কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় ও অধিনায়ক ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত

দুনিয়াকে বারবার চমকে দিয়েছেন পাকিস্তানের এ খ্যাতিমান ক্রিকেটার

আশরাফ ইসলাম
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০১৯, ১৮:১২
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯, ১৮:১২

(প্রিয়.কম) ইমরান খান নামেই সবার কাছে পরিচিত তিনি। কিন্তু তার পুরো নাম কি জানেন? আহমেদ খান নিয়াজী ইমরান হচ্ছে তার পারিবারিক নাম। তিনি ১৯৫২ সালের ২৫ নভেম্বর পাঞ্জাবের শাহীওয়ালে জন্মগ্রহণ করেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজি ও তার স্ত্রী শওকত খানমের একমাত্র ছেলে ইমরান খান। তার পিতৃপুরুষের আদিবাস পাঞ্জাবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল মিয়ানওয়ালিতে। তারা পসতুন সম্প্রদায়ের। তারা নিয়াজি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। তার মা পসতুন উপজাতির বুরকি সম্প্রদায়ের। ইমরান খান পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় ও অধিনায়ক। তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। খেলোয়াড় জীবন শেষে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় করে।

ক্রিকেট মাঠ

আজকের এই ইমরানের যে যশ বা খ্যাতি, তার সবচেয়ে বড় অংশ বলা যায় এসেছে ক্রিকেট থেকে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লাহোরের হয়ে সারগোরার বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেন তিনি। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ও ভালো করার যে ইচ্ছাশক্তি তাই মূলত দ্রুত পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলে তাকে স্থান করে দেয়। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান দলে ডাক পাওয়ার সময় পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলা শুরু, এক পর্যায়ে দলের অধিনায়ক। এরপর তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সারা দুনিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের মহানায়কদের কাতারে স্থান করে নেন এই দীর্ঘদেহী সুদর্শন খেলোয়াড়। অনেকের চোখেই ইমরান খান মানেই যেন এক ক্রিকেট নস্টালজিয়া।

৮১’ তে জাতীয় ক্রিকেট দলের নেতৃত্বে এসে পুরো পাকিস্তান দলের কাঠামোই বদলে ফেলেন। ক্রিকেটে নিরপেক্ষ আম্পায়ার নিয়ে আসার প্রবক্তা হচ্ছেন ইমরান খান। ইমরান খানের যাদুকরী নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে খাদের কিনারা থেকে উঠে এসে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে পাকিস্তান। 

১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ হাতে ইমরান। ছবি: সংগৃহীত

এরপরই তিনি ক্রিকেট থেকে অবসরে যান এবং পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়দের অন্যতম হয়ে থাকেন। টেস্ট ক্রিকেটে তিনি সর্বমোট ৩৮০৭ রান করেছেন। উইকেট নিয়েছেন ৩৬২টি। টেস্ট ক্রিকেটে এ যাবৎ বিশ্বে মাত্র আটজন ক্রিকেটারের ভাগ্যে জুটেছে ‘অল রাউন্ডারস ত্রিপল’ খেতাব। তার একজন ইমরান খান। তাকে ২০১০ সালে আইসিসি ক্রিকেট ‘হল অব ফেম’ দেওয়া হয়।

ইমরান খান বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় নিজের পছন্দের ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গঠন করতে একেবারে একরোখা ছিলেন ইমরান। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করার সময় সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলকেও নেতৃত্ব দেন তিনি। ক্রিকেটে পাওয়া জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েই রাজনীতিতে নামেন ইমরান। তার দলের প্রতীকও ক্রিকেট ব্যাট। দলের নাম পিটিআই হলেও জনগণ একে ক্যাপ্টেন্স বলে সম্বোধন করেন প্রায়ই।

ইমরানের তিন বিয়ে

বিশ্বকাপ জয়ের তিন বছর পর ১৯৯৫ সালে ইমরান প্রথম বিয়ে করেছিলেন ব্রিটিশ মেয়ে জেমিমা গোল্ডস্মিথকে। জেমিমা বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে। জেমিমা ছিলেন ইহুদি ধর্মের, এ ছাড়া ইমরানের চাইতে ২০ বছরের ছোট। সব মিলিয়ে বিয়ের পর বেশ সমালোচিত হন তিনি। বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি পাকিস্তানিরাও। ২০০৪ সালে জেমিমার সঙ্গে ইমরানের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ওই ঘরে ইমরানের দুই ছেলে রয়েছে। তারা মায়ের সঙ্গে বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করেন। 

