গুপ্তধনের খোঁজে দুঃসাহসিক যাত্রা নিয়ে উপন্যাস ‘দ্য আলকেমিস্ট’। ছবি: সংগৃহীত
পাওলো কোয়েলহোর ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’
আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮, ১৯:৩৩
সান্তিয়াগো একজন রাখাল বালক। আন্দালুসিয়া শহরে ভেড়ার পাল নিয়েই যার বসবাস। তার মতে ভেড়াগুলো তার সব কথা বোঝে, তিনিও ভেড়াগুলোর দুঃখ বুঝতে পারেন। একদিন ভেড়াগুলোর উল বিক্রি করতে তিনি ভেড়াদের পাল নিয়ে রওনা হন, যাওয়ার পথে স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলতে পারে এমন এক নারীর কাছে যার। সেই নারী তাকে জানায়, মিসরের পিরামিডে একটা গুপ্তধন আছে, নারীটি সান্তিয়াগোকে বলেন, গুপ্তধন পেয়ে গেলে দশ ভাগের এক ভাগ যেন ওই নারীকে দেয়। রাখাল হলেও সান্তিয়াগো বইপাগল। তিনি টাকা জমিয়ে বিভিন্ন বই কেনেন।
যাওয়ার পথে এবার তার একজন বয়েসি সালেমের রাজা মেলসিজেদেকের সঙ্গে দেখা হয়, তাকে যখন ব্যাপারটা বলা হয় তখন তিনিও সান্তিয়াগোকে মিসরের পিরামিডেই গুপ্তধন আছে বলে জানান এবং সান্তিয়াগোর ভেড়ার দশ ভাগের এক ভাগ তাকে দিয়ে দিতে বলেন। সান্তিয়াগো দশ ভাগের এক ভাগ তাকে দেয় এবং বাকি ভেড়াগুলো তার এক বন্ধুর কাছে বিক্রি করে দেন।
বুড়ো লোকটা এবার তাকে গুপ্তধন পাওয়ার রাস্তা বলে, নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শেখায়, জীবনের লক্ষ্যটা নতুন করে ঠিক করে দেন। লোকটা তাকে সাদা-কালো দুটা পাথর দেয়, যেগুলার নাম উরিম এবং থুমিম। লোকটা বলে পাথরগুলো তাকে তার লক্ষ্য নির্ধারণের সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ‘হ্যাঁ’, ‘না’ বলে সাহায্য করবে। বুড়োটা তাকে বলেন. ‘যখন তুমি কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা করবে তখন পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তা পাইয়ে দেওয়ার জন্য ফিসফাস শুরু করে দেবে।’
আফ্রিকার তাঞ্জিয়ার শহরে যেয়ে গাইড হিসেবে তিনি একটি বালককে সঙ্গে নেন। বালকটিকে টাকা দেখানোর পর তিনি তাকে আশ্বাস দেন পিরামিডে পৌঁছে দেবেন। নতুন শহরে এমন কাউকেই খুব বিশ্বাস করে ফেলেন সান্তিয়াগো।
একটি বাজারে ঘুরতে ঘুরতে সান্তিয়াগোর চোখ একটা তলোয়ারের দিকে আটকে যায়। বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে যখন তিনি তলোয়ারটির কথা জিজ্ঞেস করতে বলেন তখনই দেখে বন্ধুটি নেই। নতুন শহরে তিনি সবকিছু হারিয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে পড়ে্ন। একটি বই, একটি ভারী জামা আর বুড়ো লোকটার দেওয়া দুটো পাথর ছাড়া সান্তিয়াগোর কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। গুপ্তধনের সন্ধানে বেরিয়ে একে-একে সান্তিয়াগো বিপদে পড়তে থাকেন, তবুও তার লক্ষ্য থেকে পিছে হটেননি।
ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহোর লেখা ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ বইটির প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত
সেখানেরই এক স্ফটিক ব্যবসায়ীর দোকানে সান্তিয়াগো কাজ করা শুরু করেন। সান্তিয়াগোর পরিকল্পনা অনুযায়ী চলাতে স্ফটিক ব্যবসায়ীর অনেক লাভ হতে থাকে। সেখানে এগারো মাস নয় দিন কাজ করে অল্প-অল্প করে টাকা জমিয়ে আবারও সান্তিয়াগো তার স্বপ্ন সত্যি করার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। এবারের যাত্রায় অনেকজন মিলে মিসরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। যাওয়ার পথে তার পরিচয় হয় একজন ইংরেজের সঙ্গে। যিনি একজন অ্যালকেমিস্টের খোঁজে পাগল হয়ে আছেন। ক্যারাভান সকালে যাত্রা শুরু হয় যাত্রা, সূর্যটা মাথার উপর এলে থামে, বিকেলে আবার চলা। কিছুদিন পর তারা জানতে পারে গোত্রে-গোত্রে যুদ্ধের গুজব ছড়িয়ে গেছে। উটচালক বলে ওঠেন 'একবার মরুভূমিতে ঢুকে পড়লে আর ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।’
যুদ্ধের কারণে তারা আর সামনে এগোতে পারেন না, মরূদ্যানে থেমে যান। সেখানে সান্তিয়াগো এক নারীর প্রেমে পড়েন এবং মনস্থির করেন, এ নারীকেই তিনি বিয়ে করবেন। সেই নারীকে স্বপ্নের কথা জানানোর পর তিনি তাকে স্বপ্নপূরণ করে ফিরে আসতে বলেন।
এক রাতে সান্তিয়াগো অ্যালকেমিস্টের দেখা পেয়ে যান, যে সত্যি-ই এক অন্য রকম জাদুকর। অ্যালকেমিস্ট সান্তিয়াগোকে তার স্বপ্নপূরণে পুরোপুরি সাহায্য করার আশ্বাস দেন। দুজন দুটো ঘোড়ার পিঠে চড়ে রওনা দেন মিসরের উদ্দেশে। মাঝপথে আবারও অনেক বাধা-বিপত্তি আসে, পদে-পদে তাদের বাধা আসতে শুরু হয়। বাধাগুলো তারা বিভিন্ন উপায়ে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। তারও কিছুদিন পর বিকেলের শেষভাগে এক ধর্মশালায় নেমে অ্যালকেমিস্ট সান্তিয়াগোকে বলেন, ‘এখান থেকে তুমি একা যাবে, পিরামিড আর মাত্র তিন ঘণ্টার পথ।’
এক মাস হয়েছে আফ্রিকা থেকে মিসরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন সান্তিয়াগো। এর মাঝেও তাকে অনেক কঠিন কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে। অবশেষে তিনি পৌঁছে যান তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের কাছে। সামনেই দেখা যাচ্ছে পিরামিড, হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন তিনি, কান্না শুরু করে দেন, অতঃপর তিনি খোঁড়া শুরু করেন কিন্তু গুপ্তধন খুঁজে পান না। হঠাৎ কিছু মানুষের আওয়াজ পান তিনি। তারা সান্তিয়াগোর অবশিষ্ট সম্পদগুলোও নিয়ে নেয় এবং মারা শুরু করে।
সান্তিয়াগো তাদেরকে তার স্বপ্নের কথা জানান। তারা হেসে উড়িয়ে দেয় এবং যাওয়ার সময় বলে যায়, ‘স্বপ্নে এত বিশ্বাস করো কেন? দু’বছর আগে আমিও এখানে শুয়ে একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, আন্দালুসিয়ায় একটা ভাঙা গির্জা আছে, সেটা বেয়ে একটা গাছ উঠেছে এবং সেখানেই আছে গুপ্তধন, কিন্তু এসব আজেবাজে স্বপ্নের এত মূল্য দিতে হয় না।’
সান্তিয়াগো হেসে ওঠেন, কারণ তিনি জানেন কোথায় আছে গুপ্তধন। যে আন্দালুসিয়া থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন আবারও সেখানে ফিরে যান এবং ভাঙা গির্জাটার কাছে মাটি খুঁড়ে পেয়ে যান তার গুপ্তধন।
পৃথিবীব্যাপী ২৫ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয় পাওলো কোয়েলহোর ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ বইটি এবং অনূদিত হয় অর্ধশতাধিক ভাষায়।
প্রিয় সাহিত্য/তাশফিন ত্রপা/আজাদ চৌধুরী