কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সুজান হক ও অর্চিতা স্পর্শিয়া। ছবি: সংগৃহীত

‘আবার বসন্ত’: মায়ের আয়নায় স্পর্শিয়া যেমন

প্রিয় ডেস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১ জুন ২০১৯, ১৮:৪১
আপডেট: ১১ জুন ২০১৯, ১৮:৪১

(প্রিয়.কম) সুজান হকের জীবনে মেয়ে অর্চিতা স্পর্শিয়া ছাড়া আর কেউ নেই। সুজান একটা সময় শিক্ষকতা করেছেন। সেই সঙ্গে সাংবাদিকতাও। দেশের প্রথম সারির একটি দৈনিকে লিখেছেন অনেক দিন। এখন বই লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত বেশি। জগৎ-সংসারে টিকে থাকার লড়াইয়ে মা-মেয়ে একে অপরের সঙ্গী।

অনন্য মামুন নির্মিত ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘আবার বসন্ত’ সিনেমার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটেছে স্পর্শিয়ার।

কয়েক দিন আগে ‘আবার বসন্ত’ ছবিটি ঢাকার একটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখেছেন সুজান। এরপরই ছবিটির কিছু খুঁটিনাটি ভুল তুলে ধরে শুধু প্রিয়.কমের পাঠকদের জন্য তার নিজের মন্তব্য লিখেছেন। তার সেই মন্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো।

নিউ মার্কেটের বলাকা সিনেমা হলে গত কয়েক দিন আগে ‘আবার বসন্ত’ দেখতে গিয়ে দেখা পেলাম দুই কিশোরের। হাতে টিকেট নিয়ে চলচ্চিত্রের পোস্টার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন তারা। কাছে গিয়ে বললাম, ঈদে শাকিবের (শাকিব খান) চলচ্চিত্র না দেখে, এ ছবিটিই যে দেখতে এলে? তারা বলল, টেলিভিশনে আমরা ছবিটির ট্রেলার দেখেছি। ভালো লেগেছে। তখনই ঠিক করেছি আমরা এটাই দেখব।

গল্পটি এ রকম—বিপত্নীক নিঃসঙ্গ একজন বাবা। বয়স ৬৫। তিন ছেলে-মেয়েকে শিক্ষিত করেছেন। বিত্ত-বৈভব যা প্রয়োজন জীবনের জন্য, তার সবই দিয়েছেন। ওরা সবাই সুখী। পরিবার নিয়ে, কাজ নিয়ে ওরা মহাব্যস্ত। নিঃসঙ্গ বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা তেমন প্রয়োজন মনে করে না।

এমন অবস্থায় মানুষটির একদিন মনে হলো, তার একজন সঙ্গী প্রয়োজন। বিজনেস ম্যান অব দ্যা ইয়ার খেতাবপ্রাপ্ত শিল্পীপতি ইমরান চৌধুরী সম্মানহানি হবে এমন কাজ তিনি করতে পারেন না। তাই জীবনসঙ্গীর খুঁজে পাওয়ার সাইটে বিজ্ঞাপন দিলেন। এরপরই ঘটতে থাকে চমকপ্রদ সব ঘটনা।

শিক্ষিতা, স্মার্ট, সুন্দরী তরুণী তিথি; যে জটিলতাহীন জীবনকে সাপোর্ট করে। মানসিক-আত্মিক সম্পর্ককে প্রাধান্য দেয়। তিথির বাবাও মারা গেছে। নিঃসঙ্গ মা আবার বিয়ে করেছেন জুনিয়র এক যুবককে। বয়সে তরুণ হলেও তাদের দুজনের মানসিক বোঝাপড়াটা তিথি মেনে নিয়েছে ভালোভাবেই।

তিথির প্রেম ছিল তারই সমবয়সী এক তরুণের সঙ্গে। কিন্তু ছেলেটি কেবল তিথির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইত; যা সে ভয় পেত। ছোটবেলায় দেখা এক দম্পতিকে ওর মনে পড়ে যেত। স্বামীটি প্রতিদিনই জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করত। স্ত্রীকে মারধর করত। তিথি ফোবিয়াতে আক্রান্ত হয়।

নর-নারীর প্রেম মানেই কি শুধুই শরীর? আত্মিক-মানবিক সম্পর্ক থাকতে পারে না? এ বিষয়টা তিথিকে ভাবায়। সিনিয়র সিটিজেন ইমরান চৌধুরীর সাইটে অ্যাপ্লাই করে। তারও পছন্দ হয়। কিন্তু তিথি শর্ত জুড়ে দেয়। কয়েক মাস দুজনে একসঙ্গে থাকবে। নিজেদের স্বভাব-চরিত্র বুঝবে। দুজনেই কিছু ছাড় দেবে। যদি দুজনেই দুজনকে মেনে নিতে পারে, বুঝতে পারে, তাহলেই বিয়েটা হবে। নয়তো নয়। ইমরান চৌধুরী এতে রাজি হয়। তার জীবনে ঘটতে থাকে নানা ঘটনা।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে চমৎকার এক বোঝাপড়া তৈরি হয়। তৈরি হয় আত্মিক-মানবিক সম্পর্কও। কিন্তু ইমরান চৌধুরীর সন্তানেরা এসব মেনে নিতে পারে না। বিয়ের সিদ্ধান্ত হবার পর ছোট ছেলেটি তিথিকে খুন করে ফেলে। সন্তানের খুনের দায় নিঃসঙ্গ পিতা নিজের কাঁধেই তুলে নেন। ফাঁসির রায় মেনে নেন।

‘আবার বসন্ত’ পরিচ্ছন্ন চলচ্চিত্র। তথাকথিত নাচ-গান নেই। কিন্তু কিছু অসংগতি রয়েছে, যা না বললেই নয়। এতে দুটো গান ব্যবহার করা হয়েছে। দুটো গানই সিচুয়েশনাল সং। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে চমৎকার লোকেশনে। ইমরান-তিথির রসায়ন সিকোয়েন্সে দর্শক যখন মজে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই ধুম করে মাঝপথে গান দুটো শেষ না করেই বন্ধ হয়ে আবার গল্পে ফিরে যায়। দর্শক হোঁচট খায়।

‘মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষে-রো সনে’ গানটির প্রতিটি লাইন আমাদের অনেকেরই মুখস্থ। সেখানে মানুষে-রো-র জায়গায় কেন মানুশ্যা-রো উচ্চারণ করা হলো? শ্রুতিকটু লেগেছে। গানটির আরও যত্ন নেওয়া যেত।

গল্পের সঙ্গে মিল রেখে ইমরান চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবন দেখানো যেত। সেখানে তার ড্রয়িং রুমে এক সেট সোফা কেন? আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, দেয়াল, ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ছিল দৈন্য। তিথির মাকে দেখে মনে হলো—মার্জিত, শিক্ষিত, স্মার্ট মহিলা। সেখানে একটি তীর্যক সংলাপের জন্য তার লিভিং রুমে কেন পাশ্চাত্যের পর্নো টাইপের কিছু ফটোগ্রাফ (বড় করে) দেয়ালে টাঙানো হলো? যা দৃষ্টিকটু লেগেছে।

তিথি ও ইমরান চৌধুরীর সংলাপ চলছে বালির একটি বিচের ধারে। সংলাপের একপর্যায়ে হঠাৎ করে পুরো পর্দা কালো হয়ে গেল! তারপরই দেখা গেল তিথি ইমরান চৌধুরীর চুল তোয়ালে দিয়ে মুছে দিচ্ছে। তিথিকে খুশি করার জন্যই নাকি পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিল ইমরান চৌধুরী।

ভালো কথা। কিন্তু পুরো পর্দা কালো করতে হলো কেন? সমুদ্রে ঝাঁপ দেবার পানি ছলাৎ করে পাথরের গা ঘেঁষে উপরে ওঠার শৈল্পিক দৃশ্যই তো দেখানো যেত। চোখের সামনে ধুম করে বিশাল কালো পর্দায়, দর্শক বিরক্ত হয়েছে।

কোর্টে বাবার ফাঁসির রায় হবে। বাড়ির বুয়া, ম্যানেজার, সন্তানেরা ছিলেন। কিন্তু একমাত্র কন্যাকে দেখা গেল না। গল্পের কারণে তাকে হাজির রাখাটা জরুরি ছিল।

শিল্পী নির্বাচন সঠিক ছিল। তারিক আনাম খান দক্ষ অভিনেতা। ইমরান চৌধুরীর চরিত্রটি যথার্থই ফুটিয়ে তুলেছেন। তিথিরূপী স্পর্শিয়াও ভালো করেছে। তারিক আনামের মতো সিনিয়র অভিনেতার পাশে, নিজের অভিনয় চালিয়ে নেওয়াটা সহজ নয়।

প্রত্যেক শিল্পীই তার নিজ নিজ জায়গা থেকে ভালো অভিনয় করেছে। প্রতি রাতে স্বামীর হাতে মার খাওয়া ছোট্ট চরিত্রের রেশমিকে দর্শকরা মনে রাখবে। সংলাপ দুর্দান্ত, পরিশিলীত। এই চলচ্চিত্রটি সব বয়সী একসাথে বসেই দেখতে পারবে।

গল্পটি ভালো লেগেছে। আমাদের অনেকেরই ঘরে এই সমস্যাগুলো থাকে। কিন্তু সন্তানেরা তা অনুধাবন করে না বা করতে চায় না। বাবা-মা’রা কি শুধুই বাবা-মা? তারা কি মানুষ নয়? তাদের জীবনেও কি বসন্ত থাকতে নেই?

যদি বাবা অথবা মা সঙ্গীহীন হন সকল সন্তানকে এটি ভাবাবে। আর এই বার্তাটিই অনন্য মামুন দিয়েছেন। গল্পনির্ভর একটি চলচ্চিত্র উপহার দেওয়ার জন্য নির্মাতাকে ধন্যবাদ দিতেই হবে।

প্রিয় বিনোদন/আজাদ চৌধুরী