কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

গত ২১ মে জামালপুরের রানাগাছা নামক স্থান থেকে ফাগুনের মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।

সাংবাদিক ফাগুন হত্যার একমাস, মামলার অগ্রগতি নেই

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রিয়.কম
প্রকাশিত: ২১ জুন ২০১৯, ২০:২৬
আপডেট: ২১ জুন ২০১৯, ২০:২৬

(প্রিয়.কম) তরুণ সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন হত্যাকাণ্ডের এক মাস পূর্ণ হলো আজ। গত ২১ মে ফাগুনকে হত্যা করে জামালপুর ও নান্দিনার মাঝামাঝি রানাগাছা এলাকায় রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা হয়। সেদিন মধ্যরাতে ফাগুনের মরদেহ উদ্ধার করে জামালপুর রেলওয়ে পুলিশ। এরপর ২৪ মে ফাগুনের বাবা সাংবাদিক কাকন রেজা বাদী হয়ে জামালপুর রেলওয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

হত্যা মামলা দায়েরের একমাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মামলার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইতোমধ্যে রেলওয়ের পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে দুজনকে গ্রেফতার করলেও প্রথম দফা রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে কোনোকিছু জানতে পারেনি পুলিশ।

ইহসান রেজা ফাগুন অনলাইন পোর্টাল প্রিয় ডটকমের ইংরেজি বিভাগের সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন। কিছুদিন আগে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছিলেন তিনি। আরেকটি নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজের ইংরেজি বিভাগের সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। জাগো নিউজের অফিসে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে গত ২১ মে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ফাগুন। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর থেকেই বাড়ির সঙ্গে ফাগুনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাতে  জামালপুরের রানাগাছা নামক স্থানে ঢাকা-জামালপুর রেললাইনের পাশে তার মরদেহ পাওয়া যায়।

মামলার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা জামালপুর রেলওয়ের থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রকিবুল হক জানান, জামালপুরের ইসলামপুর এলাকা থেকে পাংখা নামে একজন এবং ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে তানজিল নামে একজন, মোট দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা মূলত অজ্ঞান পার্টির সদস্য। প্রথম দফায় দুদিন করে রিমান্ডে নেওয়ার পরও এদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তানজিলের জন্য আরও ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

এসআই রকিবুল হক বলেন, মূলত আমরা ছিনতাইয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই এগুচ্ছি। যেহেতু নিহত সাংবাদিক ফাগুনের কাছে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন ছিল, এজন্যও অজ্ঞানপার্টির লোকজন তাকে টার্গেট করতে পারে। তবে আমরা হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারটিও মাথায় রেখেছি। কারণ ছিনতাইকারীরা সাধারণত ছিনতাইয়ের পরে ট্রেনে থেকে ভিকটিমকে ফেলে দেয়। এতে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন থাকে। কিন্তু সাংবাদিক ইহসান রেজার গায়ে সে রকম কোনো চিহ্ন ছিল না। সুতরাং এটাকে কোনো সাধারণ ছিনতাইয়ের ঘটনা হিসাবে গণ্য করাও সম্ভব নয়।

এদিকে যে এলাকায় সাংবাদিক ইহসান রেজা ফাগুনের মরদেহ পাওয়া যায়, সেখানের লোকজনও ঘটনাটিকে সাধারণ ছিনতাই বা ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়া মানতে নারাজ।

আব্দুল জলিল নামের যে ব্যক্তি প্রথম ফাগুনের মরদেহ দেখতে পান তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, সাধারণত ট্রেন থেকে কেউ পড়ে গেলে দূরে ছিটকে যাবার কথা। কিন্তু ফাগুনের মরদেহ ট্রেন লাইন থেকে দুই থেকে আড়াই ফুটের মধ্যে ছিল। তা ছাড়াও তার দেহ রেললাইনের পার্শ্বে শোয়ানো অবস্থায় ছিল এবং ট্রেন থেকে পড়লে এভাবে থাকার কথা নয়। ট্রেন থেকে কেউ পড়ে গেলে সাধারণত গায়ে যে ধরনের চিহ্ন থাকে তাও তার গায়ে ছিল না।

একই কথা বলেন স্থানীয় দোকানি রমজান মেম্বার। রমজান মেম্বার বলেন, ‘ট্রেন থেকে কেউ পড়ে গেলে সাধারণ ট্রেনের যাত্রীরা চিৎকার করে। কিন্তু সেদিন ট্রেন যাবার সময় এ ধরনের কোনো চিৎকার আমাদের কানে আসেনি।’

রমজান মেম্বার আরও বলেন, ‘আমার দোকান থেকে দুইশ মিটারের মধ্যে ওই সাংবাদিকের মরদেহ পড়ে ছিল। যদি ট্রেন থেকে পড়ত, তাহলে আমরা অবশ্যই টের পেতাম।’

ট্রেন থেকে না পড়লে কীভাবে এখানে ফাগুনের মরদেহ এলো, এমন প্রশ্নে রমজান মেম্বারের দোকানে জমায়েত লোকজন সন্দেহ করেন, এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জামালপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাপস চন্দ্র পন্ডিত জানান, ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারটি ঘটনার দুদিন পর ২৩ মে কমিউটার ট্রেনের সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট (এটিএস) দুলাল হোসেন তাকে জানান। দুলাল বিষয়টি নান্দিনা স্টেশন মাস্টারকে জানিয়েছিলেন কিনা এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে এই প্রতিবেদককে দুলালের মুঠোফোন নম্বরটি দেন তিনি। বিষয়টি জানতে গত ১০ দিন ধরে দুলালের মুঠোফোন নম্বরে ফোন দেওয়া হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কমিউটার ট্রেনের জামালপুরের দায়িত্বে থাকা বাচ্চু মিয়া জানান, দুলাল ঈদের আগে ছুটি নিলেও এখনো কাজে যোগ দেয়নি।

জামালপুর রেলওয়ে থানার ওসির ভাষ্যমতে, দুলাল জানিয়েছিলেন সেদিন ট্রেনের ছাদ থেকে একজন পড়ে গিয়েছিল।

ফাগুনের ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু জানিয়েছেন, ‘সেদিন ফাগুন তাকে জানিয়েছিল সে বেশ ভালো ইফতার করেছে। চানাচুরওয়ালা তার পেঁয়াজ-মরিচ কেটে দিয়েছে। তারপর পলিথিনে পিয়াজু মুড়ি মাখিয়ে সে ইফতার সেরেছে।’

প্রশ্ন উঠেছে, ফাগুন যদি ট্রেনের ছাদে থাকত তবে এভাবে ইফতার করার সুযোগ ছাদে থাকার কথা নয়। বিষয়টি জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) রকিব বলেন, ‘ছাদে ভ্রমণরত কারও এভাবে ইফতার করার সুযোগ নেই। কারণ চানাচুরওয়ালারা সাধারণত ছাদে ওঠে না।’

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও জানান, দুলালের এখন পর্যন্ত কাজে না ফেরা এবং তার ফোন বন্ধ থাকায় অনেক কিছুই জানা সম্ভব হচ্ছে না। দুলাল ফিরলে এই ব্যাপারগুলো পরিষ্কার হতো।

এদিকে ফাগুন হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব-১৪। জামালপুরের দায়িত্বে থাকা র‌্যাব-১৪-এর পুলিশ সুপার পর্যায়ের কমান্ডিং অফিসার নিহত সাংবাদিক ইহসান রেজা ফাগুনের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কথা বলেছেন, এমনটা জানিয়েছেন ফাগুনের পিতা সাংবাদিক কাকন রেজা।

এ ছাড়াও পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন পিবিআই’র জামালপুরের প্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রানী সরকার জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি তাদের নজরেও রয়েছে।’

তবে এতগুলো সংস্থার নজরে থাকা এবং রেলওয়ে পুলিশের কার্যক্রম সত্ত্বেও একমাস হলে গেলেও মামলাটির তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন ফাগুনের পরিবার ও তার সহকর্মীরা।

তাদের ভাষ্য, অনেক বড় ঘটনাই অল্প সময়ের মধ্যে সব তথ্য উদঘাটন করার উদাহরণ রয়েছে আমাদের সামনে। আইনশৃংখলা বাহিনী চেষ্টা করলে এই রহস্যও দ্রুত সময়ের মধ্যে উদঘাটন করা সম্ভব।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল