কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রতীকী ছবি

গোপাল ভাঁড়ের দেড় হালি জোকস

প্রিয় ডেস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০১৯, ২০:১০
আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯, ২০:১০

(প্রিয়.কম) নিজের চনমনে ভাব বজায় রাখতে হাসির কোনো বিকল্প নেই। নানা কারণে মানুষ হেসে থাকেন। এর অন্যতম একটি অনুষঙ্গ হচ্ছে জোকস। তাহলে পড়ে নিতে পারেন গোপাল ভাঁড়ের কয়েকটি জোকস।

কে পেটুক

একদিন গোপাল ও মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রসহ সভা সদরের লোকেরা বসে আখ খাচ্ছে। মহারাজ আখ খেয়া সব আঠি গোপালের সামনে জড়ো করছে। তার দেখা দেখি সভাসদের সবাই গোপালের সামনে জড়ো করছে। তখন এক সময় গোপালের সামনে দেখতে দেখতে এক ঝুরি আঠি জমা হলো।

তখন মহারাজ বলল কী হে গোপাল, খিদে কি অনেক পেল নাকি তা না হলে পাঁচ ঝুড়ি আখ খেলে কীভাবে? তা না হলে এক ঝুড়ি আঠি হয় না। বলি পেটুক হলে নাকি?

গোপাল ভাঁড় বলল আমি তো আখ খেয়াছি এবং আঠিও ফেলেছি। কিন্তু আপনারা যে আখ খেয়েছেন তাতো আটি সুদ্ধ খেয়ে ফেলেছেন। না হলে আটি গেলো কই। তাই বলুন কে বেশি পেটুক।

আমায় ডেকেছিলে কেন?

গোপালের দোতলা বাড়ি তৈরি হলে সে তার প্রতিবেশী এক ভাইপোকে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে ডাকতে লাগলো, ‘রাখাল, ও রাখাল, কী করছিস ওখানে?’ রাখাল বুঝলো, কাকা দোতলা বাড়ি দেখাচ্ছে। তাই সে কোনো কথা বলল না। এর বহুদিন পর রাখালও নিজের চেষ্টায় ছোটখাট একটা দোতলা বাড়ি তৈরি করল। তারপর ছাদে উঠে ডাকতে লাগল, ‘কাকা কাকা, সে বছর আমায় ডেকেছিলে কেন?’

এর পর তোমার পালা

ছোটবেলা গোপাল ভাঁড় কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে বুড়োরা তাকে খেপাত আর হাসত, ‘গোপাল, এর পর তোমার পালা।’
শুনে গোপালের খুব রাগ হত। বুড়োদের কীভাবে জব্দ করা যায়, সেই পথ খুঁজতে লাগল গোপাল এবং এক সময় পেয়েও গেল।
শবদাহ আর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে গিয়ে ওইসব বুড়োদের বলতে লাগল, ‘এর পর তোমার পালা!’

হাটে গাই পায়েস খাই

গোপাল ভাঁড়ের ভাইপো আর তার স্ত্রীর মধ্যে ভীষণ ঝগড়া বেধেছে। মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে গেলেন গোপাল। বললেন, ‘বলি কী নিয়ে এত ঝগড়া হচ্ছে শুনি?’

গোপালের ভাইপো বলল, ‘দেখুন তো কাকা, আমি আগামী বছর একটা দুধেল গাই কিনব বলেছি। আর আমার স্ত্রী বলছে, সে নাকি গাইয়ের দুধ দিয়ে পায়েস রাঁধবে।’ ভাইপোর স্ত্রীও সমান তেজে চেঁচিয়ে উঠল।

দুহাত তুলে দুজনকে থামতে ইঙ্গিত করে গোপাল বললেন, ‘আস্তে আস্তে! গাধা নাকি তোরা?’

দুজন একটু ঠান্ডা হলে গোপাল ভাইপোকে বললেন, ‘আরে গাধা, তোর বউয়ের পায়েস রাঁধা তো পরের কথা। আমি যে বাড়ির পেছনে সবজির বাগান করেছি, সেসব যে তোর গরু খাবে, সে খেয়াল আছে?’ 

দাওয়াত না দিয়ে দায়িত্বহীনতা

গোপাল খেতে খুব পছন্দ করত। তো একবার বাড়ি ফেরার পথে দেখে এক বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে। খাওয়া দাওয়ার আয়োজন চলছে মন্দ না। গোপাল চট করে সেখানে ঢুকে পাত পেতে বসে পড়ল। খেতে শুরু করল। এমন সময় বিয়ে বাড়িত লোকজন খেয়াল করল এ লোকটা তো অচেনা। এ তো দাওয়াতি নয়! এ কোথ্থেকে এল? তখন একজন তাকে চেপে ধরল –

– এই দাদা, আপনি তো আমাদের দাওয়াতি নন, খেতে বসলেন যে বড়?

গোপাল ভাঁড়কে বিন্দুমাত্র বিচলিত মনে হল না। সে দিব্যি খেতেই থাকল। এবং খেতে খেতেই উত্তর দিল –

– দেখুন, আপনারা আমাকে দাওয়াত না দিয়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিতে পারেন। কিন্তু আপনাদের পড়শি হিসেবে আমি তো আর

দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিতে পারি না। কী বলেন, তাই নিজেই চলে এসেছি!

বলে গোপাল ভাঁড় ঠিক মনোযোগ দিয়ে দিব্যি খেতে শুরু করল। তখন উত্তর শুনে সবাই চমৎকৃত! উল্টো তখন সবাই তাকে তোষামোদ করে খাওয়াতে লাগল।

গোপালের আইন ব্যাখ্যা

লোক পরম্পরায় গোপালের সূক্ষ্ম বিচার বৃদ্ধি দেখে এক প্রতিবেশী তার মোকদ্দমা চালাবার জন্য গোপালকে অনুরোধ করে। কিন্তু গোপাল মোকদ্দমার কাহিনী শুনে বারবার না-না করা সত্ত্বেও প্রতিবেশী লোকটি নাছোড়বান্দা হওয়ায় বাধ্য হয়ে গোপাল প্রতিবেশীর মোকদ্দমাটি হাতে নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই মামলার হার হয়।

ভদ্রলোক কাঁদতে কাঁদতে বললে এ কি করলেন, আমার সব গেল। তখন গোপাল বলল, দেখুন ব্যারাম সেরে উঠতে উঠতেও লোক অনেক সময়ে হার্টফেল করে মারা যায়। তাকে ব্যারাম-মরা বলা যেতে পারে না। আপনার ব্যাপারটও ঠিক সেই রকম। মামলার বিচারে ‍আপনি হারেননি। হাকিমেরা মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর বিবেচনা করে রায় দেয় সাধারণত‍‍- তিনটি বিষয় হলো- অনুমান, প্রমাণ এবং স্বীকারোক্তি।

প্রথমত: অনুমনা; অনুমানটাও আপনার স্বপক্ষে ছিল, অর্থাৎ যে-কেউ মামলার বিবরণ শুনলে বলতে বাধ্য ছিল যে বিবাদী দোষী। হাকিমও নিশ্চয়ই তাই ভেবেছেন। কিন্তু অনুমানের ওপর নির্ভর করে তো আর রায় দেওয়া চলে না।

দ্বিতীয়ত: প্রমাণ; প্রমাণ করা এত শক্ত যে, ওর ভেতরে শেষ পর্যন্ত গলদ থেকেই যায়। আমি আপনার মামলা প্রমাণ করে ছেড়েছি, এ কথা যাকে জিজ্ঞাসা করবেন সেই বলবে, কিন্তু ওই যে বললাম-গলদ রয়ে গেছে গোড়ায়। থাকতেই হবে গলদ! বিপক্ষের উকিল আমাদের সব অকাট্য প্রমাণগুলি মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

তৃতীয়ত: স্বীকারোক্তি; আসামি লোকটা যদি ভদ্রতা করে দোষ স্বীকার করে যেতো, তাহলে আর কোনো কিছুতেই আটকাতো না আমাদের। কিন্তু তা সে কোনোমতেই করল না কিনা! তাতে আমি আর কী করতে পারি বলুন। মামলা জেতবার আগেই তো হার হলো। ব্যারাম থেকে সেরে উঠতে উঠতে হার্টফেল। এতে বলুন আমার কী দোষ আছে? কারণ এর বেশি আর ভদ্রলোককে কিছু বলতে পারেই না গোপাল।
ভদ্রলোক রেগেই চলে গেলেন।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল