কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ঢাকায় ‘দিন দ্য ডে’ ছবির শুটিংয়ে অনন্ত জলিল। ছবি: শামছুল হক রিপন

‘নির্দ্বিধায় বলতে পারি, এটা আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র হবে’

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:১১
আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:১১

(প্রিয়.কম) চলচ্চিত্রের বর্তমান অস্থিরতা ও বাণিজ্যিক মন্দাভাব দূর করতে চলচ্চিত্রের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই দীর্ঘদিন পর ফের চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও অভিনয়ে ফিরেছেন নায়ক অনন্ত জলিল। এই নায়কের বিশ্বাস, তার ‘দিন: দ্য ডে’র ছবিটির মধ্য দিয়েই প্রেক্ষাগৃহে ফের দর্শকদের ‘জোয়ার’ বইবে। 

গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে চলছে বাংলাদেশ ও ইরানের যৌথ প্রযোজনার নতুন সিনেমা ‘দিন: দ্য ডে’র শুটিং। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার অদূরে রূপগঞ্জে শুটিংয়ের বিরতিতে প্রিয়.কমের মুখোমুখি হন অনন্ত জলিল।

চলচ্চিত্রে এ নায়কের যাত্রা ২০১০ সালে শুরু। চার বছর টানা অভিনয়, প্রযোজনা করেছেন। মাঝে দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার কথা শোনা গেলেও পরে আর হয়নি। এরপর যখন তার প্রত্যাবর্তন ঘটল, সেটা একদম ‘ভিন্নরূপেই’।

দীর্ঘ বিরতির পর এ প্রত্যাবর্তনে অনন্ত জলিল শুরু থেকেই মাথায় রেখেছেন দর্শকদের নতুন কী দেওয়া যায়। যেই ভাবনা, সেই কাজ। আঁটসাঁট বেঁধেই নেমেছেন তিনি। আর অতীতে যে ভুলগুলো করেছেন সেগুলো শুধুরে নিয়েই এ যাত্রাটা আরও মসৃন করতে চান তিনি।

অনন্ত জলিল বলেন, ‘যখন খোঁজ-দ্যা সার্চ দিয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করি তখন বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের অবস্থা বর্তমানের থেকে আরও খারাপ ছিল। অনেকেই বলেছিল, ছবি দেখাবেন কোথায়? ছবি দেখানোর মতো সিনেমা হল দেশে নেই। তখন ঢাকার আশেপাশে ও বাইরের হলগুলোতে অশ্লীল ছবি চলত। যাই হোক আমি যখন ছবিটি করলাম, তখন বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের নতুন একটা মার্কেট তৈরি হলো। তারপর একে একে ছয়টি ছবি করলাম, সে ছবিগুলো কেমন ব্যবসা করেছে, সেটা সবাই জানি।’

ব্যবসায়ী থেকে রাতারাতি নায়ক-প্রযোজক বনে যাওয়া অনন্ত জলিল কীভাবে আবারও প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফেরানো যায়, সে চ্যালেঞ্জ নিয়েই এ যাত্রায় মাঠে নেমেছেন। প্রিয়.কমের সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিতই দিলেন তিনি।

এ নায়কের কথায়, ‘আমি যখন গ্যাপ (বিরতি) দিলাম, মানে গত চার বছরের কথা বলছি- এই সময়টাতে বাংলা ছবির দর্শকদের আবার মেরে ফেলা হয়েছে। অসম্ভবকে সম্ভব করাই তো অনন্ত জলিলের কাজ। দেখি এবার দিন: দ্য ডে ছবির মধ্য দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফিরিয়ে আনতে পারি কি না। আরেকটা বিষয় আমি ভাবছি- এখন থেকে বছরে দু-একটা কমার্শিয়াল ছবি নিয়মিত করব। আর বিরতি দিব না।’

শুটিংয়ের বিরতিতে অনন্ত জলিল। ছবি: শামছুল হক রিপন

নায়ককে জিজ্ঞেস করি- আপনার ক্যারিয়ারের যে গ্রাফ সেটির দিকে যদি একটু ফিরে দেখি, সেটা এ যাত্রায় পাল্টে ফেলেছেন, এই সেন্টিমেন্টটা গ্রো হলো ঠিক কীভাবে? 

‘আমি সব সময় চাই আমার জায়গা থেকে আমার কাজগুলোর মধ্য দিয়ে একটা মেসেজ (বার্তা) সমাজের মানুষের কাছে যাক। যদি বিষয়টা তাদের মনে দাগ কাটে ভালো, তখনই আমার স্বার্থকতা। আমি কাজগুলো হিরো হওয়ার জন্য করি না। এখান থেকে নতুন করে পাওয়ার আর কিছু নেই’,বললেন অনন্ত জলিল।

পাশাপাশি তার সংযোজন, ‘দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাই আমার কাজ। এ কারণেই ইরানের সঙ্গে ছবিটি করছি। অনেকদিন পরে চলচ্চিত্রে এসেছি, নতুন কিছুই দর্শককে দেওয়ার জন্যই। সেটা মুখে বলতে চাই না, পর্দায় দেখবে দর্শক। এটুকু বলে রাখি, আগে যে কাজগুলো করেছি, সেগুলোর থেকে ভিন্ন। হয়তো অনেকেই ভাববে, এগুলো কথার কথা। কিন্তু নির্দ্বিধায় বলতে পারি, এটা আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র হবে।’

অনন্ত জলিল বলেন, ‘আমি যেহেতু চার বছর পর চলচ্চিত্রে আসলাম, তাই আমি চিন্তা করলাম দেশে যে ছবিগুলো করেছি, তারা তো দর্শক দেখেছেই। আবার ওই ধাঁচের ছবি যদি করি, দর্শক তো মনে করবে সেই একই বিষয়। এটা আমার মাথায় খুব ঘুরপাক খাচ্ছিল, নতুন করে কী আনা যায়। সেই ভাবনা থেকেই ভিন্নধর্মী গল্পে কাজ করা।’

মারামারির দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে হেলিকপ্টার থেকে লাফ দেওয়ার সময় অনন্ত জলিল। 

বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, ‘দিন: দ্য ডে’ ছবিটির মধ্য দিয়ে সেটি আরও জোরদার হবে বলে ধারণা অনন্ত জলিলের। 

এর ব্যাখা দিয়েছেন তিনি এভাবে—সিনেমাটিতে বাস্তব ও পরাবাস্তব দুটি জগৎ মিলে সুন্দর একটি সম্পর্ক ও একটি কাহিনী তৈরি হয়েছে। এই ছবির মাধ্যমে ইরানের মানুষ বাংলাদেশের সংস্কৃতি আর বাংলাদেশের মানুষ ইরানের সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।

‘দিন: দ্য ডে’ ছবিতে অনন্ত জলিল একজন সোয়াত অর্থাৎ বিশেষায়িত অস্ত্র, সামরিক উপকরণ এবং কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করে আইনশৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত এক সদস্যের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। সিনেমাটির শুটিং হবে কয়েক ধাপে। প্রথম ভাগের শুটিং হয়েছে ইরানে এবং এটি পরিচালনা করেছেন ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম।

এখন দ্বিতীয় ধাপের শুটিং চলছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে অংশের শুটিং নিয়ে মর্তজা অতাশ জমজম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে দাবি অনন্তর। আর তৃতীয় ধাপের শুটিং হবে ইস্তাম্বুলে।

সাধারণত একটি সিনেমার শুটিং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৬০ শেষ হলেও ‘দিন: দ্য ডে’ ছবির জন্য ১০০ দিন বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানান অনন্ত, যাতে ছবিটি আন্তর্জাতিক মানের হয়। ছবিটির বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ হবে ১৩ এপ্রিল।

ইরানে শুটিংয়ের সময় সে দেশের সরকার থেকে শুটিংয়ের জন্য তাদের সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত হেলিকপ্টারসহ আনুসাঙ্গিক যেসব বিষয় শুটিংয়ে লেগেছে তা সরবরাহ করেছেন। এজন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন অনন্ত জলিল।

ইরানের ওপর ইতিমধ্যেই পশ্চিমারা কঠোর অবরোধ জারি করেছে। দেশটির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিও সবার জানা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে, ছবিটি সেই প্রেক্ষাপটে নির্মিত হচ্ছে। এতে করে কী কোনো জটিলতায় পড়তে হতে পারে?

এমন প্রশ্নে অনন্ত জলিল বলেন, ‘১৯৪৭ সালের পর থেকেই ইরানের ওপর একটার পর একটা চাপ আসছে। আমি যতটুকু ইরানিদের মনোভাব জানি, ওই যে বলে না অভ্যাস হয়ে যায়, এখন ওরা এসব বিষয়ে অভ্যাসের দাস হয়ে গিয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেখে আসছে অবরোধ আসছে একের পর এক। আমি ইরানে গিয়ে যা দেখে এসেছি এবং সরকারের যে মনোবল আছে, তাতে করে ওদের মধ্যে এসব বিষয়ে আলোচনা নেই বললেই চলে।’

চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে ইরানে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন মুর্তজা অতাশ জমজম। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি নির্মাণ করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ও তথ্যচিত্র। ‘দিন: দ্য ডে’ ছবিটির ইরানি অংশের পরিচালনাও করেছেন তিনি। এই নির্মাতার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার বিষয়েও কথা বলেছেন অনন্ত জলিল।

তিনি বলেন, ‘তার বেশ কিছু ছবি বিশ্বের বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে। আমি গর্বিত, তার সঙ্গে কাজ করতে পেরে। বড় কথা হলো তার টিমটি বেশ পেশাদার। আমাদের এ ছবির যে ফাইট ডিরেক্টর, তিনি ইরানে প্রায় চারশ ছবিতে ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন।’

দীর্ঘ বিরতির পর এ চলচ্চিত্রটির মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে সুদিন ফেরানোর আশা করছেন অনন্ত জলিল। পাশাপাশি নায়ক হিসেবেও এ ছবির মাধ্যমে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান তিনি। 

ভিডিও দেখুন শুটিংয়ের কিছু অংশ:

প্রিয় বিনোদন/আশরাফ