কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ফাইল ছবি

পল্লি নিবাসে চিরনিদ্রায় শায়িত এরশাদ

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪৪
আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯, ১৮:৪৪

(প্রিয়.কম) অবশেষে রংপুরে পল্লি নিবাসেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

১৬ জুলাই, মঙ্গলবার বিকেলে ৫টা ৪৪ মিনিটে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। সাবেক এ রাষ্ট্রপতিকে দাফন করার আগে বিকেল ৫টা ৪১ মিনিটে তার প্রতি শোক জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

গত রবিবার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তবে মৃত্যুর পর থেকেই দাফনের স্থান নিয়ে নানামুখী বিতর্ক শুরু হয়। অবশেষে আজ মঙ্গলবার রংপুরে এরশাদের চতুর্থ ও শেষ জানাজার পর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নিজ বাসভবন পল্লি নিবাসেই এরশাদকে দাফন করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।

জাতীয় পার্টির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রংপুরের মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রংপুরেই এইচএম এরশাদকে দাফন করার অনুমতি দিয়েছেন বেগম রওশন এরশাদ। পাশে রওশন এরশাদের জন্য কবরের জায়গা রাখার অনুরোধও করেছেন তিনি।

এর আগে এরশাদের মৃত্যুর দিন বনানী সামরিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে এরশাদের দাফন রংপুরে করার দাবিতে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল রংপুর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তার সাবেক স্ত্রী বিদিশাও রংপুরে দাফন করার পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল।

এরই মাঝে আজ দুপুর আড়াইটার দিকে রংপুর কালেক্টরেট মাঠে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ ও শেষ জানাজা সম্পন্ন হয়। সেখানে লক্ষাধিক মানুষ জানাজায় শরিক হয়। জানাজার আগে থেকেই এরশাদের দাফন রংপুরে করার দাবিতে হট্টগাল শুরু করেন তারা।

জানাজার আগে বক্তৃতায় রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এই দাবি আবারও তোলেন। এরপর জি এম কাদের বক্তব্য শুরু করলে তার বক্তব্যের মাঝেই দাফনের বিষয়টি উল্লেখ করে শ্লোগান শুরু হয়। পরে বেলা ২টা ২৫মিনিটে এরশাদের জানাজা শুরু হয়। জানাজার পর শত শত কর্মী এরশাদের মরদেহ বহনকারী গাড়িটি ঘিরে ধরে। তারা তাকে রংপুরে দাফন করার দাবি করেন। গাড়িটিতে ছিলেন মেয়র মোস্তাফিজ। ময়দানে মাইক থেকে তার প্রতি আহ্বান জানানো হয়, মরদেহ যেন রংপুর থেকে ঢাকায় না যায়। এ অবস্থায় বেলা তিনটার দিকে এরশাদের মরদেহ শহরে তার বাড়ি পল্লি নিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, এরশাদ সিএমএইচে চিকিৎসাধীন থাকার সময় থেকেই রংপুর জাতীয় পার্টির নেতারা তাকে রংপুরে দাফনের দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের যুক্তি, এরশাদ বলে গেছেন তার মৃত্যু হলে তাকে যেন পল্লি নিবাসে দাফন করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর দর্শনা এলাকায় এরশাদের বাসভবন পল্লি নিবাসের পাশে তার বাবা মরহুম মকবুল হোসেন মেমোরিয়াল হাসপাতাল এলাকায় লিচু বাগান চত্বরে তার জন্য কবরও খনন করা হয়।

পরে গতকাল সোমবার রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের লাশ রংপুর থেকে ঢাকা নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে ঢাকায় দাফন করতে নিয়ে যাওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হবে। তার দাফন রংপুরেই হবে।

এদিকে এইচএম এরশাদের দাফন রংপুরে হওয়ায় সিদ্ধান্তকে রংপুরবাসীর বিজয়ী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা। ১৬ জুলাই, মঙ্গলবার পৌনে বিকেল তিনটার দিকে নিজের ফেসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাস দিয়ে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘রংপুরবাসীর বিজয়। হেরে গেলেন ষড়যন্ত্রকারীরা।’

প্রয়াত সাবেক স্বামীর এইচএম এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ সরব বিদিশা। একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়েই যাচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে আরেক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘দোয়া করি রংপুরের পল্লি নিবাস যেন শেষ ঠিকানা হয়।’

এর আগে গতকাল সোমবার প্রয়াত এরশাদ এবং ছেলে এরিক এরশাদকে নিয়ে এক স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি রংপুরের মানুষের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া এরশাদ বেঁচে থাকাকালীন পল্লি নিবাসে তার যেন শেষ ঠিকানা হয় সে কথাও জানিয়েছেন বিদিশা। দেশে ফিরে সাবেক স্বামীর মরদেহ শেষবার দেখতে না পাওয়া এবং ছেলে এরিক এরশাদকে নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তোলেন তিনি।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল