কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রিয়া সাহা। ফাইল ছবি

প্রিয়ার বিরুদ্ধে ৩ মামলা, প্রধানমন্ত্রী বললেন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪০
আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪০

(প্রিয়.কম) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার পর রাষ্ট্রদ্রোহিতা, নির্বাচিত সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে। গত বুধবার ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান গুম হয়ে গেছে।’

২১ জুলাই, রবিবার ঢাকা ও যশোরে তার বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দুটি আবেদন করেন দুই আইনজীবী। অপরদিকে যশোরে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা একটি মামলা করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে প্রিয়া সাহার অভিযোগকে পুরোপুরি মিথ্যা ও কাল্পনিক বলেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ঢাকায় যে দুই মামলার আবেদন করা হয়

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ফাইল ছবি

প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে ঢাকার আদালতে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করা হয়। আবেদনকারীরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সায়্যেদুল হক সুমন ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য ইব্রাহিম খলিল।

আদালত সূত্র বলছে, প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে মামলার দুই বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছে আদালত। বিষয়টি পরে আদেশের জন্য রাখা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারায় মামলা আমলে নেওয়ার আবেদন করেছেন বাদীরা। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিও আবেদন করা হয়েছে।

তারা আবেদনে উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা যে অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট, যা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।

ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক দ্বিতীয় সম্মেলনে যোগ দেন প্রিয়া সাহা। ১৬ থেকে ১৮ জুলাই এই সম্মেলনের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র।

যশোরে প্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলা

যশোর জেলা জজ আদালত ভবন। ফাইল ছবি

যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও শহরের খড়কি এলাকার মৃত এলাহী সরদারের ছেলে গোলাম মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। রবিবার সকালে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আর্জিতে তিনি বলেছে, প্রিয়া সাহা দেশদ্রোহী, অবজ্ঞা সৃষ্টিকারী ও নির্বাচিত সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। তিনি গত ১৭ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অফিসে তার কাছে অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশ থেকে ৩৭ মিলিয়ন সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান গুম করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু জনগণ চরম নির্যাতনের শিকার। শুধু তাই নয়, আসামি বলে যে, ‘আমি ঘর হারিয়েছি, আমার জমি নিয়ে নিয়েছে, বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়েছে। এসবের কোনো বিচার পাইনি।’

প্রকৃতপক্ষে এসবের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আসামি মিথ্যা অভিযোগ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন, নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের জাল বুনিয়েছে। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে চরম অবমাননাকর। এজন্য বাদী মামলাটি দায়ের করেছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছে।

প্রিয়া সাহাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করা প্রিয়া সাহাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শুরু না করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রবিবার দুপুরে এ কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- প্রিয়া সাহা কেন এমন কাজ করেছেন এ বিষয়ে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকা উচিত।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে তার (প্রিয়া সাহা) বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে ব্যবস্থা নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কে প্রিয়া সাহা যে নালিশ করেছেন, এ বিষয়ে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। উনি কোন উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেছেন তা জানতে হবে, এর পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্রাম্পের কাছে যা বলেছিলেন প্রিয়া সাহা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে নালিশ করছেন প্রিয়া সাহা। ফাইল ছবি

গত ১৭ জুলাই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬ দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।

এ সময় প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে তিন কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।’

এর পর তিনি বলেন, ‘এখন সেখানে এক কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।’

ভিডিওতে দেখা গেছে, একপর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীল হয়ে ওই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। কারা এমন নিপীড়ন চালাচ্ছে? ট্রাম্পের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘দেশটির মৌলবাদীরা এসব করছে। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে।’

প্রিয় সংবাদ/রুহুল