কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ছবি: স্টার মেইল

ডেঙ্গুতে মরছে মানুষ, সিটি করপোরেশনের চিন্তা ইঁদুর নিয়ে!

কাকন রেজা
সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখক
প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০১৯, ১৯:১৩
আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯, ১৯:১৩

ডেঙ্গু প্রায় মহামারীতে রূপ নিয়েছে। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, মারা গেছেন তিনজন চিকিৎসকও। সর্বশেষ মারা গেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক তানিয়া সুলতানা। যিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতেন। যার নিজের ঘরেও রয়েছে সাড়ে তিন বছরের একজন শিশু।

গণমাধ্যম জানাচ্ছে, এমন অবস্থায় চিকিৎসক এবং নার্সরাও রয়েছেন আতঙ্কের মধ্যে। হাসপাতালগুলোতে জায়গা হচ্ছে না। প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছেন অসংখ্য ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষ।

সামাজিকমাধ্যমে ক্রমাগত অনুরোধ জানানো হচ্ছে রক্তের জন্য। দেখলাম, দেড় বছরের একটি ডেঙ্গু আক্রান্ত বাচ্চার জন্য রক্ত চাওয়া হয়েছে। কী করুণ সেই আবেদনের ভাষা। চিকিৎসকরা বলছেন এবার ডেঙ্গুর ধরন আলাদা, মৃত্যুর হারও বেশি। এমন ভয়াবহ অবস্থায় ডেঙ্গুর প্রকোপের বিষয়টিকে যখন গুজব বলা হয় এবং ডেঙ্গু বিষয়ে আলোচনাকেও গুজব ছড়ানো বলে আখ্যা দেওয়া হয়, তখন কী মনে হয়! মনে হয় না, যারা এমনটা বলেন তারা মানসিকভাবে সুস্থ?

হাইকোর্টে সিটি করপোরেশনে আইনজীবীর কথা শুনলেও টাসকি খেতে হয়। উত্তরের মশা দক্ষিণে এবং দক্ষিণের মশা উত্তরের যাওয়ার থিওরিকে কী বলবেন, ‘থিওরি অব ঘোরাঘুরি’? এমন উদ্ভট থিওরি যারা আওরান, তাদের কি মনে হয় না, দুর্দশাগ্রস্ত রোগাক্রান্ত মানুষগুলোর সাথে তামাশা অনেকটাই সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে!

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ বিষয়ে আদালতের সওয়াল-জবাবের কিছু অংশ তুলে দিলাম। জানি, আদালত বিষয়ে মন্তব্য করার সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাই যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি থেকে বুঝে নেয়ার দায়িত্বটা আপনাদেরই।

‘এ সময় আদালত বলেন, আপনি এটা কী বলেন? দক্ষিণ সিটিতে ওষুধ দিলে মশা উত্তর সিটিতে যায়!

জবাবে আইনজীবী বলেন, বাতাসের সাহায্যে মশা এখান থেকে ওখানে উড়ে চলে যায়। এ জন্য আমরা ডোজ বাড়িয়ে দেব। এখন পাঁচ-ছয়টি করে ডোজ দেব। তবে বেশি ডোজ দিলে একটু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়। এ ওষুধ বেশি ছিটালে ইঁদুরসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী পোকমাকড় মারা যায়।

জবাবে আদালত বলেন, আপনারা ইঁদুর মারা যাবে সেটা নিয়ে চিন্তা করেন! অথচ শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা নিয়ে আপনাদের মাথা ব্যথা নেই।’

দুই,

বন্যায় এখন পর্যন্ত সারাদেশে মৃতের সংখ্যা একশ জন ছাড়িয়েছে, গণমাধ্যমগুলো এমন পরিসংখ্যানই দিচ্ছে। ‘কনসার্ট ফর কুড়িগ্রাম’ মনে করিয়ে দিচ্ছে জর্জ হ্যারিসনের কথা। জর্জ হ্যারিসন মুক্তিযুদ্ধে বিপন্ন বাংলাদেশের মানুষদের জন্য করেছিলেন, ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। আজ উত্তরবঙ্গের প্রতিক হিসাবে কুড়িগ্রামের জন্য করা হচ্ছে ‘কনসার্ট ফর কুড়িগ্রাম’। যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুটিতেই মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে, বিপন্ন হয়ে পড়ে। আজ বন্যায় বিপন্ন বাংলাদেশ।
শুধু কি বন্যায় বিপন্ন বাংলাদেশ? এই যে খুন, গণপিটুনি, দুর্নীতি, ব্যাংকের লুটপাট, সম্প্রতি শেয়ার বাজারের হাওয়া হয়ে যাওয়া মূলধন, এসবে কি বিপন্ন নয় দেশটি? পনেরো দিনে যে দেশের পুঁজি বাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকার মূলধন স্রেফ বাতাসে মিলিয়ে যায়, সেই দেশ কি বিপন্ন নয়!

যে দেশে ঘরে ঢুকে শিশু-কিশোরদের গলা কেটে রেখে যাওয়া হয়। রাস্তায় পড়ে থাকে অজ্ঞাত তরুণের লাশ। রেললাইনের পার্শ্বে পাওয়া যায় তরুণ গণমাধ্যমকর্মীর দেহ। মানববন্ধনে চোখের পানি ঝরান সহকর্মীরা। কোলের শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষিতা হয়। প্রেস ক্লাবের সামনে ১০ বছরের ধর্ষিতা বোনকে নিয়ে বিচারের জন্য দাঁড়ায় এক ভাই। ধর্ষণের পর খুন হওয়া শিশু আয়েশার ছবি বুকে নিয়ে বিচারের আশায় দাঁড়ায় একা আয়েশার মা, তখন কি মনে হয় না দেশটা সত্যিই বিপন্ন?
এরপরেও যদি মনে না হয়, তাহলে বলার কিছু নেই। যেখানে সমস্যা অস্বীকৃত হয় সেখানে সমাধান তো দূর-অস্ত।
শেষ করি আদালতের বক্তব্যটির পুনরাবৃত্তি করে। ‘আপনারা ইঁদুর মারা যাবে সেটা নিয়ে চিন্তা করেন! অথচ শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা নিয়ে আপনাদের মাথা ব্যথা নেই।’ আছে কি?

[প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রিয়.কম লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত মতামতের সঙ্গে প্রিয়.কমের সম্পাদকীয় নীতির মিল না-ও থাকতে পারে।]