকেও গত মঙ্গলবার (১৯ মে) করোনাভাইরাসের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল কয়েকটি বৈঠকের কথাও জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।
বিএনপির দুটি জোটের অন্যতম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই ফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে বিএনপি ও নাগরিক ঐক্যের নেতারা শারীরিক দূরত্ব রেখে কয়েকটি অনুষ্ঠান করেছেন। একইসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা ও বিভিন্ন গণমাধ্যকর্মীদের সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও দলের আরেক নেতা ডা. জাহেদ উর রহমান টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিচ্ছেন নিয়মিত। গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন বার্ধক্যজনিত কারণে বাসাতেই আছেন। দলের সেক্রেটারি ড. রেজা কিবরিয়া তার নির্বাচনি এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করলেও ভার্চুয়ালি একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছেন। গণফোরাম পরিচয়ে আরেকটি অংশের নেতারাও কার্যালয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে অনুষ্ঠান করেছেন একাধিক। আ স ম আবদুর রব নিয়মিত বিবৃতিতে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন, লকডাউন শিথিল করার সমালোচনাও করেছেন তিনি।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- রাজনীতি
- আওয়ামী লীগ
- বিএনপি
- রাজনীতি
- চলমান সংকট
- ভার্চুয়াল
- করোনার প্রভাব
- করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
- বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
- শেখ হাসিনা
- ওবায়দুল কাদের
- মাহমুদুর রহমান মান্না
- রুহুল কবির রিজভী আহমেদ
- আ স ম আবদুর রব
- জোনায়েদ সাকি
- রাশেদ খান মেনন
- ফেসবুক
- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
- আওয়ামী লীগ
- নাগরিক ঐক্য
- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট