কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আরিফিন শুভ, ঐশী, ফয়সাল আহমেদ, সানী সানোয়ার ও তাসকিন রহমান। ছবি: শামছুল হক রিপন

মিশন এক্সট্রিম: শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানালেন নির্মাতা-অভিনয়শিল্পীরা

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ২০:১২
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ২০:১২

(প্রিয়.কম) কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে চলছে শুটিং। কেউ টেরই পাচ্ছেন না ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবির শুটিং কখন, কোথায় হচ্ছে। কারণ শুটিং চলাকালে অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে কলাকুশলীদের ছবি তোলায় রয়েছে কঠিন বাধা-নিষেধ। অবশ্য সে দেয়াল কেউ ভাঙেননি! তাই ছবিটির কর্মযজ্ঞকে ঘিরে বেশ আগ্রহ অনেকের। ৩০ দিনেরও বেশি সময় টানা শুটিং শেষে তারই অভিজ্ঞতা আজ জানালেন ছবির নির্মাতা থেকে শুরু করে জড়িত অভিনয়শিল্পীরা।

রাজধানীর ঢাকার হাতিরঝিলে অবস্থিত ক্রিকেটার্স কিচেন রেস্তোরাঁয় ২৯ এপ্রিল, সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ছবির পুরো ইউনিট। উদ্দেশ্য ছিল শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা সাংবাদিকদের সঙ্গে শেয়ার করা।

বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ অ্যাকশন থ্রিলারধর্মী ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর পর একই প্রতিষ্ঠানের পুলিশি অ্যাকশন থ্রিলার ছবি ‘মিশন এক্সট্রিম’-এ যুক্ত হয়েছেন আরিফিন শুভ। চরিত্র ধারণের জন্য করেছেন কঠোর পরিশ্রম। এই সময়টাতে নিজেকে রেখেছেন ‘ছোট্ট’ এক গন্ডির ভেতরে।

ছবিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আরিফিন শুভ বলেন, ‘প্রত্যেকটা কাজ আমার যে বিশ্বাসের জায়গা থেকে করি সেটা হলো, একটা ভালো কাজ হবে। দর্শকের ভালো লাগবে, ইন্ডাস্ট্রিটা এগিয়ে যাবে। এই ছবিটাও সেই বিশ্বাস থেকেই করা। তবে এটা ঠিক যে “মিশন এক্সট্রিম” আমার করা সবচেয়ে ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জের একটা কাজ। আমাদের এখানে হয়তো এর আগে এভাবে কাজ হয়নি।’

‘যে চরিত্রটি করেছি এর কোনো রেফারেন্স ছিল না। জিরো গ্রাউন্ড থেকে ক্যারেকটার ডেভেলপ করতে হয়েছে। আমি যে সামনে থেকে দেখব এ ধরনের ফিজিক্যাল ট্রান্সফরমেশন কেউ করেছে আমাদের এখানে, সেটাও নেই। কারণ আমরা এভাবে ফিজিক্যাল লেবার দিয়ে অভ্যস্থ না।’

ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

এই অভিনেতা মনে করেন, সিনেমা হলো ঈদের নতুন পোশাকের মতো। চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে একটি ছবিতে সবচেয়ে বেশি শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা এ ছবির মধ্য দিয়ে তার হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে শুভ বলেন, ‘সিনেমাটা তো ঈদের জামার মতো। আগেই যদি সব বলে দিই তাহলে আর আমেজটা থাকে না। দেশের বাইরে যদি তাকাই তাহলে তো আমরা সবাই বুঝতে পারি, ঠিক কী ধরনের প্রসেসের মধ্য দিয়ে শুটিং হয়। আমার ক্যারিয়ারে এত লম্বা আর্টিস্টের লিস্ট নিয়ে কখনো কাজ করিনি।’

‘অসংখ্য নতুন কিছু বিষয় আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের এ সিনেমাটিতে। আমরা তো মানুষ, আমরা অ্যাঞ্জেল নই। আমাদের ভুল-ত্রুটি হবেই। আমাদের বেস্টটা দিয়েছি। এই ছবি অনেক ব্যবসা করুক, অনেক কিছু করুক, আবার কিছু না হোক আমার তাতে করে খুব একটা কষ্ট লাগবে না। কারণ আমি আমার বেস্টটা দিয়েছি।’

ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের একটিতে অভিনয় করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। এর মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছে তার। চেনা জগত ছেড়ে ব্যস্ত হয়েছেন সিনে দুনিয়ায়। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ খেতাব জিতে ঘুরে এসেছেন মিস ওয়ার্ল্ডের চূড়ান্ত আসর থেকে। কাজটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভাগ্যবান মনে করেন নিজেকে।

এই ছবির মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে ঐশীর। ছবি: শামছুল হক রিপন

তিনি বলেন, ‘আমি তো সিনেমাতে নতুন, খুব একটা কিছু বুঝি না। তবে এতদিন ভালো সিনেমাতে অভিনয় করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এর আগে অনেকগুলো অফার পেয়েছিলাম। কিন্তু কাজগুলো আমি যেমন চাচ্ছিলাম, ঠিক তেমন নয়। তখন কেউ কেউ বলতে লাগল, “তুমি ভুল করছ”। এভাবে একটার পর একটা ছবি ছেড়ে দিয়ে তোমাকে পরে ঝামেলায় পড়তে হবে।’

‘এ ছবিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে মনে হয়েছে আমি আসলে ভুল করিনি। একটা সিনেমাতে অভিনয় শুরু করার আগে যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার হয়, আমি মনে হয় সেটা নিয়েই কাজটা শুরু করতে পেরেছি। এ ছবিটা আমার সিনেমার ক্যারিয়ারের শুরুটা অনেকটা মসৃণ করে দিবে।

‘কপ ক্রিয়েশন’-এর ব্যানারে নির্মিত হচ্ছে ‘মিশন এক্সট্রিম’। দর্শক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ‘কপ ক্রিয়েশন’র ব্যানারে সিনেমাটির গল্প বলার ধরণ, অ্যাকশন দৃশ্য চিত্রায়ন এবং বিভিন্ন দৃশ্যে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান সিনেমাটির সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা অ্যাটাক ছবিতে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকমন জয় করেছেন তাসকিন রহমান। ছবি: শামছুল হক রিপন

এরই ধারাবাহিকতায় এই ছবিতেও রয়েছেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘ছবিটিতে প্রথম অংশের কাজের অভিজ্ঞতা অসম্ভব ভালো। আমি চেষ্টা করেছি, যতটুকু প্রয়োজন দেবার। দর্শকদের চাহিদার জন্যই আমাদের পুরো টিমটার আবার ফিরে আসা। জানি না কতটুকু করতে পেরেছি। পুরো সিনেমাটা দেখতে পারলে তখনই বোঝা যাবে। এ কাজটা ক্যারিয়ারের একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবিটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদ। ছবিটির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন সানী সানোয়ার।  

ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত আছি। তবে নির্মাতা হিসেবে এটাই আমার প্রথম সিনেমা। আমার সাধ্যমত চেষ্টা করছি, চিত্রনাট্যের চরিত্রগুলোকে বাস্তবসম্মত করে তুলে ধরতে। ঢাকা অ্যাটাকের পর এই ছবিটি নিয়ে তো সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যাশা আছে, কাজ করার সময় আমার মধ্যে সে বিষয়টা খুব ভালো করেই গেথে ছিল।’

ছবির নির্মাতা ফয়সাল আহমেদ। ছবি: শামছুল হক রিপন

সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, সুমীত সেনগুপ্ত, মাজনুন মিজান, ইরেশ জাকের, মনোজ প্রামাণিক, আরেফ সৈয়দ, রাশেদ মামুন অপু, এহসানুল রহমান, দীপু ইমামসহ অনেকে।

সিনেমাটির চিত্রনাট্যকার-নির্মাতা সানী সানোয়ার জানিয়েছেন, কেন তারা এত গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সিনেমাটির শুটিং করছেন। তার ভাষায়, ‘দেশের বাইরে বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে যে প্রসেসিংয়ের মধ্য দিয়ে সিনেমা নির্মিত হয়, আমরাও চেষ্টা করেছি সে প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে। যে ধরনের গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে শুটিং করেছি, আমার ধারণা এটা সিনেমার জন্য ভালো হয়েছে।’

‘একটা সিনেমা শেষ করার পর যে অভিজ্ঞতাটা হয়, এরপর যে ধরনের আপগ্রেডেশন হয় একটা নির্মাণকারী দলের বা অভিনেতাদের, তার একটা মান উন্নয়নের পর্ব দেখা যাবে মিশন এক্সট্রিমে। বাংলাদেশের যে সংস্কৃতি, অপরাধ প্রবণতা, ভালো কাজের সক্ষমতা, সামাজিক ভ্যালুজ, রিলিজিয়াস বিলিভের যে ভিত্তি, সেই সমস্ত বিষয়ের ওপর নিরর্ভর করেই ছবির গল্পটা সাজানো হয়েছে।’

সিনেমাটির চিত্রনাট্যকার-নির্মাতা সানী সানোয়ার। ছবি: শামছুল হক রিপন

ক্ষুদ্র বাজেট ও টেকনিক্যাল সাপোর্টের অপর্যাপ্ততার মধ্য দিয়ে যতটুকু ভালো কাজ করা সম্ভব তারা সেটি করেছেন বলে মনে করেন সানী সানোয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা এ সিনেমাতে ঢাকা অ্যাটাকের চেয়েও আরও অনেক বেশি টেকনিক্যালি বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজটা করেছি, এতটুকু বলতে পারি।’

‘আমি “ঢাকা অ্যাটাকে” চিত্রনাট্যকার হিসেবে ছিলাম। টেকনিক্যাল বেশ কিছু ডিরেকশনও দিয়েছি। কিন্তু এবার আমি বাই নেমে ডিরেকশনে এসেছি। কারণ আমি যে গল্প লিখেছি, সেটা আমি যে চোখ দিয়ে দেখেছি, সেটা তো আর কেউ দেখেনি। তাই একজন নির্মাতা যেভাবেই দৃশ্যধারণ করুক না কেন, আমার মতো করে হবে না। হয়তো আমার চেয়ে বেটার হবে। কিন্তু আমি চাই কাজটা আমি যেমন দেখি, ঠিক তেমনই হোক। সেজন্যই নির্মাণে আসা।’

তিনি বলেন, ‘সিনেমার টেকনিক্যাল দিকের কথা বলতে গেলে বাংলাদেশে মেধাবী যারা আছেন, আমরা তাদের নিয়ে কাজ করেছি। যখন দেখলাম সিনেমার মানটা আরেকটু ভালো করতে আমাদের আরও কিছু করতে হবে, তখন কলকাতা থেকেও আমরা টেকনিক্যালি সাপোর্ট নিয়েছি ও এক্সপার্ট নিয়ে এসেছি।’