কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

সারিকা সাবরিন। ছবি: শামছুল হক রিপন

হদিস নেই সারিকার

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৩১
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৩১

(প্রিয়.কম) লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন—এই তিনটি শব্দের সঙ্গেই একটা সময় ব্যস্ত থাকতেন মডেল ও অভিনেত্রী সারিকা সাবরিন। কিন্তু এখন তার শোবিজ জীবনের চিত্র ঠিক ভিন্ন। টিভি পর্দায় দেখাই যায় না! তারকাদের আয়োজনেও নেই তার পদচারণা। তার ব্যক্তিগত ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরও অনেকদিন ধরেই বন্ধ। তবে এখন কী করছেন তিনি? কীভাবে কাটছে সময়? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিছু মেলেনি।

শোবিজে সারিকার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফেসবুকে আগে বেশ অ্যাকটিভ থাকলেও এখন নেই। ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরের বাইরে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত তার একাধিক নম্বরে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ১৫ এপ্রিল, সোমবার বিকেলে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেও ফলাফল শূন্য।

তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, সারিকা তার ক্যারিয়ারে সুবর্ণ সময়ে গিয়ে তারকাখ্যাতি মেনটেইন করতে পারেননি। এ ছাড়া সময় মেনে কাজ না করা, বিয়ে করে ফেলা, হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, তার ক্যারিয়ারের জন্য কাল হয়েছে। কিন্তু যখন সারিকা সচেতন হয়েছেন, তখন আর সারিকার পূর্বের জায়গায় ফিরে যেতে পারেননি।

সারিকার কাছের বন্ধু চলচ্চিত্র তারকা মামনুন হাসান ইমন। তার সঙ্গেও কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই অভিনেত্রীর।

ইমন বলেন, ‘ওর সঙ্গে অনেকদিন ধরেই আমার কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। কোথায় আছে তাও জানি না। প্রায় তিন মাস আগে সবশেষ ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। কাজের প্রসঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো খবর পাচ্ছি না। মিডিয়া তো প্রফেশনাল জায়গা। এখানে এর বাইরে গিয়ে চললে তো হবে না।’

সারিকা মডেলিং শুরু করেন ২০০৬ সালে আর অভিনয় ২০১০ সাল থেকে। কিন্তু ২০১৩ সালের মাঝামাঝি হঠাৎ করেই নাটক ও মডেলিংয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। ২০১৪ সালে জানা যায়, ব্যবসায়ী মাহিম করিমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। তাদের ঘরে এক কন্যা সন্তানের জন্মও হয়। কিন্তু সাংসারিক জীবনে বনিবনা না হওয়ার কারণে একটা সময় গিয়ে ভেঙে যায় সংসার।

২০০১ সালে নির্মাণে এসেছেন চয়নিকা চৌধুরী। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে পরিচালক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি নির্মাণ করেছেন তিন শতাধিক নাটক-টেলিছবি। এই নির্মাতার নির্মিত অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন সারিকা।

চয়নিকা জানান, ২০১০ সালে তার নির্মিত ‘ঝগড়া বাড়ি’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই সারিকার এক ঘণ্টার টিভি নাটকে যাত্রা শুরু হয়। এতে সারিকার সহ-অভিনেতা ছিলেন অপূর্ব।

চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘সারিকা দেখতে সুন্দর ছিল, অভিনয়েও ভালো ছিল, রুচিবোধ ছিল, ওর পরিবারও ভালো ছিল। কিন্তু যে মানুষ জীবনের হিসাবে যখন কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, শৃঙ্খলা মেনটেইন করতে পারে না, তখন তার জীবন থেকে অনেক উপাদানই হারিয়ে যায়। যেটা ওর বেলায় হয়েছে।’

‘আবার কেউ যদি জীবনে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রিকভার শেষে ফের ভুল স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়, তখন আর সে নিজেকে নিজে ভালোবাসবে না। আর মানুষ যখন ডিসিপ্লিন হবে না, এরপর একটা সময় গিয়ে সে আর নিজেকে খুঁজে পাবে না’, যোগ করেন এই নাট্যনির্মাতা।

সারিকা যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছেন কিংবা যাদের সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক হয়েছে, তাদের কাছ থেকেও তিনি কষ্ট পেয়েছেন। এটাও তার শোবিজ জীবনটা বিপন্ন হওয়ার অন্যতম কারণ বলে করেন চয়নিকা।

তিনি বলেন, ‘তারপর হয়তো সে অ্যাডিকটেড হয়ে গেছে। সবাই তাকে হয়তো বারবার ইউজ করেছে। সবগুলো মিলিয়ে ও না দিশেহারা হয়ে গেছে। সারিকাও বিভিন্ন বিষয়ে তার জায়গা থেকে কমিটমেন্ট রাখতে পারেনি। তাই তাকে এখন আর শোবিজের কেউ বিশ্বাস করছে না।’

এই নির্মাতা জানান, সারিকার সঙ্গে প্রায় ১ বছর আগে তার সর্বশেষ কথা হয়েছিল। এক ঘণ্টার একটি নাটকে কাস্টিং করার বিষয়ে। কিন্তু যতবারই এই নির্মাতাকে সারিকা শিডিউল দেন, পরে একটা সময় গিয়ে তার ফোন ধরেন না বলে দাবি করেন চয়নিকা। এরপর আর তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয়নি।

চয়নিকা বলেন, ‘কিন্তু ওকে আমি অনেক পছন্দ করি। আমার কাছে মনে হয়, ও আঘাত পেতে পেতে মানসিকভাবে ডিস্টার্ব হয়ে গেছে। যার কারণে ওর মধ্য থেকে মূল্যবোধ বিষয়টা হারিয়ে গেছে। আমি প্রথম যে সারিকাকে দেখেছিলাম, ওই সারিকা প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন মানুষ ছিল। ওকে নিয়ে আমার অনেক আশা ছিল। আশেপাশে ওর যারা আছে, যারা ওকে কষ্ট দিয়েছে, তারাও ওর এই অবস্থার জন্য দায়ী।’

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটা সময় সারিকা ভীষণ সচল থাকলেও এখন ঠিক তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। এই অভিনেত্রী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে চলতি বছরের মার্চ মাসের ৩০ তারিখে সবর্শেষ পোস্ট দিয়েছেন।

সারিকার ভ্যারিফায়েড পেজ থেকে ভক্তদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কিন্তু এর আগে পেজ থেকে দেওয়া তার পোস্টটি ছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে।

অশিল্পীসুলভ আচরণের জন্য ২০১৮ সালের শেষের দিকে সারিকাকে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। তারপর তিনি নিজের আচরণের জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলেন।

এরপরই সংগঠনটি সারিকার ওপরে থাকা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে। ফের অভিনয়ে ফিরেন। কিন্তু অভিনয়ে আর নিয়মিত হতে পারেননি।

প্রিয় বিনোদন/রিমন