কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি সরকারি সাত কলেজের মনোগ্রাম। ফাইল ছবি

সাত কলেজের অধিভুক্তি: সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ ডাকসু

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০১৯, ১৬:০২
আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯, ১৬:০২

(প্রিয়.কম) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে বহু ঘটনায় জলগড়ালেও এখন পর্যন্ত কোনো কাযকর সুরাহা হচ্ছে না।এ নিয়ে আন্দোলনে এক শিক্ষার্থীর চোখ গেল, শিক্ষার্থীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হলেন এবং উপাচার্যের কার্যালয় অবরোধ, তালা ঝুলিয়ে দেওয়া ও ভাঙচুর এবং হামলার ঘটনা ঘটেছে। পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্কে নানা পক্ষ সরব হলেও সাতটি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দিকটি কারও কাছে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে হয় না। অথচ এই সংকটের পেছনে সাত কলেজ বা এর শিক্ষার্থীদের কোনোই দায় নেই। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একাডেমিক কর্মকাণ্ডের বাইরে প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়ার সক্ষমতা যে প্রতিষ্ঠানটির নেই, সেটাই এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন ডাকসু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে গত দুইদিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন তারা।

এমন অবস্থায় উদ্ভুত সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। তারা বিষয়টি সমাধানের জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য ইতোমধ্যে বঙ্গভবনকে জানিয়েছে। সোমবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এ কথা জানান ডাকসুর সদস্য রকিকুল ইসলাম ঐতিহ্য।

তিনি বলেন, ‘আজ-কালের মধ্যেই শিডিউল পেলে এ সাক্ষাৎ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান দেশের বাইরে রয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীও অসুস্থ। ফলে সাত কলেজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নেই।’

রকিকুল ইসলাম ঐতিহ্য বলেন, ‘এ ব্যাপারে ডাকসুতে বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা উঠেছে। ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী শিডিউল নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে মেলেনি। আজ-কালের মধ্যেই সাক্ষাৎ হতে পারে।’

অধিভুক্তির পর থেকেই আন্দোলন

সাত কলেজের অধিভুক্তির শুরু থেকেই এ নিয়ে আন্দোলন মোকাবেলা করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে। গত ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী পড়ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে আসার পর তিন দফা আন্দোলনে নামতে হয় অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের। গত ২০ জুলাই ফল প্রকাশ ও পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন তারা। এই আন্দোলনে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলে দৃষ্টিশক্তি হারান তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। যদিও সরকারি খরচে বিদেশে নিয়ে সিদ্দিকুরের চিকিৎসা করালেও আলো ফিরেনি সিদ্দিকুরের চোখে। এ ঘটনায় এক হাজার ২০০ ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলাও করে পুলিশ। পরে সিদ্দিকুরের জন্য সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। এরপর অন্তত আরও বেশকেয়েকবার দাবি আদায়ে সড়কপথ অবরোধে নামেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিবারই ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন থেকে সরে আসে।

দ্বিতীয় দফায় গত ২০১৭ সালের বছরের অক্টোবরে কয়েকশ শিক্ষার্থী চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশের দাবিতে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করে। তখন যথাসময়ে ফল প্রকাশে প্রশাসন আশ্বাস দিলে আন্দোলন তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। নভেম্বরের মধ্যে ওই শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশিত হয়। এর দুই মাস পর গতবছরের ১১ জানুয়ারি ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের ফল প্রকাশ ও তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরুর দাবিতে আবারও নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। 

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি

সেই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসে ফের আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা। কতগুলো দাবি আদায়ে গত সপ্তাহে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—দ্রুত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, সিজিপিএ ২-এর কম পেলেও পরবর্তী বর্ষে শিক্ষার্থীকে উন্নীত করা, ঢাবির সব নোটিশ স্পষ্টভাবে দেওয়া ও কলেজে পৌঁছানো, খাতার মূল্যায়ন সাত কলেজের শিক্ষকদের করা, পয়েন্ট নীতি বাতিল করে ইমপ্রুভ সিস্টেম চালু করা, খাতার পুনর্মূল্যায়ন ও ইনকোর্স রেজাল্ট প্রকাশ করে দেখানো।

শিক্ষার্থীদের দাবি, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেবে। এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষের কোনো জেদাজেদি যেন গুরুত্ব না পায়। 

অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ফের উত্তাল ঢাবি

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ফের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ২১ জুলাই, রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে তাদের বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। পরে সুর্যসেন হল হয়ে মল চত্বর-ভিসি চত্বর দিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে যায় তারা। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে কার্জন হল প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে অবস্থান করে এবং সেখান থেকে ভিসি চত্বর এসে তাদের বক্তব্য পেশ করে। এ সময় তারা সাময়িক সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

আন্দোলন প্রসঙ্গে যা বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচায (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ

সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই। এটি সম্পূর্ণভাবেই সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রশাসন যা করতে পারে তা হলো এতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাযক্রমে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।

অধিভুক্তি বাতিল চেয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা

সাতটি সরকারি কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কাযক্রম কাযত অচল হয়ে পড়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়- সাত কলেজের কাযক্রম সম্পূর্ণ আলাদাভাবে পরিচালনা করা হবে। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি- অধিভুক্তি বাতিল না করা পযন্ত তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ৪৪ হাজার শিক্ষার্থী আছে। এই শিক্ষার্থীদেরকেই কন্ট্রোল করা ঢাবি প্রশাসনের পক্ষে ঝামেলা হয়ে যায়, কিন্তু আবার সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়া প্রায় যুক্তিহীন একটি কাজ। আমরা এখন পরিচয় সঙ্কটে পড়েছি। কেউ যখন জিজ্ঞেস করে কোথায় পড়, যখন বলি ঢাবিতে পড়ি তখন তারা জিজ্ঞেস করে ঢাবির কোন শাখায়? আমাদের একটাই কথা, সাত কলেজ বাতিল চাই।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, আমাদের আন্দোলন সাত কলেজের বিরুদ্ধে নয়, আমরা আন্দোলন করছি ঢাবির প্রশাসনের বিরুদ্ধে যারা আমাদের এত কষ্ট দেখেও নিশ্চুপ। তাই আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ করব তারা যেন ঢাবিকে নিয়ে কটুক্তি না করে। আমরা চাই ঢাবি প্রশাসন সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করুক। এতে আমাদের যেমন লাভ হবে তেমনি সাত কলেজেরও উপকার হবে। এ ছাড়াও আমরা শুরুতে প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু তারা (সাত কলেজের শিক্ষার্থী) আমাদের লাল বাস আটকে দেয়, আমাদের বোনদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে। তারা এতো সাহস কোথায় পায়?’

সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম আলাদাভাবে পরিচালনা করার আশ্বাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে। ২১ জুলাই বিকেলে একথা বলেন তিনি। এদিকে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম আলাদাভাবে পরিচালনা করা হবে বলে জানান সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সাথে ওই সাত কলেজের শিক্ষা পরিচালনার কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না। ঢাবি শিক্ষার্থীদের শিক্ষায়ও কোনো ব্যাঘাত হবে না। 

ঢাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বাতিলের দাবিতে আজও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২২ জুলাই সোমবার সকালে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবন, কলা ভবন, ব্যবসায় অনুষদ ভবন এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদসহ বিভিন্ন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা।

ফেসবুকে দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নীলিমা আখতারের পোস্ট

ঢাকা ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নীলিমা আখতার বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করছেন। তিনি ফেসবুকে এ ব্যাপারে তুলে ধরে একটি পোস্ট দিয়েছেন। নীলিমা আখতার লিখেছেন, ‘সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আবার রাস্তায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামর্থ্য এবং উদ্দেশ্যের সাথে সাত কলেজ যায় না। আমাদের নিজেদের ছাত্রদের কতটুকু দিতে পারছি আমরা? পাবলিক প্রতিষ্ঠানের অনেক সীমাবদ্ধতা। নিজেদের চল্লিশ হাজার ছাত্রকে ভালো শিক্ষা দেওয়াই কঠিন, তার উপর সাত কলেজের পৌনে দুই লক্ষ ছাত্রের তত্ত্বাবধান। এটা কি আমাদের পক্ষে সম্ভব, না আমাদের করার কথা? সবচেয়ে যোগ্যদের জীবনের জন্য, সমাজের জন্য, দেশ গঠনের জন্য তৈরি হতে সাহায্য করা আমাদের কাজ। আর কাজ গবেষণা।’

