কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর

বসুন্ধরার এমডি সায়েম এখন কোথায়?

প্রিয় ডেস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:৩৫
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:৩৫

কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ‘আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা’র আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। কিন্তু তিনি দেশে আছেন নাকি দেশত্যাগ করেছেন, এই নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। যদিও এ বিষয়ে পুলিশ বা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কারও কাছেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের অভিজাত এক ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি ‘আত্মহত্যা প্ররোচনা’ মামলা করেন। এ মামলায় একমাত্র আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। নুসরাত অভিযোগ করেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মুনিয়ার সঙ্গে সায়েম সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু বিয়ে না করে উল্টো হুমকি দেওয়ায় মুনিয়া ‘আত্মহত্যা’ করেন। 

দেশত্যাগের বিষয়ে কোনও তথ্য পুলিশের কাছে নেই—ঢাকা ট্রিবিউন

সায়েম দেশত্যাগ করেছে কি না, এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ঢাকা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, সায়েম সোবহান আনভীরের দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনও তথ্য জানা নেই। 

বাংলাদেশ ও স্লোভাকিয়া দুই দেশের পাসপোর্ট অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী দেশ ছেড়ে যাননি আনভীর, এমন দাবি করেছেন ইমিগ্রেশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা জানান, কার্গো ফ্লাইটে করে লুকিয়ে দেশত্যাগ ছাড়লে তা ইমিগ্রেশনের নিয়ন্ত্রণের থাকে না। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তা বলতে পারবে।

যদিও এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান। তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে, ‘কার্গো বিমানে কারও পক্ষে বিমানবন্দর ত্যাগ করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, বসুন্ধরার এমডি দেশত্যাগ করেছে, এ ধরনের তথ্য যারা দিলো তাদেরই বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত। এ ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানোর মানে নেই।’

বসুন্ধরা এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা—দ্য ডেইলি স্টার

২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের করা আবেদন মঞ্জুর করেন।

গুলশান থানার নিবন্ধন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে মঙ্গলবার বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেছিলেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল হাসান। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। সেই সঙ্গে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন— সায়েম সোবহান আনভীর যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন।’

আগাম জামিন পেতে হাই কোর্টে বসুন্ধরা এমডি সায়েমের আবেদন—বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

আনভীরের দেশ ছাড়ায় বিচারিক আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরদিন বুধবার হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদনের খবর পাওয়া যায়।

বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকায় ১৪ ক্রমিকে তার আগাম জামিনের আবেদনটি শুনানির জন্য এসেছে।

মুনিয়ার ফ্ল্যাটে যাতায়াত ছিল আনভীরের: পুলিশ—বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

মামলায় তদন্তে নেমে ভবনটি থেকে উদ্ধার করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ দাবি করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ চন্দ্র চক্রবর্তী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই ফ্ল্যাটে তার (আনভীর) যাতায়াত ছিল, সে ব্যাপারে সংগৃহীত ফুটেজে প্রমাণ মিলেছে। তবে ঘটনার দিন তার যাওয়ার কোনো প্রমাণ ফুটেজে পাওয়া যায়নি।”

কী আছে মুনিয়ার লেখা ছয়টি ডায়েরিতে—প্রথম আলো

গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেছেন, মোসারাত জাহানের (মুনিয়া) নিজ হাতে লেখা ছয়টি ডায়েরি আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। পুলিশ ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দেওয়ার চেষ্টা করছে। মামলাটিকে আদালতে প্রতিষ্ঠিত করতে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

২৮ এপ্রিল বুধবার নিজ কার্যালয়ে সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মামলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হবে ডায়েরিগুলো। গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ ছয়টি ডায়েরি উদ্ধার করেছে।

ঘটনার শিকার নারীকে হতাশা গ্রাস করেছিল, তিনি মারাত্মক মনঃকষ্টে ছিলেন। ডায়েরির পাতায় পাতায় মানসিক বিপর্যস্ততার প্রমাণ আছে। মানসিক বিপর্যয়ের মুখেই তাঁকে হয়তো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতি, দাম্পত্য জীবন নিয়ে তাঁর প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা, তাঁদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও পারিবারিক সমস্যার কথা লিখে গেছেন ভুক্তভোগী নারী। এই মামলা প্রতিষ্ঠায় ডায়েরি আদালতে জরুরি হবে। ডায়েরির তথ্য অনুযায়ী পুলিশ প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য গ্রহণ করবে।

এই মুহূর্তে পুলিশ সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গুলশানে তরুণীর মরদেহ উদ্ধার, মিডিয়ার নীতি নিয়ে প্রশ্ন—দ্য ডেইলি স্টার

গুলশানে এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে দেশের প্রথম সারির মিডিয়াগুলোর তুমুল সমালোচনা। ভিকটিমের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ, মামলায় অভিযুক্ত বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানের নাম এড়িয়ে যাওয়াসহ আরও নানা বিষয়ে সমালোচনায় সরব সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মগুলো।

সংবাদ প্রকাশের সময় মিডিয়াগুলো কি শেষ পর্যন্ত ভিকটিমের ওপরেই দায় চাপিয়ে দেয়? অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদপত্র কি আদৌ কোনো নীতি মানছে?

‘দুই বছর আগে আনভীরের সঙ্গে প্রেম হয় মুনিয়ার’—বাংলা ট্রিবিউন

মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় ফিরে নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় অরণী ভবনের ফ্ল্যাটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুবছর আগে থেকে বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্ক হয়। ওই সম্পর্কের পর তাদের মধ্যে অনেক কিছুই হয়েছে।’

আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে মামলা—প্রথম আলো

বাদী মামলার এজাহারে বলেন, মোসারাত জাহান মুনিয়া (২১) মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তাঁরা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালে মোসারাতকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আসামি রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে তাঁরা বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আসামির পরিবার এক নারীর মাধ্যমে এই প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। এরপর আসামির মা মোসারাতকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং তাঁকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। আসামি কৌশলে তাঁর (বাদী নুসরাতের) বোনকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, সবশেষ গত ১ মার্চ মোসারাতকে প্ররোচিত করেন আসামি। তিনি বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তাঁর স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। ফুসলিয়ে তিনি মোসারাতকে ঢাকায় আনেন। তিনি গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আসামি ও তাঁর (বাদীর) বোনের স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখা হয়। আসামি বাসায় এলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো।

গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার—প্রথম আলো

২৬ এপ্রিল সন্ধ্যার পর গুলশান-২-এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাট মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি কুমিল্লা শহরে, ঢাকার একটি কলেজে পড়াশোনা করেন। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। মেয়েটির পরিবার কুমিল্লায় থাকে। এখানে ওই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, মোসারাত জাহান রোববার তাঁর বড় বোনকে ফোন করে বলেন, তিনি ঝামেলায় পড়েছেন। এ কথা শুনে তাঁর বড় বোন সোমবার কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন। সন্ধ্যার দিকে ওই ফ্ল্যাটে যান তিনি। দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলেও বোন দরজা খুলছিলেন না। এরও কিছুক্ষণ আগে থেকে বোনের ফোন বন্ধ পাচ্ছিলেন। পরে বাইরে থেকে ‘লক’ খুলে ঘরে ঢুকে বোনকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখেন। পরে তিনি বাড়িওয়ালাকে বিষয়টি জানান। তখন পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

উপকমিশনার সুদীপ বলেন, দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে মোসারাত জাহানের পরিচয় ছিল। তিনি ওই ফ্ল্যাটে যাতায়াত করতেন বলেও তথ্য পেয়েছেন তাঁরা।