কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

স্বাস্থ্যের টাকার কুমিরদের ধরতে তৎপর দুদক

মানবজমিন প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত কয়েক মাসে এসব কর্মকর্তার দুর্নীতির খবর ফাঁস ও অভিযোগ প্রমাণ পাওয়ার ভিত্তিতে একাধিক মামলা করে সংস্থাটি। তবে এখন পর্যন্ত টাকার কুমির হয়ে যাওয়াদের অনেকেই অধরা রয়ে গেছেন। অবশ্য তাদের গ্রেপ্তারে বেশ তৎপরও দুদক। সংস্থাটি বলছে, যেকোনো সময় মামলার আসামিরা জালে ধরা পড়বে। এরই মধ্যে অবশ্য সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন তাওহীদুর রহমান আত্মসমর্পণ করলে তাকে আদালত কারাগারে প্রেরণ করেন। এছাড়া তার কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক আনোয়ার হোসেন আত্মসমর্পণ করেন। তবে, এ পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা কেউ গ্রেপ্তার হননি। বিশেষ করে, চলতি বছর আলোচিত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খাতুনের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া এই দম্পতির বিরুদ্ধেও মামলা করেছে দুদক। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। তাছাড়া যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কেউ দুদকের চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না। দুদক এ বিষয়ে বেশ তৎপর। দুদকের একটি সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত দুর্নীতির মামলায় আসামিরা ছাড়াও সংস্থাটির নজরে স্বাস্থ্যের আরো ডজনখানেক কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে। সূত্র জানায়, গত এপ্রিল মাস থেকে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগে ২৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুদক। এর মধ্যে কক্সবাজার মেডিকেলে দুর্নীতির দায়ে আবজাল দম্পত্তিসহ ১০ জন, সাতক্ষীরায় সিভিল সার্জনসহ ৯জন এবং রংপুর মেডিকেলের অধক্ষ্যসহ ৬জন রয়েছেন। গত ২৬শে এপ্রিল কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে সরকারের সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার সাবেক হিসাবরক্ষক আবজাল ও তার স্ত্রীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শহিদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন-কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. মো. রেজাউল করিম (অবসর), অধ্যাপক ডা. সুবাস চন্দ্র সাহা, চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন এবং লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল রশিদ, রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মিসেস রুবিনা খানম, কক্সবাজার জেলার হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা সুকোমল বড়ুয়া, এসএএস সুপার সুরজিত রায় দাস (অবসরপ্রাপ্ত), কক্সবাজার জেলার হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা পংকজ কুমার বৈদ্য, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের হিসাবরক্ষক হুররমা অকতার খুকী, চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়নের সাবেক উচ্চমান সহকারী মো. খায়রুল আলম (বর্তমানে প্রধান সহকারী)। দুদক জানায়, অনুসন্ধানে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয় সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সংশ্লিতা পাওয়া যায়। রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম যাচাই করে ওই অনিয়মের তথ্য পায় দুদক। এই মামলায় আসামি দশজন হলেও বিশেষ করে আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের অঢেল সম্পদের তথ্য ফাঁস হওয়ায় সবচেয়ে বেশি নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। দুদকের তথ্য মতে, এই দম্পতির নামে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কেই তাদের ৪টি পাঁচতলা বাড়ি ও একটি প্লট রয়েছে। ১১ নম্বর সড়কের ১৬, ৪৭, ৬২ ও ৬৬ নম্বর বাড়িটি তাদের নামে। সড়কের ৪৯ নম্বর প্লটটিও তাদের। মিরপুর পল্লবীর কালশীর ডি-ব্লকে ৬ শতাংশ জমি, মেরুল বাড্ডায় আছে আরও একটি প্লট। মানিকদি এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন, ঢাকার দক্ষিণখানে আছে ১২ শতাংশ জায়গায় দোতলা বাড়ি। আবজালের নিজ জেলা ফরিদপুর শহরে টেপাখোলা লেকপাড়ে ফরিদের স’মিলের পাশে নিজে কিনেছেন ১২ শতাংশ জমি। ওই জমির প্রায় পাশাপাশি টেপাখোলায় ওই এলাকার কমিশনার জলিল শেখের আবাসন প্রকল্পে ৬ শতাংশ করে নিজে প্লট কিনেছেন দুটি। ফরিদপুরে ওইসব ভূ-সম্পদ ছাড়াও শহরের গোপালপুর এলাকার বনলতা সিনেমা হলের পাশে মাস্টার কলোনিতে ১৫ শতাংশ জায়গায় একটি একতলা বাড়ি ও ভাড়ায় চালিত ৩০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক এই আবজাল। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, গুলশান, বনানী ও বারিধারায় আবজালের বাবা-মা, ভাই-বোন ও নিকট আত্মীয়দের নামে ২০টিসহ সারাদেশে তাদের প্রায় শতাধিক প্লট ও বাড়ি রয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় ২ একর জমি, অস্ট্রেলিয়ায় ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা-বাড়ি, কানাডায় কেসিনোর মালিকানা-ফার্ম হাউজ এবং যুক্তরাষ্ট্রে হোটেল রয়েছে তার। অ্যাকাউন্টস অফিসার থাকা অবস্থায় আবজাল ব্যবহার করেছেন লেক্সাস গাড়ি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এসব সম্পদের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর আদালত এই দম্পতির সব সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয় দুদক। তবে মামলার ৫ মাস কেটে গেলেও তাদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এদিকে, গত ৯ই জুলাই হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার নামে প্রায় ১৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জনসহ ৯জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের তৎকালীন স্টোরকিপার এ কে এম ফজলুল হক, হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন, রাজধানীর ২৫/১ তোপখানা রোডের বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির কর্ণধার ঠিকাদার মো. জাহের উদ্দিন সরকার, তার ছেলে মো. আহসান হাবিব, জাহের উদ্দিনের বাবা মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার হাজী আবদুস সাত্তার সরকার, তার ভগ্নিপতি ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের কর্ণধার মো. আসাদুর রহমান, জাহের উদ্দিন সরকারের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি কাজী আবু বকর সিদ্দিক ও মহাখালী নিমিউ অ্যান্ড টিসির সহকারী প্রকৌশলী এ এইচ এম আবদুল কুদ্দুস। দুদক জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতির কোনো ধরনের চাহিদাপত্র না থাকা সত্ত্বেও যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেন। জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে দরপত্র আহ্বান, দরপত্র সংগ্রহ, দরপত্র মূল্যায়ন ও কার্যাদেশ দিয়ে তিনটি মিথ্যা বিলের বিপরীতে মোট ১৬ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৮২৭ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অপরদিকে, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির দায়ে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নুর ইসলামসহ ৬ জনের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে দুদক। ১২ই সেপ্টেম্বর রংপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে দায়েরকৃত ওই মামলার অন্য আসামিরা হলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সারোয়াত হোসেন, বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানির মালিক মো. জাহের উদ্দিন সরকার, তার পিতা মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুস সাত্তার সরকার, জাহের উদ্দিনের ছেলে আহসান হাবীব এবং বোন জামাই ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক আসাদুর রহমান। দুদক জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজে ভারী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন না নিয়ে ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য অধ্যক্ষ ডা. মো. নুর ইসলাম কর্তৃক বিধি বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে এবং যথাযথ চাহিদা ও সুনির্দিষ্টকরণ ছাড়াই দরপত্র আহবান করেন। পরবর্তীতে পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানিকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। ২০১৮ সালের ২৩শে জুন কার্যাদেশ প্রদান করেন। কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর শর্তানুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করলেও নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে বিল পাস করিয়ে ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা টাকা আত্মসাৎ করেন। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আসামিরা শর্তানুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের ব্যবহার অনুপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও