কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

তাহসান খান। ছবি: শামছুল হক রিপন, প্রিয়.কম

‘দেশপ্রেমের দায়বদ্ধতা থেকেই কাজটা করেছি’

মিঠু হালদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০১৯, ২০:০৯
আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯, ২০:০৯

(প্রিয়.কম) গান, নাটক, টেলিফিল্ম—তিনটি ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন তাহসান খান। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে, কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু কারো কথায় কান দিয়ে দমে যাওয়ার পাত্র নন তিনি। অভিনয় করেছেন বড় পর্দায়ও। ‘যদি একদিন’ নামের সেই ছবি মুক্তি পাচ্ছে ৮ মার্চ। তিনি বলছেন, দেশের জন্য দায়বদ্ধতা থেকেই নিজের মতো করে কাজ করে যাচ্ছেন।

মুহাম্মাদ মোস্তফা কামাল রাজ নির্মিত ‘যদি একদিন’ ছবিটি মুক্তির আগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রিয়.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন তাহসান।

প্রিয়.কম: চলতি বছর কয়েকটা ছবি মুক্তি পেয়েছে। কোনোটাই বাণিজ্যিক সফলতা পায়নি। অন্যদিকে গত কয়েক বছর ধরেই চলচ্চিত্রে মন্দাভাব চলছে। এমন একটা সময়েই আপনার ‘যদি একদিন’ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। এই ছবিটার গতিপথ সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন?

তাহসান খান: এসব কিছু বিবেচনা করে ফিল্ম রিলিজ করা উচিত, নাকি আমরা একটা ভালো কাজ করেছি সেটা এখন রিলিজ করা উচিত। আসলে ইন্ডাস্ট্রিতে সিনেমা এখন কেমন করছে তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা যে গল্পটা বলছি, সেই গল্পটা এই সময়ের মানুষদের কাছে হৃদয়ে জায়গা করবে কি না। প্রায় এক বছর সময় নিয়ে কাজটা করার পর আমাদের মনে হয়েছে এখন যে জায়গাটায় গল্পটা এসে দাঁড়িয়েছে, এখন যদি আমরা জিনিসটা রিলিজ করি, গল্পটা মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিবে, হৃদয়ে দাগ কাটবে। এখন ব্যবসা কতটুকু করবে, যারা প্রযোজক আছেন, পরিবেশক সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা যদি ঠিকমত তাদের কাজটা করেন তাহলে ব্যবসা তো অবশ্যই হবে। আমি এতটুকু দৃঢ় সংকল্পে বলতে পারি, সিনেমাটা মানুষের ভালো লাগবে।

প্রিয়.কম: বলতে গেলে বর্তমানে বাংলাদেশে নির্মিত বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ছবি থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ছবির কাহিনি ও নির্মাণশৈলীসহ সবকিছু মিলিয়ে দর্শক টানতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে একটি বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এটা কী আপনার ছবির জন্য বাড়তি কোনো সুবিধা?

তাহসান খান: আমি আসলে অন্য সিনেমার জাজমেন্ট করতে চাই না। আমি ওই ব্যাপারটা জানিও না। তবে দুটো ব্যাপার আপনার কথায় উঠে এসেছে। একটা ভালো সিনেমা, আরেকটা ব্যবসা সফল সিনেমা। যখন দুটোই ভালো হয় মানে সিনেমাবোদ্ধরাও ভালো বলল, যারা সাধারণ জনগণ চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারেন না, কিন্তু তাদের দেখার পরও ভালো লাগল। এই ব্যালেন্সডটা খবুই ক্রিটিক্যালি এবং খুবই কঠিন একটা জায়গা। আমাদের এই সিনেমাটা কোন জায়গায় যাবে, সেটা সিনেমা রিলেজের পরই বলতে পারব। আমার তো দিব্য দৃষ্টি নেই। আমি যতটুকু বুঝি, এটা এমন একটা গল্প নিয়ে নির্মিত, যেটা সার্বজনীন। পরিবারের গল্প। বাবা-মেয়ের গল্প। প্রেমিক-প্রেমিকার গল্প। পুরনো প্রেমিকের সাথে প্রেমিকার গল্প। কিছু গল্প আছে সবার লাইফের সাথে কোথাও না কোথাও নাড়া দিবে। এটা তেমনই।

এখন মানুষ সিনেমা দেখতে যাচ্ছে না কেন, সেটা তো বড় একটা বিতর্ক। এখানে নির্মাণশৈলী যেমন আছে, সেরকমভাবে প্রিয়মুখ দেখতে যাওয়ার চাহিদাটাও আছে। হলিউড, বলিউডে অনেক সময় দেখা যায়, সিনেমাবোদ্ধারা বলছে খুবই পচা হয়েছে সিনেমাটা। কিন্তু দর্শকরা উপচেপড়ে দেখতে যাচ্ছেন। কারণ তাদের পছন্দ যে নায়ক বা নায়িকা, তাদেরকে তারা দেখতে যাবেই। তাই আমার ওখান থেকে একটা প্রত্যাশা আছে। অনেক মানুষ আমাকে ভালোবাসে। এজন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

আমার যারা ভক্ত-শ্রোতা তারা সিনেমা দেখতে যাবে। যারা শুধু সিনেমা ভালোবাসে তারাও যাবে। যারা আমাকে ভালোবাসে তারাও যাবে। তবে শুরুতে শুধু মানুষের ভালোবাসা পুঁজি করে তো আমি বলতে পারি না, সিনেমাটা অনেক ভালো করবে। দর্শকরা সিনেমা হল থেকে বের হয়ে তার বন্ধু-বান্ধবদের ফেসবুকে কিংবা মুখোমুখি কী বলল, সেটার ওপর ডিপেন্ড করবে ঠিক কোন দিকে যাবে। আমি থাকাতে যে বাড়তি সুবিধাটা হবে, অনেকেই আছেন যারা আমাকে বড় পর্দায় দেখতে চান, তাদের ইচ্ছেটা পূরণ হবে।

তাদের সংখ্যা কত, সেটা আমি বলতে পারব না। তবে সংখ্যাটা কম নয়। এ কারণে একটা বাড়তি সুবিধা থাকবে। এ বাড়তি সুবিধার কারণেই সিনেমাটা হিট হবে তা না। সিনেমাটা হিট হয় আসলে ১৬ কোটি মানুষের মধ্য অনেক সিনেমাপ্রেমী আছে, যারা আমাকে ভালোবাসতে পারে কিংবা নাও পারে। আমার কাজ আগে দেখেছেন কিংবা নাও দেখতে পারেন। সেই মানুষরাও যখন যাবে, তখনই হিট হবে। শুধু তো শহর আর ফেসবুকমুখী দর্শক দিয়ে সিনেমার বাজার বিচার করা যায় না। আমি পুরো বিষয়টা বাংলাদেশের মানুষের হাতেই ছেড়ে দিয়েছি।

দর্শকের জায়গা থেকে আমরা সিনেমাটাকে ভালোবেসেছি। যিনি এডিটিং করছেন, ডিওপি হিসেবে কাজ করেছেন তারা যখন ছবিটি দেখেছেন, তারা কেঁদে ফেলছেন। তারা এতবার গল্পটা শুনেছেন, তারপরও তাদের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে, সেখান থেকেই মনে হচ্ছে আমরা কিছু জায়গাতে হলেও কাজ করেছি। সিনেমা তো অনেক কঠিন বিষয়। ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ধৈর্য্য নিয়ে মানুষ কেন বসে থাকবে? নিশ্চয়ই অনুভূতির একটা জায়গা ছুঁতে হবে। আমরা ওটা চেষ্টা করেছি।

এখন ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক পলিটিক্স হয়। আমরা যে কাজটা করছি অনেক মানুষ আমাদের ভালো চায়, অনেক মানুষ ভালো চায় না। কারণ ইন্ডাস্ট্রি পলিটিক্স ও জেলাসির মধ্য থেকে এটা হয়। কিন্তু আমি খুবই খুশি, শেষ দুদিন যখন প্রচারণা করেছি তখন দেখলাম ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যেকটা মানুষ প্রচারে সহযোগিতা করছেন। এজন্য তাদের প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ।

যারা চায় না ভালো কিছু হোক, তাদের বুঝতে হবে একটা ভালো সিনেমা কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির জন্যই ভালো। একটা ইন্ডাস্ট্রি রান করতে হলে অন্তত ৬-৭ জন নায়ক-নায়িকা, প্রযোজক, নির্মাতা ও যথেষ্ট দক্ষ কলাকুশলী লাগবে। কিন্তু আমাদের তো এই সংখ্যাটাই নেই। পাশাপাশি হল ও সিনেমা পরিবেশনের পর অর্থের তুলে আনার দিকগুলোতে আরও স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা লাগবে। তবে যেহেতু সবকিছু একটা ভালোর দিকে যাচ্ছে, তখন আসলে আমাদেরও ভালো সিনেমা উপহার দিতে হবে।

প্রিয়.কম: গানের মানুষ তাহসানকে এরই মধ্যে নাটক ও টেলিছবিতে দেখতে অভ্যস্ত দর্শকরা। গানের পাশাপাশি অভিনয়ের জন্যও যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছেন। নিশ্চয়ই গায়ক তাহসানের মনের ভেতর নায়ক হওয়ার একটা গোপন বাসনা কাজ করে। এখন ‘যদি একদিন’ বড় পর্দায় নায়ক হিসেবে আপনাকে কতটা দাঁড় করতে পারবে?

তাহসান খান: আমার মধ্যে একধরনের জেদ আছে। আমাদের দেশে আমরা অনেকেই বলি আমরা দেশপ্রেমিক। কিন্তু দেশের প্রতি প্রেম নিয়ে কাজটা করি না। আমি যখন চিন্তা করলাম, আমি ফুলটাইম গান করব, তখন অনেকেই বলতে লাগলেন, এ দেশের গানের ইন্ডাস্ট্রি ভালো না, গান করে কতই বা টাকা আয় হবে, সম্মানই নেই। আমি কিন্তু গত ১৬ বছর ধরে ফাইট করছি, গান করছি। একটা সময় যখন পাইরেসিতে ইন্ডাস্ট্রি ডুবে গেল, তখনো বলেছি আমি গান ছাড়ব না। আমার পরিচিত অনেক মেধাবী গায়ক গান ছেড়ে দিয়েছে। আমি কিন্তু ছাড়িনি। সেটার সুফল আমি কিন্তু পাচ্ছি।

এরপর যখন সিনেমাতে গান করার কথা বললাম, তখন কিছু মানুষ নাক সিটকানো শুরু করল। সিনেমার গান। ছি, আপনি পচে যাবেন। এরপর যখন ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবির গানটি এলো, তখন তো মানুষ খুব বাহবা দিলো। যখন আমি অভিনয় করতে শুরু করলাম, তখন অনেকেই বলতে লাগল, আপনি কেন অভিনয় করতে যাচ্ছেন? কি দরকার, সবকিছু করতে হবে কেন? আমার কথা হচ্ছে, আমি তো করতে চাচ্ছি না, নির্মাতা ও প্রযোজকরা চাচ্ছেন। তারা বলছেন, নাটকের অবস্থা ভালো না, দর্শক বড় মুখ দেখতে চায়। আপনি দু-তিনটা করেন। আমি এ অনুরোধ বছরের পর বছর শুনতে শুনতে দু-তিনটা নাটক করলাম। তারপর যখন দেখলাম ভিউয়ার শিপ ভালো, তারপর কিছু কাজ করলাম। আমার অভিনয়টা মানুষ নিয়েছে।

কে কি বলল সেটাতে পাত্তা না দিয়ে যার জন্য কাজটা করেছি, সে আমাকে পাত্তা দিলো কি না, সেটাকেই মূল বিষয় হিসেবে দেখি। বাংলাদেশের অনেক মানুষ আছে, যারা গত ৫ বছর ধরে বলেছে তারা আমায় বড় পর্দায় দেখতে চায়। আমি সেই দেশপ্রেমের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই কাজটা করেছি। আমি কাজটা যদি ফিল্মে নতুন কিছু দর্শক যোগ করে সেটাই তো পরম পাওয়া।

হলিউড, বলিউডে জিডিপির বড় একটা অংশ কনট্রিবিউট করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু আমাদের দেশের এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিটাকে আমরাই বাড়তে দিচ্ছি না। যার কারণে অনুদান নির্ভরই হয়ে আছে। যেখানে ব্যবসা সফল ও ক্যারিয়ার যে ভালো হতে পারে সেটা আমরা প্রমাণ করছি না। যে মানুষগুলোকে মন দিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, সেটা হয়তো হচ্ছে না। বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত মানুষকে আরও বেশি ইনভলভ হতে হবে। আমরা গতানুগতিক চিন্তার বাইরে এসে কীভাবে ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করানো যায়, সেটা চিন্তা করতে পারি। করপোরেটদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

যারা বলছে সিনেমাতে অভিনয় করা আমার সুপ্ত বাসনা কি না, তারা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে চিন্তা করছে না। তারা আমাকে নিয়ে ভাবছে। আমার জীবনে যত চাওয়া ছিল, তার থেকে অনেক বেশি আমি পেয়েছি।

আমি সিনেমা করাতে কারও কোনো ক্ষতি হবে না। বরং লাভ হবে। এই চিন্তাটা তাদের বুঝতে হবে। এখানে আমরা কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী নিই। এখানে আমরা একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু আমাদের দেশে যেটা হয়, একে অপরের ভালো দেখতে পারছি না বিধায় ইন্ডাস্ট্রিরও ভালো দেখতে পারছি না।

প্রিয়.কম: এ ছবিতে আপনি ফয়সাল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাহসান ব্যক্তিজীবন কিংবা কর্মক্ষেত্রে যে রকম, ছবির চরিত্রও কি তার মতোই?

তাহসান খান: আমার সাথে মিল বলতে একজন কর্পোরেট সিঙ্গেল ফাদার। তাই চরিত্রটা ধারণ করা আমার জন্য সহজ ছিল। আমি যেহেতু একটা সময় কর্পোরেট জব করেছি, আমি জানি ওখানকার কালচারটা কেমন, তাদের অ্যাটিটিউডটা কেমন। চরিত্রটা আমার চেয়ে কেউ ভালো করে ফুটিয়ে তুলত কিনা, জানি না। আমার ধারণা নির্মাতা এ কারণেই আমাকে চরিত্রটির জন্য কাস্ট করেছেন।

প্রিয়.কম: ‘যদি একদিন’ ছবিটার জন্য ব্যক্তি তাহসানকে কতটা বদল করতে হয়েছে?

তাহসান খান: যেদিন আমি চিত্রনাট্যটা পেয়েছি, সেদিন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। রাজ (নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ) আমাকে ৭-৮টা স্টোরি শুনিয়েছে। ওর ধৈর্য্যকে খুবই সাধুবাদ জানাই। সাধারণত যখন কাউকে বলি, স্টোরিটা ভালো লাগেনি। তখন সে আমার ওপর খুবই বিরক্ত হয়ে গালিগালাজ করে। রাজ তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম। ও কখনো দমে যায়নি। ব্যক্তিগতভাবে নেয়নি।

ও বুঝেছে, একটা মানুষের প্রথম সিনেমা সেটা বেস্ট না হলে সে করবে না। এরপর একদিন আমাকে গল্পটা রেডি করে শুনিয়ে বলল, এটা বিরতি পর্যন্ত। তারপর বলেছি, এটাই করব। কিন্তু বিরতির পরের স্টোরি আমি গাইড করেছি। এরপর রাজ সুনিপুণভাবে আমার প্লটটাকে চিত্রনাট্যে রূপ দিয়েছে। চরিত্রটাকে ধারণ করতে গেলে প্রস্তুতি আসলে মাথার মধ্যেই থাকে।

প্রথমদিন থেকেই আমি দেখছি, রোলটা আমারই। রোলটা প্লে করব আমার মতো করে। তাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভিন্ন কোনো মেকআপ, কথা বলার ভঙ্গি নিয়ে চর্চা করতে হয়নি। এটা যেহেতু প্রথম সিনেমা, তাই এক্সপেরিমেন্টাল কিছু করে মানুষের সামনে যেতে চাইনি রোল হিসেবে। আমাকে পর্দায় মানুষ যেভাবে গ্রহণ করেছে, সেটার একটা বড় বহিঃপ্রকাশ এখানে করার চেষ্টা করেছি।

প্রিয়.কম: বাংলাদেশে এর আগে বেশকয়েকজন গায়ক ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। কেউ কেউ সফলতা পেয়েছেন। কেউ আবার পাননি। আপনি কেন এ ঝুঁকিটা নিলেন? বড় পর্দা আরও বেশি নেম-ফেম, নাকি ভিন্ন কোনো কারণ?

তাহসান খান: চ্যালেঞ্জ নিতে মানুষ পছন্দ করে, আমিও তাই। আমি নিজেকে একজন পলিম্যাথ (বহুবিদ্যাবিশারদ) হিসেবেই গড়ে তুলতে চাই। জীবনটা অনেক বড়। ‘আউটলায়ারস’ নামে একটা বই আছে। এটা আমার খুব প্রিয় একটা বই। যে বইয়ে ম্যালকলম গ্লদউল রিসার্চের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, যদি কোনো ফিল্ডে আপনি যদি ১০ হাজার ঘণ্টা সময় দেন আপনি ওই ফিল্ডে টপস্কিল অর্জন করতে পারবেন।

যখন ব্লাকে কিবোর্ড বাজানো শুরু করি, তার আগেই আমার ১০ হাজার ঘণ্টা কিবোর্ড বাজানো হয়ে গেছে। পলিম্যাথরা ওই রেনেসাঁর যুগ থেকেই তাদের জীবনের একেকটা অংশ বেছে নিত, শুধু এই যুগটা শুধু নির্দিষ্ট একটা বিষয়ে কনসেনট্রেট করবে বলে।

যখন পলিম্যাথরা কাজ শুরু করেন, তখন তারা একধরনের বাধার সম্মুখীন হন। কিন্তু তার জীবন যখন শেষ হয়ে যায়, তখন কিন্তু কেউ আর প্রশ্ন করে না। আমি তো সামান্য একজন মানুষ। কিন্তু কেউ তো নিজেকে সারাজীবন সামান্য ভাবতে চায় না। আমার বয়স যখন ৮০ হবে কিংবা মারা যাব, সে সময় মানুষ যখন তাহসানের কথা মনে করবে, সেদিন কিন্তু কেউ আর প্রশ্ন করবে না। তখন তারা বলবে, তাহসান ৩০০ গান করেছে ও তার মধ্যে ১০০ বেঁচে আছে; তাহসান ৬০টা নাটক করেছে, তারমধ্যে ১০টা এখনো মনে রেখেছে। কাজের মতো কাজ কিন্তু অনেক করা লাগে না। সিনেমা আমি যে অনেক করতে চাই, তা নয়। কিন্তু এমন কিছু কাজ করতে চাই, যেটা মানুষের মনে দাগ কাটবে। বেঁচে থাকবে।

ওই জায়গা থেকেই সিনেমাটা করা। আমি নিজেকে একজন পলিম্যাথ ভাবি। সিনেমা করার আগে আমি ৭০-৮০টা নাটক করে ফেলেছি। ১০ হাজার ঘন্টা শুটিংয়ে দিয়ে দিয়েছি। আমার সুপ্ত বাসনা ওটাই আমার কাজগুলো সব মাধ্যমে বেঁচে থাকুক।

প্রিয়.কম: আপনি সবসময় নিজেকে গানের মানুষ হিসেবে অভিহিত করেন। কিন্তু আপনাকে গানের পাশাপাশি অভিনয় ছাড়াও অন্যান্য মিডিয়ামের কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। মানে বলছি, পুরোটা সময় গানে দেওয়ার কথা। বিষয়টা সাংঘর্ষিক হয়ে যায় কি না?

তাহসান খান: না, সাংঘর্ষিক না। কারণ আমি সমালোচকদের সম্মান দিই। আমাকে কেউ কখনো তো প্রশ্ন করে না, আপনি গান করেন কেন? যেহেতু আমার গান দিয়ে শুরু, দেশের মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছে, বিধায় একদল মানুষ আমাকে নিতে পারছে না। এজন্য আমি তাদের শান্তির জন্যই বলি, আমি গানের মানুষ। আমি আসলে কোন জগতের মানুষ, সেটা তো আমার চিন্তা করার প্রয়োজন নাই। আমি একজন শিল্পী। আমি বাংলাদেশের মানুষদের জন্য কাজ করি। তাদের বিনোদনের খোড়াক জোগাই। বাংলাদেশের মানুষের যদি ৫ মিনিট সময় থাকে, সে যদি বিনোদনের জন্য তার কম্পিউটারে বসে, সে যেন বাংলাদেশের একটা কনটেন্ট দেখে।

প্রিয়.কম: তাহসান বলতেই স্ক্রিনে একটা রোমান্টিক ইমেজ। কিন্তু আপনি অ্যাকশন-থ্রিলার গল্পে কিংবা নির্দিষ্ট ইমেজের বাইরে গিয়ে কাজ করতে কতটা প্রস্তুত?

তাহসান খান: না, আমি প্রস্তুত না। আমাকে যদি বলা হয়, এখন আমাকে মারামারি করতে হবে, নাচতে হবে, তা সম্ভব নয়। এ কারণে গত ৬-৭ বছর যে ছবিগুলোতে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছে সে কাজগুলো করিনি। তাই আমি যেটার জন্য প্রস্তুত না, আমি সেটা করব না। তবে গল্প যদি আমাকে ডিমান্ড করে, সেটার জন্য যদি আমাকে প্রশিক্ষণ নিতে হয়, আমি তার জন্য চিন্তা করব। কিন্তু ‘যদি একদিন’ এর জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম।

প্রিয়.কম: আপনি ও নির্মাতা (মোস্তফা কামাল রাজ) দুজনই তরুণ। কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

তাহসান খান: আমাদের এ জার্নিটা ভালোবাসার এবং ঝগড়ার। আমার ধারণা, ওকে এ কাজটার আগে এত বেশি গঠনমূলক সমালোচনা কেউ করেনি। আমাকেও এরচেয়ে বেশি গঠনমূলক সমালোচনা কেউ করেনি। একটা মানুষের সবকিছু ঠিক হতে পারে না। ১০ বছরের বাচ্চা যেমন শিখছে, ৮০ বছরের বৃদ্ধও তেমন শিখছে। কেউ পারফেক্ট না। আমার বুঝতে হবে, আমার যে জায়গাটা ভালো সেটার প্রশংসা নিবো; যে জায়গাটা আমার খারাপ, সেটার গঠনমূলক সমালোচনা দিয়ে বদলাতে হবে।

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো মানুষ নেই, যাকে সবাই ভালোবাসে। আমাকে এ বিষয়টা গ্রহণ করে নিতে হবে। রাজ এমন একজন মানুষ, যে আমাকে ভালোবাসে, আবার গঠনমূলক সমালোচনা করে। আমিও রাজকে ভালোবাসি, আবার গঠনমূলক সমালোচনা করি। আমরা একই সুতোয় গাঁথা।

প্রিয়.কম: এই ছবিতে আপনার নায়িকা শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

তাহসান খান: খুবই ভালো একজন অভিনেত্রী। এত বছর ধরে অভিনয় করছেন, তার অভিনয়ের জায়গাটা যে কি স্ট্রং, এটা আসলে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি। আগে ওভাবে খেয়াল করা হয়নি। অসাধারণ একজন মানুষ। সহশিল্পী যদি সহযোগিতা না করতেন, আমি প্রথম কাজ হিসেবে কিন্তু ব্যর্থ হয়ে যেতাম। আমি অনেকদিন ধরেই একই রকম কাজ করছি। সেটা হলো গান আর নাটক, যার মধ্যে কোনো ঝুঁকি ছিল না। তাই কোনো চ্যালেঞ্জও মনে হচ্ছিল না। বড় পর্দায় দর্শক আমাকে দেখবে কি না, এটা একটা চ্যালেঞ্জ। আর এই ক্ষেত্রে সহযোগিতাটা শ্রাবন্তীর কাছ থেকে পেয়েছি।

প্রিয় বিনোদন/রিমন