শ্রীমঙ্গল রেল লাইনের স্লিপারগুলো যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’
শত বছরের পুরনো রেললাইন, ব্রিজ ও ত্রুটিপূর্ণ লাইন দিয়েই বছরের পর বছর ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন। গুরুত্বপূর্ণ এ যোগাযোগ ব্যবস্থাটি লাইনে স্লিপারগুলো যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়ে আছে।সরজমিন দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট রেলপথের সাতগাঁও রেলওয়ে স্টেশন এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে যাত্রীরা দেখলে হয়তো এই পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতেন না। হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে মৌলভীবাজার পর্যন্ত প্রতিটি স্থান মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়ে আছে।শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ২৮২/৭ থেকে ২৮২/৬ পর্যন্ত রেল লাইনের ১৩৪টি স্লিপারে ৫৩৬টি স্লিপার থাকার কথা থাকলে এখানে রয়েছে ৩৮৪টি নাট-বলটু। কোনটাতে একটি, আবার কোনটাতে একটিও নেই। অনেক স্থানে কাঠের উপর থেকে লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও ঘুণ-পোকায় খেয়ে পেলেছে কাঠের স্লিপার। নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ কঙ্ক্রিটও। দেখলে মনে হবে এই লাইন দিয়ে হয়তো বেশ কয়েক বছর ধরে রেল চলে না। অভিযোগ রয়েছে- ঢাকা-সিলেট রেলপথের সাতগাঁও রেল স্টেশন ও মৌলভীবাজার অংশে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এখানেই যাত্রী উঠানামার মতো কোনো জায়গা নেই। রেল সড়কের উভয় পার্শ্বে গর্ত ড্রেন কাদা ও আগাছা বনজঙ্গল যার কারণে বর্তমানের উন্নয়নের ছোঁয়া এই রেল স্টেশনে নেই। তা ছাড়া এই রেলওয়ে স্টেশন এলাকার এক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে অবৈধ দখল। এ বিষয়ে এলাকাবাসী বাংলাদেশ রেলওয়ে/ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী, মহা ব্যবস্থাপক পূর্ব বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম বরাবর একটি আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। তারা জানান, ত্রুটির কারণে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটলেই দিনব্যাপী সারা দেশের সঙ্গে বন্ধ হয়ে পড়ে সিলেটের রেল যোগাযোগ। দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাজার হাজার যাত্রীকে। আবার দুর্ঘটনা কবলিত স্থানটিতে জোড়াতালি সংস্কার করেই পুনরায় চালু করে দেয়া হয় যোগাযোগ। স্থায়ী সমাধানের চিন্তাই যেন কর্তৃপক্ষের মাথায় আসে না। অন্যদিকে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত তিন বছরে অন্তত ২০-২৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা-সিলেট রেলপথে। চলতি বছরের ২রা জুন সকালে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার রশিদপুরে ‘কুশিয়ারা’ ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এতে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৬ ঘণ্টার দুর্ভোগ দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে ৬ই এপ্রিল সিলেটের মাইজগাঁওয়ে মালবাহী একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ সময় সিলেট থেকে ছেড়ে যায় যাত্রীবাহী ‘উপবন এক্সপ্রেস’ মোগলাবাজার স্টেশনে আটকা পড়ে। দুর্ভোগে পড়েছেন এই যাত্রীদের। জানা যায়, ঢাকা-সিলেট রেলপথটি ব্রিটিশ আমলের তৈরি। ঢাকা থেকে ভৈরব পর্যন্ত ডবল লাইন স্থাপন করা হলেও ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত রাস্তাটি রয়েছে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। পুরনো এই পথটিতে মাঝে মধ্যে সংস্কার করা হলেও অধিকাংশ স্থানের অবস্থাই অত্যন্ত নাজুক। আর ব্রিজগুলোর কথাতো বর্ণনা করার মতো না। নড়বড়ে এই রুটের প্রতিটি ব্রিজতে ট্রেন উঠলেই কাঁপতে শুরু করে।সচেতন মহলের দাবি, শুধুমাত্র ঢাকা-সিলেট রেলপথে যে পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে তা সম্পূর্ণ দেশের রেল পথেও ঘটে না। কখনো পাহাড়ি ঢলে রেল লাইনের নিচ থেকে মাটি সড়ে যায়। আবার কখনো ব্রিজ ভেঙে যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ঘটে লাইনচ্যুতের ঘটনা। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে খুব দ্রুতই রেল লাইনগুলোসহ সব ধরনের সমস্যাগুলো কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে সমাধান করেন।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- রেল লাইন
- সিলেট জেলা