কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

চামেলী খাতুন। ছবি: সংগৃহীত

বাঁচতে আবারও অর্থ সহায়তার আকুতি জানালেন নারী ক্রিকেটার চামেলী

সৌরভ মাহমুদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০১৯, ১২:২২
আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯, ১২:২২

(প্রিয়.কম) বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের হয়ে ১৯৯৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মাঠ কাঁপিয়েছেন চামেলী খাতুন। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, একসময়ে মাঠ কাঁপানো সেই অলরাউন্ডার পার করছিলেন জীবনের চরম দুঃসময়।

অবশ হয়ে যাচ্ছিল তার শরীরের এক অংশ। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে না পারায় বিছানাতেই কাটছিল তার দিন। এমনকি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল মেরুদণ্ডে দুই হাড়ের মধ্যে থাকা নরম ডিস্কগুলো। আর তাতে ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যাচ্ছিল  চামেলীর শরীরের ডান অংশ।

বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে চামেলী খাতুন। ছবি: সংগৃহীত

এমন অবস্থায় বাঁচার আকুতি নিয়ে গত বছর সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চান একসময়ের এই দাপুটে নারী ক্রিকেটার। বিষয়টি গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করেন। ওই সময় আরও অনেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন। এই তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের দুই তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানও।

ভারতে চিকিৎসা করানোর সময় চামেলী। ছবি: সংগৃহীত

আর্থিক সহায়তা পেয়ে ওই সময় ভারতের বেঙ্গালুরুতে পায়ের লিগামেন্ট অপারেশন করান চামেলী। তখন প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি। চলতি বছরের মার্চে তাকে পুনরায় ফলোআপের জন্য ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তিনি চিকিৎসার জন্য যেতে পারেননি। যার জেরে আবারও চামেলীর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমনকি তার দু পা ফুলে গেছে। মেরুদণ্ডের হাড়ও চার ডিগ্রি বেঁকে গেছে।

সে সময় সেরে উঠছিলেন চামেলী। ছবি: সংগৃহীত

এমন অবস্থায় আবারও আর্থিক সহায়তা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করেছেন চামেলী। সঙ্গে বর্তমান অবস্থার কিছু ছবি, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনসহ কিছু ছবি জুড়ে দিয়েছেন।

ফেসবুক পোস্টে চামেলী লিখেছেন, ‘আমি চামেলী খাতুন। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সাবেক একজন খেলোয়াড়। আমি ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছি। খেলাকালীন সময়ে আমি ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত হই। তাই ক্রিকেট ক্যারিয়ার দীর্ঘ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। খেলাকালীন সময়েই আমি আনসার ভিডিপিতে চাকরিতে যোগদান করি। এখনো সেখানে আমি চাকরিরত আছি। ২০১১-এর পর আমি খেলা ছেড়ে চাকুরিতে মনোনিবেশ করি। গত বছর এর মাঝামাঝিতে আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আমার দুই পা প্যারালাইজড হওয়ার পর্যায়ে চলে গেছিলো। তখন আমার ফেসবুক পোস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ক্রিকেটবোর্ডের নজরে আসলে তারা আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আমি বেঙ্গালুরুতে পায়ের লিগামেন্ট সার্জারি করে আসি। তখন মোটামুটি সুস্থ হয়েছিলাম। ওখানকার ডাক্তার আমাকে এ বছরের মার্চে ফলোআপ করার জন্য ডেকেছিল। আমার অল্প টাকার চাকুরি। আর পরিবারের বৃদ্ধ মা বাবা আর স্বামী হারা বোন। চাকরির টাকায় সংসারই চলে না ভিনদেশে চিকিৎসা করা তো বহুদূরের কথা। ফলোআপ এ না যাওয়ার কারণে হোক বা সেখানে চিকিৎসা তে ঘাটতির কারণেই হোক আমার অবস্থা ইদানিং আরও খারাপ হচ্ছে। আমার দুই পা ফুলে গেছে। আমার মেরুদণ্ড এর হাড় ৪ ডিগ্রি বাঁকা। আমি ঠিক মতো নড়াচড়াও করতে পারি না এজন্য। এজন্য আমি ঠিকমতো ডিউটি করতে পারছি না। আমার ডিপার্টমেন্ট আমাকে যথেষ্ট সুযোগ দিচ্ছে। আমি ঠিক মতো যেতে পারি না এবং অসুস্থ হলে তারা আমাকে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু এভাবে আর কত! কাউকে বসিয়ে তো বেতন দেওয়া যায় না। এই চাকরি চলে গেলে আমার পরিবার না খেয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হবে। এমতাবস্থায় আমি কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না। ক্রিকেট অনুরাগী, ক্রিকেট বোর্ড, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীয়ের কাছে আমার আর্জি আমাকে চিকিৎসা করে সুস্থ হওয়ার জন্য একটু সহোযোগিতা করুন। নিজের জন্য যতটুক কষ্ট তার থেকে বেশি বয়স্ক মা বাবার জন্য। এই বয়সে আমি তাদের দেখাশোনা করার কথা। উল্টো তারা আমাকে যত্ন করছে। আমি ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। বেশিক্ষণ বসে থাকলে কোমড় পা ব্যাথা করে এবং পায়ে পানি আসে। দিন দিন অবস্থা আরও অবনতি হচ্ছে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করালে হয়তো পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারি। এখনই শারিরীক কষ্টে আমি ঠিকমতো ডিউটি করতে পারি না। আমি এখন আমার ও আমার পরিবার নিয়ে খুববেশি চিন্তিত। আমরা এক রুমে চার জন থাকি। তার অবস্থা কী তা ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন। আমি খুব বেশি অসহায় হয়েই মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়েছি। আপনারা যদি এগিয়ে না আসেন একটা পরিবার ধ্বংসের মুখে পড়বে। দয়া করে আমার চিকিৎসা এর জন্য আপনারা কিছু করুন। খুব বেশি কষ্ট, অসহায় অবস্থা নিয়ে আমি এই আর্জি করছি।’

চামেলী আবারও ফির‍তে চান স্বাভাবিক জীবনে। হাঁটতে চান আর ১০ জন মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু  চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ চামেলী কিংবা তার পরিবারের পক্ষে জোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ডান পায়ের লিগামেন্ট ছেঁড়ার পর জীবিকার তাগিদে চামেলী চাকরি নিয়েছিলেন আনসার ভিডিপি অফিসে। চাকরি করে পরিবার ও এক বোনের ভরণপোষণ চালাচ্ছিলেন তিনি। অসুস্থতাজনিত কারণে অফিস করতে পারছেন না নিয়মিত। ফলে ছোট্ট চাকরিটিও যায় যায় অবস্থা।

জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে চামেলী খাতুনের কিছু মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত

এমন অবস্থায় জীবনের সঙ্গে লড়াই করা চামেলী আকুতি জানিয়েছেন বাঁচার। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এক সময়ের দাপুটে নারী ক্রিকেটার সাহায্য চেয়েছেন সমাজের বিত্তবান সবার কাছে। যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়া এলাকায় জন্ম নেওয়া এই নারী ক্রিকেটার।

প্রিয় খেলা/আশরাফ