কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা বিষয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন সম্ভব হলে তা উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষায় অবদান রাখবে বলে মনে করেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী অ্যালিস জি. ওয়েলস। যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়ক সাব-কমিটিতে দক্ষিণ এশিয়ায় মানবাধিকার বিষয়ে একটি জবানবন্দিতে তিনি এমন মতামত দেন। এতে তিনি বলেন, একাধিক সমমনা অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচন অবাধ কিংবা সুষ্ঠু হয়নি। ওইসব নির্বাচনের আগে  সিভিল সোসাইটি, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতি পুলিশি নিপীড়ন এবং ভয় ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি পূর্ণমাত্রায় শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় উন্নতি করা সম্ভব হলে তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ইচ্ছা পূরণে সরাসরি অবদান রাখবে বলেও মনে করেন ওয়েলস। সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন মার্কিন সহকারী মন্ত্রী। জি. ওয়েলস এর জবানবন্দির পূর্ণ তরজমা নিচে দেয়া হলো:   বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত। তার সহিষ্ণুতা, বিচিত্রতা এবং সেইসঙ্গে একজন নারী সরকার প্রধান হিসেবে তার গর্ব রয়েছে। বিশ্বের অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি দৃষ্টান্ত। উপরন্তু, অর্থনীতির উন্নয়নে এবং দারিদ্র্যবিমোচনে যথেষ্ট ভালো অগ্রগতি করেছে। এখন যদি গণতন্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন সম্ভব হয়, তাহলে তা তার উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষায় অবদান রাখবে।গত এক দশকে বাংলাদেশ সমাজ স্বাস্থ্যবান এবং সমৃদ্ধতর হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে দেশটি তার এলডিসি মর্যাদা ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ ৭ শতাংশের বেশি জিডিপির প্রবৃদ্ধি রক্ষা করতে পেরেছে এবং লিঙ্গ সাম্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সামাজিক উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। যদিও পাঁচজন বাংলাদেশির মধ্যে একজন দারিদ্র্যসীমায় বাস করেন। কিন্তু সেটাও গত দুই দশক আগে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর অবস্থা থেকে একটি উল্লেখযোগ্য দারিদ্র্য হ্রাস নিশ্চিত করছে। এই সময়ে অন্য যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটেছে, তার মধ্যে রয়েছে শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস এবং মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি ৫০ ভাগ বেড়ে যাওয়া।আমরা অবশ্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং দেশটির গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা অব্যাহতভাবে বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোকে কাজ করতে দেয়া, অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলোকে অবাধে তাদের মতামত প্রকাশ করতে দেয়া এবং গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় রাজনৈতিকবিরোধী দলকে তার আইনসঙ্গত ভূমিকা রাখতে দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। সংকুচিত হয়ে পড়া পরিবেশ এবং নিষেধাজ্ঞামূলক খসড়া নিয়ম-কানুনের কারণে সিভিল সোসাইটি হুমকিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এসবের কারণে এমনকি তারা রোহিঙ্গা সংকটের মোকাবিলায় নিয়োজিত কর্মীসহ জনগণের কাছে সমালোচনার মুখে পড়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কারণে সাংবাদিকরা সেলফ সেন্সরশিপ চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালে জারি করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের লক্ষ্য ছিল সাইবার অপরাধ দমন করা। কিন্তু এর মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা সংক্রান্ত কিছু বিষয় আইনানুগভাবে ক্রিমিনালাইজ বা দণ্ডনীয় করা হয়েছে।এসবের অবসানে, আমরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনের উন্নয়নে এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার মধ্যে একটি উত্তম ভারসাম্য সৃষ্টি করার জন্য কাজ করছি। এর মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রমনীতি বিষয়ে নিয়মিতভাবে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করা। আমরা বাংলাদেশে নেতৃবৃন্দের প্রতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাতে আহ্বান জানিয়েছি। একাধিক সমমনা অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচন অবাধ কিংবা সুষ্ঠু হয়নি। এবং আমরা এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি যে, ওইসব নির্বাচনের আগে  সিভিল সোসাইটি, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতি পুলিশি নিপীড়ন এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা একইসঙ্গে সারা বাংলাদেশে যাতে শাসনগত উন্নয়ন ঘটে, সেজন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে সহায়তা দিয়েছি।  মানবপাচার রোধে যাতে বিশেষ আদালত গঠিত হয়, সেজন্য আমরা বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে উৎসাহিত করেছি।বাংলাদেশের নিজস্ব উন্নয়ন চাহিদা মেটানোয় টানাপড়েন সত্ত্বেও  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের আগস্টে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর জন্য দেশের সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন। এই বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের তরফে স্বীকৃতির দাবি রাখে। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আশ্রয়দানের ঘটনায় বাংলাদেশের ওপর একটি প্রকৃত প্রভাব সৃষ্টি করেছে। কারণ বাংলাদেশ সব থেকে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের অন্যতম। বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী, কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে সংখ্যালঘু করে দিয়েছে। এখন দুজন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর বিপরীতে একজন স্থানীয় এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপস্থিতির কারণে স্থানীয় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। প্রতিবেশের ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মতো স্থানীয়দের ভবিষ্যৎও হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। তবে এই  মানবিক সংকট মোকাবিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের পাশে পুরোভাগে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ৬৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। আমরা যেহেতু ইতিমধ্যেই জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিয়েছি এবং আমরা একইসঙ্গে মনে করি যে, রোহিঙ্গাদের জন্য আনান কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, বার্মাকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের অধিকার দেয়া এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী, নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌনঃপুনিকভাবে স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের মতে একটি অনুকূল সমাধান হিসেবে সমর্থিত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে তাদের পাঠানো স্থগিত রাখার জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাই।আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সন্ত্রাস দমন, দ্বিমুখী বাণিজ্য, উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনসহ সাত লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে এক মুখ্য অংশীদার হিসেবেই গণ্য করে। আমরা গুরুত্ব আরোপ করতে চাই যে, গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি পূর্ণমাত্রায় শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় উন্নতি করা সম্ভব হলে সেটা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ইচ্ছাপূরণে সরাসরি অবদান রাখবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও