কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

‘মেমসাহেব’ উপন্যাসের প্রচ্ছদ। ছবি: লেখক

অনুপ্রেরণার নাম ‘মেমসাহেব’

এম এম হাসান
সহকারী ব্যবস্থাপক (এইচআর), নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড
প্রকাশিত: ০২ মে ২০১৮, ১৭:৩৯
আপডেট: ০২ মে ২০১৮, ১৭:৩৯

বাংলা কথাসাহিত্যের এক অমর রোমান্টিক উপন্যাস ‘মেমসাহেব’। ঔপন্যাসিক নিমাই ভট্টাচার্য পেশায় একজন সাংবাদিক হলেও অকল্পনীয় দুঃখ-কষ্টে মানুষ হওয়া এই সাহিত্যিকের সব ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসলই যেন ‘মেমসাহেব’ উপন্যাসটি। ব্যক্তিগত জীবন আর কল্পনার বাস্তবের মিশেলে রচিত এই উপন্যাসটির মেমসাহেব চরিত্রটি যেন বাংলার সব প্রেমিকের নয়নের মনি।

‘প্রহর শেষের আলোর রাঙা সেদিন চৈত্র মাস 
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’ 

যারা প্রেম করেছেন এবং করবেন তাদের জন্য এই বাক্যযুগল একটি পথ্য হিসেবে গণ্য হতে পারে। সরস সংলাপগুলো মনে দাগ কাটবে আজীবন।

এটি একটি পত্রোপন্যাস। উপন্যাস শুরু হয় বাচ্চু নামের এক সাংবাদিকের তার দোলা বৌদির কাছে চিঠি লেখার মধ্য দিয়ে। এই বাচ্চু হলেন আমাদের নিমাই ভট্টাচার্য। চিঠিতে লেখক তার কষ্টকর জীবনের উত্থানের পেছনে একজন কালো রমণী কতটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা-ই লিখেছেন।

সেই নাম না জানা রমণীকে পুরো উপন্যাসে লেখক মেমসাহেব নামে সম্বোধন করেছেন, যার কারণ উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত অজানাই থেকে যায়। লেখকের জীবন যখন নানাভাবে বিপর্যস্ত, যখন কোনো রং নেই, ঠিক সে সময় হঠাৎ করেই মেমসাহেবের উত্থান।

মেমসাহেবের সাথে লেখকের প্রথম দেখা হয় ট্রেন ভ্রমণের সময়। সেই সময়টাতেই লেখক আর মেমসাহেব আবদ্ধ হয়ে পড়ে প্রেমের বন্ধনে। ঠিক যেন বাংলা সিনেমার Love at First Sight। তারপর,আস্তে আস্তে লেখক আর মেমসাহেবের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। এতটাই দৃঢ় যে, ভবিষ্যতের চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেও মেমসাহেব লেখককে ছেড়ে যায় না, বরং প্রেমিকা হয়েও তাকে সাহস জোগায়, ভরসা দেয় একজন যোগ্য সহধর্মিণীর মতো।

একজন সফল পুরুষের পেছনে যে একজন নারীর অবদান থাকে, তা স্পষ্টভাবেই এই উপন্যাসে বোঝা যায়, যখন আমরা বাচ্চুর সফল সাংবাদিক হয়ে উঠা থেকে লেখক হওয়া আর সব স্বপ্ন পূরণ হওয়া দেখি।দুজনার পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেও তারা সময় করে কলকাতা, দিল্লি, জয়পুরের স্নিগ্ধ জায়গাগুলোতে হারিয়ে যেত একে অপরের ভালেবাসায়। অথচ একসময় এই উত্তাল ভালোবাসার সময়ে আসে নতুন মোড়, যা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে লেখকের জীবনে।


খোকন নামে এক ছেলেকে মেমসাহেব ভাইয়ের চেয়ে বেশি ভালবাসতেন। রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল খোকন। পুলিশ তাকে ধরেও নিয়ে গেছে একবার। একদিন চরম দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ল। খোকন গুলিবিদ্ধ হয়েছে শুনে মেমসাহেব রাতের আঁধারেই ছুঁটে গেলেন। একটু গুলি মেমসাহেবের বুকে বিদ্ধ হলো। সাংবাদিক বাচ্চু তখন সরকারি সফরে লাদাখে গেছেন। সীমান্তবর্তী এই লাদাখ তখন বরফে প্রায় ঢাকা পড়েছে। কোনো যোগাযোগ নেই মেমসাহেবের সাথে। ফিরে এসে জানতে পারেন, মেমসাহেব তাকে ফাঁকি দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে।

গ্রিন পার্কের ৩ রুমের যে বাসা বাচ্চু সাজিয়ে ছিলেন মেমসাহেবের জন্য; সে বাসায় বউ হয়ে যেতে পারলেন না মেমসাহেব। একটি ট্র্যাজিক পরিণতি ঘটে এই উপন্যাসে, যা লেখকের বাস্তব জীবনে ঘটেছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ

* শিক্ষিতাই হোক আর অশিক্ষিতাই হোক, প্রেমপত্র সেন্সর করতে মেয়েরা তো শিরোমনি। 
* মানুষের জীবনে প্রথম ও প্রধান নারী হচ্ছে মা।
* ফুল হাতা শার্টের হাতা না গুটিয়ে পরলে বোকা বোকা মনে হয়। 
* সীতার গর্ভেই বোধহয় বাঙালির পূর্বপুরুষদের জন্ম। তা না হলে সমগ্র বাঙালি জাতি এমন অভিশাপগ্রস্ত কেন হলো ? 
* হাসপাতালে হাসিখুশি ভরা নার্সদের কত আপন, কত প্রিয় মনে হয়। কিন্তু হাসপাতালের বাইরে? সমাজ জীবনের বৃহত্তর পরিবেশে? ক’জন পারে তাদের আপন জ্ঞানে সমাদর করতে? 
* Truth is stranger than friction 
*পৃথিবীর ইতিহাস কি শুধু পুরুষদের বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনীতেই ভরা?
* মানুষের মন লজিকের প্রফেসর বা বিচারকের পরামর্শ বা উপদেশ মেনে চলে না। 
*জীবনে যে ভালোবাসা পায়, সে আর কিছু পায় না; যে জীবনে আর সব কিছু পায়, সে ভালোবাসা পায় না। 
* জগন্নাথঘাটে রজনীগন্ধার পাইকারি বাজার দেখে কোনো কবির কাব্যচেতনা জাগবে না; কিন্তু প্রেয়সীর সঙ্গে একটু রজনীগন্ধার সজ্জা অনেকের মনে দোলা দেবে। ঝুড়িবোঝাই রজনীগন্ধার চাইতে লম্বা ফ্লাওয়ার ভাসের মধ্যে দু'চারটে স্টিক দেখতে অনেক ভালো লাগে। 
* আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলেই বৃষ্টিপাত হয় না; সে কালো মেঘে জলীয়বাষ্প থাকা দরকার।                                                                                                                                                                         

[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রিয়.কম লেখকের মতাদর্শ লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে প্রিয়.কমের সম্পাদকীয় নীতির মিল না- থাকতে পারে।]