কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আসুন, ভাঙনের খেলাটা শুরু করি!

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর গায়ে লেখা থাকে, জন্ম থেকে জ্বলছি। বিশেষ করে ট্রাকের ইঞ্জিনের ওপর এই লেখাটি প্রায়ই দেখা যায়। অর্থটিও পরিষ্কার। অবিরাম ছুটে চলা ট্রাককে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে পৌঁছে দিতে ইঞ্জিনটিকেই জ্বলে পুড়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। শুধু কি ট্রাকের ইঞ্জিন? জন্ম থেকে জ্বলে চলেছেন তো আমাদের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীও! সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি তার গান- ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, আর কতো দিন বলো সইবো।’ দিনের পরে দিন যায়, বছর পেরোয়, পার হয়ে যায় যুগের পরে যুগও; তবু জ্বলা শেষ হয় না।আসলে তো জ্বলে চলেছি আমরা সবাই। ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ হয়ে যাওয়া এই দেশে ‘পাপেই’ কাটছে আমাদের দিনগুলো। অথচ কী এক মুগ্ধ জাদুকরের মর্মস্পর্শী ভাষণে আমরা মুক্তির গান গেয়েছিলাম! কী এক সুদিনের আশায় আমাদের সমস্ত বিসর্জনগুলো কেমন অনন্য মহাকাব্য রচনা করেছিল! শহীদের রক্তে, বোনদের অসহায়ত্বে, মায়েদের আর্তনাদে নির্মিত ’৭১ কী এক অপরাজেয় স্বপ্নের আল্পনা এঁকে দিয়েছিল আমাদের সামনের পথ চলায়। সেই পথেই আজ পাপের পাহাড়। পাপের অনলে জ্বলে চলা জীবন আমাদের। যে ছাত্রদের অকৃত্রিম আত্মত্যাগ মিশে আছে দেশের প্রতিটি মিছিলে, যে ছাত্রদের সাহসের দেয়াল লিখন হয়ে উঠেছে সংবিধান, যে ছাত্রদের ঘাম এবং রক্ত হয়ে উঠতো প্রতিবাদের প্ল্যাকার্ড; সেই ছাত্ররা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে চায় টেন্ডারের ‘ফেয়ার শেয়ার!’ বলে, “এখনকার দিনে ১-২ শতাংশের আলাপ কোথাও নেই। ৪-৬ শতাংশ ছাড়া কি হয়? এটি একটি বড় প্রকল্প। আপনি (ভিসি) আমাদের সহায়তা করলে, আমরাও আপনাকে সহযোগিতা করবো (ডেইলি স্টার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯)।” প্রজেক্টের ছয় শতাংশ ছাত্রলীগকে দিলে টাকার পরিমাণ হয় ৮৬ কোটি! প্রিয় পাঠক, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে একটি ছাত্র সংগঠনকে ৮৬ কোটি টাকা দিতে হবে! বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনের কী সম্পর্ক আছে? ছাত্র সংগঠনের কাজ তো ছাত্রদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখা। পৃথিবীর কোনো দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের আর্থিক ভাগবাটোয়ারা ছাত্রদেরকে দিতে হবে, এমন নজির নেই। এ কোন দেশ! এ কেমন সময়! এই টাকা কাদের টাকা? জনগণকে চুষে চুষে নেয়া ট্যাক্সের টাকায় নির্মিত হচ্ছে এমন বিলাসিতা। আমাদের কিছু বলবার নেই। শুধু জ্বলেই যাচ্ছি জন্ম থেকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, তার চেয়েও বড় পরিচয় তিনি একজন শিক্ষক, কীভাবে পারেন ছাত্রদের সঙ্গে অনৈতিক অসৎ লেনদেনের আলাপচারিতায় জড়াতে? অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্য টাকা ভাগবাটোয়ারা করার জন্য ছাত্রলীগের সঙ্গে মিটিং করেছেন নিজের বাসভবনে। আহা, শিক্ষকতা! আর সি মজুমদাররা এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন না। স্যার এ এফ রহমান কিংবা অধ্যাপক ফজলুল হালিম চৌধুরীরা থাকেন না ভিসি প্যানেলে। রাজনৈতিক ‘আনুগত্যে’ উত্তীর্ণ হওয়াই এই দেশে এখন বড় যোগ্যতা। অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য- কেউ এই চর্চার বাইরে নন। কিন্তু একজন শিক্ষক কেমন করে ছাত্রদের সঙ্গে অবৈধ টাকার লেনদেনে যেতে পারেন! পরিস্থিতি বাধ্য করলে পদত্যাগের রাস্তা তো খোলা থাকে। পদত্যাগ! এই দেশে! আমাদের কষ্টের টাকায় নির্মিত দুর্নীতির এক একটি ‘লজ্জাসৌধ’ গণমাধ্যমে কখনো কখনো প্রকাশিত হচ্ছে। পাবনার রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে একটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছিল ৬ হাজার টাকা। বিস্ময়ের সেই ঘোর কাটতে না কাটতেই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে একটি পর্দা কেনার জন্য ‘খরচ’ করা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা! পুকুর ও দীঘি কীভাবে খনন/পুনঃখনন করতে হয় সেই প্রশিক্ষণ নিতে ১৬ কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠাবে এই রাষ্ট্র, যাতে মোট খরচ হবে এক কোটি ২৮ লাখ টাকা! চট্টগ্রাম ওয়াসার ৪১ কর্মকর্তাকে নিরাপদ পানি বিষয়ে ‘প্রশিক্ষণ’ নেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে উগান্ডায়! এতে মোট ব্যয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। দুর্নীতির মহাসাগরে এগুলো শুধুই কয়েকটি বরফ-খণ্ড। বাংলাদেশে রাস্তা বানাতে প্রতি কিলোমিটারে বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি টাকা খরচ হয়। সেই রাস্তা আবার দুদিনেই যেই-সেই। রডের বদলে দেয়া হয় আস্ত বাঁশ! কিন্তু আমরা তো বাঁশ চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম বাঁশি! যে বাঁশি দিয়ে মুক্তির গান গাওয়া যায়। ৭ই মার্চের মহাকাব্যিক সেই ভাষণের অনুরণন চেয়েছিলাম বাঁশির সুরে সুরে। জন্ম থেকেই আমাদের যে অবিরাম দাহ, সেখানে একটুখানি প্রশান্তি চেয়েছিলাম। হলো না। বরং প্রতিটি নতুন দিন আসে নতুন বিভীষিকা নিয়ে। আরো জ্বলি, আরো পুড়ি। সৈয়দ হাদীর ঐ গানেই আছে, “এবার আদেশ করো, তুমি আদেশ করো; ভাঙ্গনের খেলা খেলবো।” তবে কি ভাঙ্গনেই মুক্তি? আসুন তবে, ভাঙ্গনের খেলাটা শুরু করি। এই অনিয়ম, এই অন্যায়, এই রাজনীতি সব ভেঙ্গে দিয়ে মুক্তির পথ রচনা করি। বিদ্যমান এই পদ্ধতি ভেঙ্গে ফেলতে না পারলে আমাদের দহন শেষ হবে না। আমরা আর কত জ্বলবো? আমাদের ঘামে ভেজা এক একটি পবিত্র টাকার এমন অপবিত্র ব্যবহার আমরা মেনে নিব না। আমরা আর সইবো না। এবার তবে শুরু হোক ভাঙ্গনের পালা, যেখান থেকে উঠে আসবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ।লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কলাম লেখকইমেইল: [email protected]

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে