সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ১৮ রানে হেরেছে ভারত। ছবি: সংগৃহীত
১৩০ কোটির হৃদয় বিদীর্ণ, জবাব দিতে হবে কোহলিদের
আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯, ১৪:০৪
ম্যাঞ্চেস্টার: স্বপ্নভঙ্গ।
এমন এক স্বপ্ন, যা লালিত হচ্ছিল গত দেড় মাস ধরে। এমন এক স্বপ্ন, যাকে কেন্দ্র করে আবতির্ত হচ্ছিল নানা স্বপ্নের সৌরমন্ডল। ভারতীয় ক্রিকেটে এমন এক সন্ধিক্ষণ যেটি ঘোর বাস্তবের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। বুঝতে শেখাল প্রতিদিন রবিবার হয় না। প্রতিদিন ফিলগুড আবহ থাকে না। প্রতিদিন জীবনে সুখ থাকে না। প্রতিদিন সকালে রোদ ওঠে না। কোনো কোনো দিন সূর্য ঢেকে থাকে মেঘের আড়ালেও।
খেলা শেষে সমর্থকরা দুঃখের সাগরে ভেসে গেছেন। কী সুন্দর জার্নি ছিল এই বিশ্বকাপ। একটি মাত্র ম্যাচে হার। তবুও ফেভারিটের তকমা খসে পড়েনি বিরাট কোহলির দলের থেকে। বিশেষজ্ঞদের সবাই প্রায় জানিয়ে দিয়েছিলেন ভারতই চ্যাম্পিয়ন।
সব থেকে বড় কথা, দলের প্রতিটি ক্রিকেটারও আগে থেকে তাই মনে করে এসেছেন, তারাই শেষ-মেশ খেতাব পাবেন। সেটাই একটা দলের পক্ষে সব থেকে নেতিবাচক দিক। কারণ আত্মবিশ্বাস ভেতরে ভেতরে থাকা উচিত। তার যখন প্রকাশ্য প্রতিফলন পড়বে, তখন সেটি হয়ে উঠবে অহংকার।
আর সেটাই বুধবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে হয়েছে কোহলিদের দলের ক্ষেত্রে। ঠিক স্টেজে মেরে দেবো, এমন এক মানসিকতায় স্বপ্নের দফারফা হয়েছে। খেলা শেষে দুইজনকে দেখে সবচেয়ে খারাপ লেগেছে। একজন রোহিত শর্মা, তিনি মোট ছয়টি ম্যাচে দলের পক্ষে অবদান রেখেছেন তাই নয়, পাঁচটি সেঞ্চুরি ও একটি হাফসেঞ্চুরি করেছেন। আটটি ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচেই খেলতে পারলেন না, আর দল হেরে গেল। তার মনে হতেই পারে, আরে বাবা আমি সব ম্যাচ খেলে দেবো, আর তোমরা কী বেড়াতে এসেছ? চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে কমপ্লিট টিম হতে হবে। হারা ম্যাচ জেতাতে হবে, হারতে হারতে উঠতে হবে। দলের সবাই কিছু না কিছু অবদান রাখবেন।
রোহিত ছাড়াও আরও একজনের দুঃখের শেষ নেই, তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। দেশের হয়ে শেষ ম্যাচ খেললেন তিনি? মার্টিন গুপ্তিলের একটা থ্রো সব শেষ করে দিলো। ধোনি থাকলেও বাকি ১৩টি বলে কী হতো কেউ জানে না। কিন্তু সেই সুযোগই দিলো না ব্ল্যাক ক্যাপসরা। আউট হওয়ার পরে ধোনির প্যাভিলিয়নে ফেরা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম শোকগাথা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
নেভিল কার্ডাস বলেছিলেন, স্কোরবোর্ড একটা গাধা। এই ম্যাচের স্কোরবোর্ডও অনেকটা তাই। কে কত রান করলেন বড় কথা নয়। ক্রিকেট বিশ্ব দেখল দুটি দলের এমন লড়াই, যা একটা দলকে চূড়া থেকে নিচে নামাল, আর আরও একটি দলকে তলা থেকে আকাশে। নিউজিল্যান্ড ভালো দল, তারা যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালে গেল। কিন্তু একটা দলের স্কোর শেষ হলো ২৩৯ রানে। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে যে রান মুড়ি-মুড়কির মতো ওঠে। আর সেই সংগ্রহ নিয়ে ভারতের মতো হেভিওয়েট দলের বিপক্ষে এমন লড়াই, যা দেখে রিচার্ড হ্যাডলি দেশ থেকে আশীর্বাদ করবেন কেন উইলিয়ামসন ও তার দলকে। দলকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন, দারুণ ব্যাটিং করেছেন কেন (৬৭), পাশাপাশি তার সতীর্থ রস টেলর (৭৪) ভালো খেলেছেন।
একটা বিষয় দেখার ছিল ভারতের তিন শুরুর ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলে দলের কী অবস্থা হয়। সেই দিনটি সেমিফাইনালেই ছিল, তাতে ডাহা ফেল বাকিরা। রবীন্দ্র জাদেজার ৭৭, আর ধোনির ৫০ ছাড়া বাকিদের মধ্যে বলার মতো রান হার্দিক ও ঋষভ। দুজনই করেছেন ৩২। কিন্তু হার্দিক ও ঋষভের আউট দেখে মনে হবে তারা ধনী পরিবারের বেহিসেবি ছেলে। তারা জানলই না জীবনের কী মানে, জীবনের আসল কষ্ট। শুধু পরিবারের স্বচ্ছলতার মধ্যে থেকে বয়সটাই তাদের যা বেড়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার কোনো ইচ্ছে হয়নি। এমন শটে আউট হলেন এই কথাগুলো তাদের ক্ষেত্রে উপযুক্তই। জাদেজা দেখালেন তিনি জাত ক্রিকেটার, তার প্রতি কোহলিদের সমর্থন ছিল না। এই ভারতীয় দল ডুবল প্রথম একাদশ গঠনের ক্ষেত্রেও। কোহলি ও কোচ শাস্ত্রীর প্রভাব রয়েছে বিস্তর। দলের ব্যাটিং অর্ডারও ঠিক ছিল না। না হলে ধোনি কী করে দীনেশ কার্তিকের পরে আসেন?
এইসব প্রশ্নের উত্তর কোহলিদের দিতে হবে। তাদের ভালো সময়ে সবাই তাদের নিয়ে নেচেছেন, এবার তাদের জবাব দিতে হবে দলের এমন ব্যর্থতার ঠিক কারণ কী?