ইমরানের সঙ্গে প্রথম স্ত্রী জেমিমা। ছবি: সংগৃহীত

এরপর ২০১৫ সালে রেহাম খানের সঙ্গে তার বিয়ের খবর সামনে আসে। কিন্তু রেহাম খানের সঙ্গে ইমরানের সংসার টিকে মাত্র ১০ মাস। বিচ্ছেদের পর থেকেই ইমরান সম্পর্কে সব বিস্ফোরক মন্তব্য শুরু করেন রেহাম। তার বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। রেহাম জানান, এমন কোনো কাজ নেই ইমরান নিজের স্বার্থের জন্য করেন না। বড় পদ দেওয়ার জন্য নারী কর্মীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন ইমরান অভিযোগ করেন সাবেক এই স্ত্রী। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, দলের নারী কর্মীদের বড় পদ দেওয়ার জন্য ইমরান তাদের থেকে যৌনসুবিধা আদায় করেন।

সিএনএন ১৮-কে দেওয়া সাক্ষাতকারে রেহাম অভিযোগ করেন, ইমরান খান প্রতিষ্ঠিত পিটিআই দলের নারী কর্মীরা তখনই বড় পদ পান, যখন তারা ইমরানের সঙ্গে বিছানায় যেতে রাজি থাকেন। কেউ বড় পদ চাইলে ইমরান সরাসরি তাকে জানিয়ে দেন যে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে হবে। তার প্রকাশিতব্য বইয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন রেহাম। 

ইমরান ও রেহাম খান। ছবি: সংগৃহীত

রেহাম খানের অভিযোগ, উজমা কার্দার নামে এক নেত্রী নিজের যৌনাঙ্গের ছবি পাঠাতেন ‘বিকৃতকাম’ ইমরানকে। রেহামের উপস্থিতিতেই ইমরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য করা হতো উজমাকে। এদের অনেককেই ইমরান জোর করে গর্ভপাতও করান। ইমরানের নজর থেকে পুরুষরাও বাদ যেতেন না। প্রভাব খাটিয়ে এক পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি। গ্রেস জোনস নামে এক বিখ্যাত গায়কের সঙ্গেও ইমরানের সম্পর্কের কথা সামনে আসে।

২০১৮ সালে আবারও বিয়ে করেন ইমরান। পাঁচ সন্তানের জননী বুশরা ওয়াতোর সঙ্গে ঘর বাঁধেন তিনি। আধ্যাত্মিক পরামর্শক হিসেবে বুশরার খ্যাতি রয়েছে। ইসলাম নিয়ে জনসমক্ষে অনেক কথা বলেন তিনি।

রেহামের অভিযোগ, তার সঙ্গে দাম্পত্য যাপনের সময় থেকেই বুশরার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল ইমরানের। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত রেহাম সে দেশের সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এসব মন্তব্য করেন।

ডেইলি মেইলের ডেভিড রোজকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ইমরান তার ব্যক্তিগত জীবনের চমকপ্রদ অনেক তথ্য জানিয়েছেন। বুশরাকে বিয়ের আগে তিনি একবারের জন্যও তার চেহারা দেখেননি। না দেখেই ইমরান তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। বিয়ের আগে ইমরান যতবার বুশরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, ততবারই তার মুখ পর্দায় ঢাকা ছিল।

ইমরান বলেছেন, ‘বুশরার চেহারা সম্পর্কে আমার যেটুকু ধারণা ছিল সেটা তার বাসায় রাখা পুরানো একটি ছবি থেকে।’ ইমরান জানান, বুশরা সুফিসাধক ও আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক; তাই তিনি স্বামী ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষকে চেহারা দেখান না। ঘরের বাইরেও তিনি তেমন একটা বের হন না, হলে পর্দায় আবৃত হয়ে তারপর বের হন। বিয়ের পর বুশরার চেহারা দেখা প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, ‘আমি বুশরার চেহারা দেখে হতাশ হইনি। তাকে বিয়ে করে আমি সুখী।’ উল্লেখ্য, বুশরার বয়স এখন ৩৯ আর ইমরান খানের ৬৫।

তৃতীয় বিয়ের পর ইমরান ও বুশরা। ছবি: সংগৃহীত। ছবি: সংগৃহীত

ইমরান ও বুশরার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল বছর তিনেক আগে। বুশরা তখন বিবাহিত এবং পাঁচ সন্তানের জননী। তার প্রথম স্বামীর নাম খাওয়ার ফরিদ মানেকা। ফরিদ পাকিস্তানের একজন সিনিয়র কাস্টমস কর্মকর্তা।

এদিকে পিটিআইয়ের অনেক নেতা মনে করছেন, বিরোধী দলের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ইমরানকে ছোট করতে তার সাবেক স্ত্রী বইটি অনলাইনে ফাঁস করেছেন। কয়েকজন টুইটারে সে সময় লিখেছিলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই ইমরান খানের চরিত্র কলুষিত ও মানসম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করার এজেন্ডা ছিল এটা।

পাকিস্তানের একজন বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও পিটিআইয়ের সদস্য সালমান আহমেদ বলেছিলেন, সাবেক স্বামীর ক্ষতি করতে রেহাম পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র আমাকে জানিয়েছে, এ বইটি লিখতে রেহামকে পিএমএল-এন ১৫ লাখ রুপির বেশি দিয়েছে।’

এই রাজনীতিক আরও বলেন, রেহাম ইমরানের মানসম্মান ধুইয়ে দিতে তাকেও (সালমান) অর্থ দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। তিনি আমাকে যত ই-মেইল করেছেন, এর সবই আছে।’ রেহামের মতে, ইমরান খান একজন ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী। তিনি রোজা রাখেন না, নামাজ পড়েন না।

পিটিআইয়ের আরেক সমর্থক অভিনেতা হামজা আলী আব্বাসি তার টুইটারে বলেছেন, রেহাম খানের বইয়ের পাণ্ডুলিপি পড়ে তিনি খুবই দুঃখ পেয়েছেন। তার মনে হয়েছে, বইটির সারমর্ম হলো পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য মানুষ হলো ইমরান। রেহাম হচ্ছে খুবই ধার্মিক নারী এবং শাহবাজ শরিফও (সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই) চমৎকার মানুষ।

এর বাইরেও ভয়ানক সব বিতর্ক রয়েছে তাকে ঘিরে। তার দল তেহরিক-ই ইনসাফের বিরুদ্ধেও কোটি কোটি টাকা চুরির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে তার সঙ্গে কট্টরপন্থী জঙ্গিদের যোগাযোগ নিয়েও। ইমরান জিতলে দেশকে কট্টরপন্থীদের হাতে তুলে দেবেন, এমন গুরুতর অভিযোগ তোলেন তার সাবেক স্ত্রী রেহাম। 

রাজনীতিতে বাজিমাত

এই ইমরান খানের হাত ধরেই পাকিস্তান ক্রিকেট বিশ্বকাপে জয়ী হয়েছে। ক্রিকেট ছাড়াও তিনি রাজনীতির দাবায় বাজিমাত করেছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি নিজে প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই)। এ দল থেকে ১৯৯৭ সালে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে দুটি আসনে তিনি নির্বাচন করেন। কিন্তু দুটি আসনের একটিতেও তিনি জয়ের দেখা পাননি। দুই আসনেই বিজয়ী হন পিএমএলএনের প্রার্থী।

১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের কাছ থেকে ক্ষমতা নেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। ওই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিলেন ইমরান খান। তিনি বিশ্বাস করতেন মোশাররফ পাকিস্তান থেকে দুর্নীতি নির্মুল করতে পারবেন।

ইমরান খান একপর্যায়ে জানান, ২০০২ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে চেয়েছিলেন পারভেজ মোশাররফ। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। ২০০২ সালের অক্টোবরে জাতীয় পরিষদের ২৭২ আসনে নির্বাচন হয়। তাতে অংশ নেন ইমরান। নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পেলেও জোট সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। এ সময় তিনি মিয়ানওয়ালি থেকে নির্বাচিত হন। 

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ। ছবি: সংগৃহীত

২০০৭ সালে ইমরান খান পার্লামেন্টের ভেতরে ও বাইরে রাজনৈতিক বিরোধের মুখে পড়েন। ২০০৭ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ সেনা প্রধানের পদ না ছেড়েই প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ৬ই অক্টোবর ওই নির্বাচন ঘোষণা করলে এর প্রতিবাদ করে পার্লামেন্ট থেকে ওই বছর ২রা অক্টোবর পদত্যাগ করেন ৮৫ জন এমপি। তারা গড়ে তুলেছিলেন অল পার্টিজ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট। এর সঙ্গে যোগ দেন ইমরান খানও। তখনকার প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারি করেন। এরপর ৩ নভেম্বর গৃহবন্দী করা হয় ইমরান খানকে। পরে সেখান থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করেন ইমরান।

এরপর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দিতে ১৪ নভেম্বর প্রকাশ্যে আসেন তিনি। ওই বিক্ষোভ থেকে তাকে আটক করে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র বিষয়ক শাখার নেতাকর্মীরা এবং তার সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করে। বিক্ষোভ যতদিন হয়েছে এ সময় তাকে আটক রাখা হয়েছে। তাকে পাঠানো হয় পাঞ্জাবের দেরা গাজি খান জেলে। সেখানে কয়েকদিন কাটানোর পর তিনি মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসেন।

২০১১ সালের ৩০শে অক্টোবর লাহোরে লক্ষাধিক সমর্থকের উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান খান। এ সময় তিনি সরকারের নীতিকে চ্যালেঞ্জ করেন। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের সুনামি আহ্বান করেন। একই বছর ২৫শে ডিসেম্বর তিনি করাচিতে আরেকটি সফল জনসভা করেন। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন।

রাজনীতির মঞ্চে ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত

২০১৩ সালের ২৩শে মার্চ তিনি নির্বাচনি নতুন স্লোগান ধরেন। এর নাম দেন ‘নয়া পাকিস্তান রেভ্যুলুশন’। ২৯শে এপ্রিল দ্য অবজারভার ইমরান খান ও তার দল পিটিআইকে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের প্রধান বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করে। ২০১৩ সালের ৩০শে এপ্রিল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পাঞ্জাব) প্রেসিডেন্ট মানজুর ওয়াত্তু সম্ভাব্য জোট সরকারে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রিত্ব প্রস্তাব করেন। পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজকে সরকার গঠন থেকে বিরত রাখতে ইমরান খানের পিটিআই এবং পিপিপিকে নিয়ে জোট গঠনের কথা ভাবছিলেন মানজুর ওয়াত্তু। কিন্তু তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন ইমরান।

২০১৮ সলের ২৫ জুলাই দেশটির সাধারণ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ইমরান খানের পিটিআই। তবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন না পাওয়ায় বিরোধীদের চাপের মুখে পড়তে হয় ইমরান খানকে। কিন্তু শেষপর্যন্ত খেলার মাঠের মতো রাজনীতির মাঠেরও সব চাপই উতরে গেলেন তিনি। তিনিই হলেন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী। 

জাতীয় পরিষদের ১৭৬ জন সদস্য পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরানের পক্ষে ভোট দেয়। আর বিরোধী পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট  শাহবাজ শরিফ ৯৬ ভোট পান।

মায়ের স্মৃতির উদ্দেশে

সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজি ও তার স্ত্রী শওকত খানমের একমাত্র ছেলে ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত

মায়ের নামে ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ১৯৯১ সালে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহের প্রচারণা শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে দুই কোটি ৫০ লাখ ডলারে লাহোরে প্রথম হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ২০১৫ সালে পেশোয়ারে দ্বিতীয় একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্রাডফোর্ড ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্মানসূচক ফেলোশিপ পেয়েছেন রয়েল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস থেকে ২০১২ সালে।

প্রিয় সংবাদ/রুহুল