বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (বামে) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের লোগো (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
‘দুদক থেকে ক্যানসার ছেঁটে ফেলুন’
আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯, ১৬:৩৭
(প্রিয়.কম) বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্বর্ণযুগ চলছে। তাই এখন অর্থনৈতিক ক্রাইম (অপরাধ) হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভেতরে কোনো ক্যানসার থাকলে সেগুলো ছেঁটে ফেলুন বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
২৭ জুন, বৃহস্পতিবার দুপুরে দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য করে আদালত। বিষয়টি প্রিয়.কমকে জানান সংশ্লিষ্ট মামলার আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। তিনি বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার পর এ মামলার শুনানি শুরু হয়। শেষ হয় সাড়ে ১২টার দিকে। এ সময়ের মধ্যে আদালত অনেক মন্তব্য করেছে।
তিনি জানান আদালত বলেছে, ‘দুদককে অনেক পাওয়ার (ক্ষমতা) দেওয়া হয়েছে। তাই সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এ সংস্থাটি শক্তিশালী না হলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে না। আর দুদকের মাঝে দুর্নীতিবাজ থাকলে সেসব দুর্নীতিবাজ ক্যানসারগুলোকে ছেঁটে ফেলতে হবে।’
‘ভুল আসামি’ হয়ে ২৬ মামলায় কারাগারে থাকা টাঙ্গাইলের পাটকল শ্রমিক জাহালমের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন।
হাইকোর্ট দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খানকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন স্বর্ণযুগ চলছে। তাই এখন অর্থনৈতিক ক্রাইম হওয়ার সুযোগ রয়েছে। দুদককে অনেক পাওয়ার (ক্ষমতা) দেওয়া হয়েছে। তাই সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দুদককে কাজ করতে হবে। দুদক শক্তিশালী না হলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে না। আর দুদকের মাঝে দুর্নীতিবাজ থাকলে সেসব দুর্নীতিবাজ ক্যানসারগুলোকে ছেঁটে ফেলতে হবে।’
আদালত আদেশে বলে জাহালম কাণ্ডে দুদকের করা অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট আগামী ১৯ জুলাই আদালতের দাখিল করতে হবে। এ মামলার পরবর্তী শুনানির আগামী ১৯ জুলাই দুপুর ২টায় ধার্য করেছে আদালত।
জাহালমের কারাবাসের বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে নিয়ে আনা আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত বৃহস্পতিবার শুনানিতে অংশ নেন। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। শুনানিতে দুদকের আইনজীবী আদালতকে বলেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যে বিভ্রান্ত হয়ে জাহালমের নাম মামলায় এসেছে।
সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেকের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে ২৬টিতে জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। চিঠি পাওয়ার পর দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে পাঁচ বছর আগে জাহালম বলেছিলেন, তিনি সালেক নন। বাংলায় লিখতে পারলেও ইংরেজিতে লিখতে জানেন না। কিন্তু নিরীহ পাটকলশ্রমিক জাহালমের কথা সেদিন দুদকের কেউ বিশ্বাস করেননি। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের এসব মামলায় জাহালম গ্রেফতার হন। তিনি জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন।
গত ৩০ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোয় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।
শুনানি নিয়ে আদালত জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেন। একই সঙ্গে নিরীহ জাহালমের গ্রেফতারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতিনিধি ও আইনসচিবের প্রতিনিধিকে ৩ ফেব্রুয়ারি (আজ) সকাল ১০টায় সশরীরে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত), মামলার বাদী আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, স্বরাষ্ট্রসচিবের (সুরক্ষা) প্রতিনিধি যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন এবং আইন সচিবের প্রতিনিধি সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম আদালতে হাজির হন।
শুনানির শুরুতে দুদক চেয়ারম্যানের পক্ষে আদালতে বক্তব্য দেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি আদালতকে জানান, জাহালমের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরে মানবাধিকার কমিশন ও দুদকের অধিকতর তদন্তে জাহালম নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।
প্রিয় সংবাদ/রুহুল