কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আয়েশা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নি। ছবি: সংগৃহীত

রিফাত হত্যাকাণ্ড: পুলিশ বলছে ‘জড়িত’, মিন্নি বলছে ‘নির্দোষ’

আশরাফ ইসলাম
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০১৯, ১০:২৬
আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯, ১০:২৬

(প্রিয়.কম) বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নি জড়িত ছিলেন বলে দাবি করছেন মামলার তদন্তকারী দলের কর্মকর্তারা।

১৭ জুলাই, বুধবার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির সংবাদমাধ্যমকে জানান, রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় মূল হত্যাকারী নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে মিন্নি পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করে।

হুমায়ুন কবির আরও জানান, ঘটনার আগের দিন মিন্নি নয়ন বন্ডদের বাড়িতে গিয়ে এই হত্যার পরিকল্পনা করে। এ হত্যাকাণ্ডের ৬ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এই হত্যায় আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সংশ্লিষ্টতার কথা জানায়।

১৬ জুলাই, মঙ্গলবার রিফাত হত্যা মামলার প্রথম সাক্ষী ও নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করে বরগুনার পুলিশ। পরে বুধবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির। আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজী শুনানি শেষে তার বিরুদ্ধে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে বুধবার বিকেলে আদালতে এক প্রশ্নের উত্তরে মিন্নি বলেছেন, ‘আমার স্বামী রিফাত শরীফ। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। হত্যাকাণ্ডে আমি জড়িত নই। এ মামলায় আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।’

রিফাতকে কোপানোর দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

আদালতে মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। বরগুনায় কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেছেন, মামলাটি ভিন্ন খাতে নেওয়া হচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন তারা।

গত ২৬ জুন সকালে রিফাত শরীফ সাদা রঙের মোটরবাইকে করে বরগুনা সরকারি কলেজের গেটের সামনে আসেন। এরপর তিনি কলেজের ভেতরে প্রবেশ করেন। ভেতরে প্রবেশের কিছু সময় পর ঘটনাস্থলে আসেন রিফাত ফরাজী। আরও দুই থেকে তিন মিনিট পর রিফাত ফরাজীর দু-তিন সঙ্গী কলেজে ঢুকে। রিফাত শরীফ ও তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি কলেজ থেকে বের হন। রিফাত ফরাজীর সঙ্গে দলবলকে দূর থেকে দেখে স্বামীকে টেনে ধরে ফের কলেজে ঢোকানোর চেষ্টা করেন মিন্নি। কিন্তু পারেননি। টেনেহিঁচড়ে রিফাতকে বের করে এনেই প্রথমে কিল ঘুষি। এরপরেই রাম দায়ের কোপ। রিফাতকে এলোপাতারি কোপাতে থাকেন নয়ন বন্ড ও অন্যরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনার নতুন একটি ভিডিও ফুটেজে স্ত্রীর সামনেই রিফাত হত্যাকাণ্ডের এই বিবরণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রামদা ৮ জুলাই, সোমবার সকালে উদ্ধার করা হয়েছে। 

রিফাতকে  যে রাম দা দিয়ে কোপানো হয়। ছবি: সংগৃহীত

ফুটেজে রিফাত ফরাজীকে কালো জামা ও চোখে কালো চশমা পরা অবস্থায় দেখা যায়। এ সময় তার ছয়-সাত জন সঙ্গী কলেজ গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ ছিল। কিছুক্ষণ পর রিফাত ফরাজীর দু-তিন জন সঙ্গী কলেজের ভেতরে যায়। হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে রিফাত ফরাজী কলেজ গেটের সামনের রাস্তার উত্তর পাশে অবস্থান নেন। 

পরে রিফাত শরীফ তার স্ত্রীকে নিয়ে কলেজ গেট থেকে বের হন। তারা মোটরসাইকেলে উঠে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হঠাৎ রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি রিফাত ফরাজী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দেখে স্বামীকে ভেতরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভেতরে পৌঁছানোর আগেই রিফাত ফরাজীর নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন রিফাত শরীফকে ধরে ফেলে। কিল, ঘুষি দিতে দিতে ফটকের সামনের সড়ক থেকে পূর্ব দিকে নিয়ে যায়। সেখানেই প্রথম দেখা যায় নয়ন বন্ড ও অন্যদের।

নয়ন বন্ডের কাছে রিফাত শরীফকে নিয়ে যাওয়ার পর ১০-১২ জন তাকে ঘিরে ধরে পেটাতে শুরু করে। এ সময় রিফাত ফরাজী ও তার অপর এক সহযোগী দৌড়ে কাছাকাছি কোথাও লুকিয়ে রাখা দুটি রামদা নিয়ে আসেন। এর একটি রামদা নয়নের হাতে দেয় রিফাত ফরাজী। এরপর রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ড দুজনে মিলে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন রিফাত শরীফকে। আর তাদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন স্ত্রী মিন্নি।

বাঁ থেকে রিফাত শরীফ ও নয়ন বন্ড। ছবি: সংগৃহীত

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার পর রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ড রামদা হাতে সবার সামনে দিয়ে সঙ্গীদের নিয়ে ঘটনাস্থলের পশ্চিম দিকে চলে যান। তখন রিফাত শরীফের রক্তে ভেসে যাচ্ছে সমস্ত পথ।পরে ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে মারা যান রিফাত শরীফ।

ভিডিওটি দেখে মনে হয়েছে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড ছিল সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত। কেউ কিছু আঁচ করার আগেই তারা এই হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন।

ঘটনার পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে এজারহারভুক্ত আসামি করে এবং ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জন ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার আসামি নয়ন বন্ড গ্রেফতারের পর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। রিফাত ফরাজী এ মামলায় ২নং আসামি। 

প্রিয় সংবাদ