সাত কলেজের দেখভালে ‘ব্যর্থ’ ঢাবি প্রশাসন

তৎকালিন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ অনুযায়ী তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব। এখন থেকে এই অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি প্রক্রিয়া, পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী বিদ্যায়তনিক কার্যক্রমও পরিচালনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেই লক্ষ্যে রাজধানীর সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার কথা বলেছিলেন সেই লক্ষ্য পুরোপুরি ব্যাহত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাত কলেজের দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ ঢাবি প্রশাসন। বর্তমানে সেশনজট, সময়মতো পরীক্ষা, রুটিন প্রকাশ, ফলাফল না হওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কলেজগুলোর কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর জীবন। মাঝে মাঝেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন।

অধিভুক্তিতে সন্তুষ্ট নন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

অধিভুক্তি নিয়ে শুরু নানা উচ্ছ্বাস থাকলেও দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং পুরনো কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে সন্তুষ্ট নন। শিক্ষার্থীদের সমস্যা বেড়েছে বহুগুণে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট নয়। এমন অসন্তোষের মধ্যে শিক্ষার্থীদের এই দুই পক্ষের আন্দোলনকেই এখন সামাল দিতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। ঢাবি শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, সাত কলেজের অধিভুক্তিতে ক্যাম্পাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর ওপর চাপ বেড়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষকরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কোনো সেশনজট নেই। কিন্তু অব্যাহত ছাত্র আন্দোলনের মুখে ক্লাস এবং পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আবারও সেশনজট দেখা দিতে পারে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয় বাড়াতেই ঢাকার বড় এই সাত কলেজকে অধিভুক্ত করেছে।

সাত কলেজের ওয়েবসাইটিও আপডেট নয়

সার্ভার শক্তিশালী না হওয়ায় একটু চাপ বাড়লেই সাইটটি ডাউন হয়ে যায়। সার্ভারে মাঝে মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায় না বিভিন্ন তথ্য। ভর্তি প্রত্যাশী নূর মোহাম্মদ অভিযোগ করেছেন, প্রায় সব ইউনিটেই যারা ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি, তাদের পরে একটা সুযোগ দিয়েছিল পে-স্লিপ নেওয়ার। কিন্তু যারা বিজ্ঞান থেকে মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছেন, তাদের এ রকম কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে নির্দিষ্ট দিন এসেও পে-স্লিপ পাননি। সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ডিন অফিসে গেলেও সেখানে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। সায়েন্স থেকে মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো সিরিয়াল থাকা সত্ত্বেও চয়েজের শেষ দিকের সাবজেক্ট পেয়েছেন অনেকে।

সেশনজট বেড়েছে সাত কলেজে

একই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষার্থীরা বর্তমানে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে এক বছর এগিয়ে রয়েছেন। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সাত কলেজের ছাত্রছাত্রী। সেশনজটের বিরুদ্ধে নিয়মিত নানা ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ‘ক্রাশ প্রোগ্রামে’র আওতায় এখন সময়মতো পরীক্ষা হচ্ছে, ফল প্রকাশ হচ্ছে।

সাত কলেজের কার্যক্রম দেখভালের জন্য লোকবল মাত্র চারজন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত ছিল না। জনবল সংকটের কারণে কোনো কাজ সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। সাত কলেজের কার্যক্রম দেখাশোনার জন্য নেই কোনো শাখা। বিগতদিনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে বিষয়টি দেখভাল করতে দুই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে সাত কলেজের কার্যক্রম দেখভালের জন্য লোকবল মাত্র চারজন।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল