কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

শীষকাটা লেদা পোকার আক্রমণে দিশাহারা কৃষক

মানবজমিন প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বুলবুলে ক্ষয়ক্ষতির পরে এবার আধা-পাকা ধানে শীষকাটা লেদা পোকার আক্রমণ ও বাজার দরে দিশাহারা পটুয়াখালীর বাউফলের কৃষক পরিবার। ক্ষেতের ধান কাটার উপযুক্ত সময় আরও অন্তত ১৫ দিন সামনে থাকলেও শীষকাটা লেদা পোকার আক্রমণ থেকে সামান্য রেহাই পেতে আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন কৃষকরা। ধানের ক্ষেতে চোখ জুড়ানো সোনালী-হলদেভাব আসতে শুরু করেছে মাত্র। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতির পরে কীটনাশকেও ভাল ফল না পাওয়ায় এবার শীষকাটা লেদা পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে আধা-পাকা ধান কাটতেই ব্যাস্ত হয়েছেন কৃষকরা। গ্রামের চাষি হারুন রাঢ়ী, শাহআলম, আহেদ রাঢ়ী, আলতু রাঢ়ী ও তালতলী গ্রামের ছোবহান হাওলাদারসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ও বিচ্ছিন্ন চন্দদ্বীপের কৃষক-কৃষাণীদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, শীষকাটা লেদা পোকার আক্রমণে আশানুরূপ ফলন পেতে হতাশার কথা। ক্ষেতের আধা-পাকা ধান কাটার কারণ জানতে চাইলেই ধান্দী গ্রামের পারুল বেগম বলেন, ‘১৬-১৭ বছর আগে স্বামী মরছে। হ্যারপর থাকইক্কা উপায়-অন্ত না পাইয়া স্বামীর কৃষি কামডা ধইরগ্যা রাখছি। এই কামে এ্যাহন পোলাপান, নাতী-নাতনী লইয়া প্যাড চলে না। ধানগুলি চিডা অইতে না যদি ঝড়ে না পিডাইতে। আর ধানডা যদি আরো পোনের দিন পর দাইতাম, তায় মোনে করেন যে, ধানডা আমার আগাগোরা হোমান অইয়া ওঠতে। ফলন বেশি অইতে। ৩০ হাজার টাকা চাষে খরচ অইছে। এহন ১৫ মণ ধান পাইলে ৫শ’ টাহা করইগ্যা ৭ হাজার ৫শ’ টাহা ওঠবে। ‘বুলবুল আর ধানকাডা এই পোকাগুলায় সর্বনাশ করছে। এন্ডিনেও মরে না।’ সুলতানাবাদ গ্রামের মোসলেম দেওয়ান জানান, ‘বাজারের ওষুধেও কোন কাজ করে নাই। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে এবার বৃষ্টিপাতের কারণে সঠিক সময়ে শুকাতে পারেনি ধান ক্ষেত। ফাজিলপুর গ্রামের চাষি মোতাহার আকন জানান, এবার পোঁকার আক্রমন ছাড়াও আমন মৌসুমের শুরুতেই ধানের বাজার দরেও কৃষকরা হতাশ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তর বাজার কালাইয়া গত সপ্তাহে আগাম জাতের ইরি ধান ৪শ’ থেকে ৪শ’ ৫০ টাকা ও শাইল ধান সাড়ে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়। নিমদী গ্রামের আব্দুল আলী মাতবর নামে এক কৃষকের প্রতিমণ ধান ৬৫০ টাকা হিসেবে ৫০ মণ ধানের বায়না করেও হাটে দাম না ওঠায় স্থানীয় একজন ধান ও বায়নার টাকা ফেরত না নিয়েও কেটে পড়েছেন ক্ষতি এড়াতে, সস্তায় ধান কিনবেন কেবল এই ভরসায়। আগাম জাতের আধা-পাকা ইরি-৪০ ও শাইল ধান কেটে মাড়াইয়ের পর বিক্রি করতে হাটে এসে দর ভাল না পেয়ে ধান বোঝাই ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ঘুরিয়ে বাড়ি ফিরে যান ভরিপাশা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব চাষি সেলিম গাজী। আমনের মৌসুমের বাম্পার ফলনের আশা দক্ষিণ সুলতানাবাদ গ্রামের বর্গা চাষি সেরাজ মাতবরের। কিন্তু লেদা পোকার অক্রমণে হতাশ তিনিও। তিনি জানান, জমির মালিকের সঙ্গে পাবেন তিনি তেভাগার অংশ। অন্যান্য জিনিস পত্রের তুলনায় ধানের দর না বাড়লে ছেলেমেয়ে নিয়ে তেল, লবন, পিয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, জুটিয়ে দু’বেলা সারা বছর খেতে পারবেন না তিনি। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলায় মোট ৩৬ হাজার ১শ’ ৯০ হেক্টর জমি আমন চাষের আওতায় এসেছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে উপসী জাতের ৭০৩ হেক্টর রোপা আমন। আংশিক ক্ষতির পরিমান ৫০৮৩ হেক্টর। যার শতকরা পরিমান ১৩. ৮২%। স্থানীয় জাতের আবাদ হওয়া ১৬ হাজার ৬শ’ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৯৫০০ হেক্টর। সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে ৬৮৫ হেক্টর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪ হাজার ৫৬৫ হেক্টর, যার শতকরা পরিমান ১৫%। চিটার পরিমাণ বেড়ে কেবল রোপা আমনের ক্ষতি ৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এবার শীষকাটা লেদা পোকার অক্রমনে উচু জমির আমনের ক্ষতি হচ্ছে। তবে এখনো যে সব জমিতে পানি আছে সে সব জমিতে আক্রমন হয়নি। আমাদের লোকজন লিফলেট বিতরণসহ মাঠে কৃষকদের সচেতন করে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এ উপজেলা থেকে এ বছর ১ হাজার ৪০ টাকা মণ হিসেবে (২৬ টাকা কেজি) ২৫৬৪ টন ধান কেনার সিদ্ধান্তের নিয়েছে সরকার। চার হাজার কৃষকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামি ১০ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও