কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বাঙালি বক্সার জ্যোতি প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রিংয়ে ২০ বছরের তরুণী বক্সারের রহস্যজনক মৃত্যু!

সৌরভ মাহমুদ
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০১৯, ১২:২৭
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৯, ১২:২৭

(প্রিয়.কম) বক্সিং রিং থেকে বেরিয়ে বসলেন চেয়ারে। সেখান থেকে হাসপাতাল। সব মিলিয়ে বড়জোর ৩০ মিনিট। এর মধ্যেই মৃত্যু ঘটলো বক্সার জ্যোতি প্রধানের। ২০ বছর বয়সী বাঙালি তরুণীর এমন আকস্মিক মৃত্যু জন্ম দিয়েছে রহস্যের।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা যায়, অন্যান্য দিনের মতোই বুধবার খিদিরপুরে থেকে সাইকেল চালিয়ে ভবানীপুরে অনুশীলন করতে এসেছিলেন যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী জ্যোতি। তার অনুশীলনের সঙ্গী সুরজ সিংহ, শিবমকুমার সিংহ রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতালে দাঁড়িয়ে জানান, জ্যোতি বিকেল ৫টায় রিং-এ নেমে তিন মিনিট করে পরপর দু’বার পাঞ্চিং ব্যাগে ঘুষি মারা অনুশীলন করছিলেন।

মাঝে নিয়ম অনুযায়ী এক মিনিট করে বিশ্রামও নিচ্ছিলেন সম্প্রতি পশ্চিম বাংলার হয়ে দিল্লিতে জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করা জ্যোতি। তৃতীয়বার তিন মিনিট একই অনুশীলন করার পরে বিশ্রাম নিতে গিয়ে চেয়ারে বসে জলের গ্লাস হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এরপরই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জ্যোতি।

জাতীয় পর্যায়ে ব্রোঞ্জ জয়ী বক্সার সুরজ বলেন, ‘জ্যোতির দাঁতে দাঁত লেগে গিয়েছিল। জল গড়িয়ে পড়ছিল মুখের পাশ দিয়ে। ও মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে দেখে আমরা চেষ্টা করি জল খাওয়াতে। কিন্তু দাঁত খোলা যাচ্ছে না দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই মিলে ট্যাক্সি ডেকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎসকরা বললেন, মারা গেছে।’

অন্তত ১০ জন জুনিয়র বক্সার এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন একযোগে। জ্যোতির তিন সতীর্থের ভাষ্য, ‘ডাক্তারেরা ভালো করে দেখেনইনি। হাতে কি একটা লাগিয়ে দিয়ে বললেন, মারা গেছে। আমরা বারবার বললাম, আরও একবার দেখুন। ওরা গুরুত্বই দিলেন না।’

এই অভিযোগের সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব পাওয়া যায়নি হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের কর্তব্যরত কোনো চিকিৎসকের কাছ থেকে। কর্তব্যরত এক নারী চিকিৎসক বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। আমার নামও জানতে চাইবেন না। সুপারের কাছে যান। কে বক্সারকে দেখেছেন, জানি না। আমাদের বলার কোনো নিয়ম নেই।’

জ্যোতি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। ১০ বছর ধরে বক্সিং প্র্যাকটিস করছিল সে। সঙ্গে কারাতেও করতো। বেশ কয়েকবার জাতীয় ও স্টেট লেভেলে অংশ নিয়ে পুরস্কার জিতেছে জ্যোতি। রয়েছে জাতীয় সোনার পদকও। জ্যোতির পরিবার তাদের মেয়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ। তারা মেনে নিতে পারছেন না এই হঠাৎ মৃত্যু।

জ্যোতির মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। বাবা রাজুপ্রসাদ প্রধান কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘জ্যোতি আমার চার মেয়ের মধ্যে ছোট। কয়েক মাস আগে ওর জন্ডিস হয়েছিল। লিভার বড় হয়ে গিয়েছিল। এই হাসপাতালেই ওর চিকিৎসা করিয়েছিলাম। সুস্থ ছিল। কী যে হলো! সাড়ে ৭টা নাগাদ খবর পেয়ে চলে এসেছি হাসপাতালে।’

সাধারণত বক্সিংয়ের নিয়ম অনুযায়ী মাথার পেছনে, কোমরের নিচে আঘাত করা বারণ। তা দেখার জন্য বক্সিং ম্যাচে রেফারি থাকেন। জ্যোতি সংজ্ঞাহীন হয়ে যাওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কী ভুল জায়গায় আঘাত লাগার কারণেই লুটিয়ে পড়েছেন প্রতিশ্রুতিমান এই বাঙালি তরুণী বক্সার?

এমন অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন ক্লাবের সম্পাদক অসীম হালদার। তিনি জানিয়েছেন, জ্যোতি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবান বক্সার। এদিন ক্লাবে বক্সিং প্র্যাকটিস চলাকালীন রেফারিও ছিলেন সেখানে। প্র্যাকটিসে কিছুই হয়নি।

জ্যোতির দেহ ইতোমধ্যেই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে জ্যোতির দেহ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। জ্যোতির মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। 

প্রিয় খেলা/আশরাফ