মানুষ বেঁচে না থাকলেও যে কাজ বেঁচে থাকবে, সেই ধরনের কাজই বেশি টানে সজলকে। ছবি: প্রিয়.কম
‘আমি মেধাবী কেউ না, পরিশ্রমী মানুষ’
আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯, ১২:৫২
(প্রিয়.কম) নিজেকে মেধাবী নয়, পরিশ্রমী মানুষ হিসেবে ভাবেন অভিনেতা আবদুন নূর সজল। পরিশ্রম ছাড়া সফলতার বিকল্প নেই বলেই মনে করেন তিনি। কাজও করেন খুব বেছে বেছে, প্রস্তাব পেলেই সব ক্ষেত্রে কাজ তিনি করেন না। দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় জগতের সঙ্গে থাকা সজল তার ব্যস্ততা, কাজ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ব্যক্তিজীবনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রিয়.কমের সঙ্গে।
স্বাধীন প্ল্যাটফর্মগুলোতে সজলের বেশকিছু টিভি নাটক ও টেলিফিল্ম রয়েছে। এসব চরিত্রের ভিন্নতা রয়েছে, দর্শকও দেখছেন। কিন্তু আলোচনায় থাকার মতো কাজ দেখা যাচ্ছে না কেন? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো আলোচনায় থাকা কিংবা না থাকার কথা ভেবে কোনো কাজ করি না। আমি দেখি গল্পটা আমায় টানে কি না, ভিন্নতা আছে কি না। আমি ইন্ডাস্ট্রিতে আছি ২০ বছর হলো। এত দিন এখানে কাজ করব, সেটাও আমি কোনোদিন ভাবি নাই। আমার কাজের প্রতি দর্শকদের একটা ভালো লাগার জায়গা ছিল বলেই এতদিন পর্যন্ত কাজ করছি।’
‘আমি এখন যেই সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি, আমার চিন্তার জায়গাটা একদমই ভিন্ন। আমাকে জনপ্রিয় সব কাজ করতে হবে, বিষয়টা তেমন নেই। যে কাজটা আমাকে টানবে, আমি না থাকলেও বেঁচে থাকবে, সে ধরনের কাজ এখন আমায় টানে বেশি। এটাই জীবনের বাস্তবতা।’
‘আমি নিজের কাছে নিজে স্পষ্ট হয়েছি, আমার নিজের চাওয়াটা আসলে কি। আমি কি করতে চাই, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তারপর আসলে সবকিছু। তাই কোথায় কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে—এসব নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। ওসব থেকে নিজেকে দূরেও রাখি,’ যোগ করেন সজল।
এই অভিনেতা মনে করেন, কারো ব্যক্তিচিন্তা কারো ওপর এক্সপেরিমেন্ট করা ঠিক নয়। এতে অনেক সময় হিতে বিপরীতও হতে পারে। এ বিষয়ে সজল বলেন, ‘আমরা চলার পথে ভুল এবং সঠিক দুটো বিষয় নিজেদের মতো চিন্তা করে নেই। কিন্তু সেটা তো অন্যের জীবনে প্রয়োগ করে তার দিক নির্ধারণ করার কোনো সুযোগ নেই। আবার সেটা যে মিলে যাবে তারও কোনো মানে নেই।’
‘আমি এমন একটা মানুষ যে কখনো কোনো এক্সপেকটেশন নিয়ে পথ চলি না। তবে আমি যে কাজ করছি সেটা মনোযোগ দিয়েই করি। গত দশ বছরে আমি কোনো ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করিনি। যখন যে কাজটা মনে হয়েছে করা উচিত, আমি সে কাজটাই করেছি।’
শোবিজকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে আলাদা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করেছেন সজল। ‘আমার একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। কর্মকাণ্ডের আলাদা একটা বলয় আছে। সে জন্য সময়টা কম পাই। কাজ আরও কম করি। আর সময় পেলেও যে খুব বেশি কাজ করতাম তাও না। আর যদি একটা সময় গিয়ে কাজ ভালো না লাগে তখন আর কাজই করব না’, বলেন সজল।
বোকা বাক্সের এই অভিনেতা বলেন, ‘যদি দেখি কাজটা মনোযোগ দিয়ে করতে পারব না কিংবা ফাঁকিবাজি করব, তখন আর কাজটা করার আগ্রহও থাকবে না। তাই করিও না। আর আমি কখনো ভাবি না, আমি মেধাবী কেউ। বরাবরই মনে হয় আমি পরিশ্রমী মানুষ। ভালো কিছু করতে হলে আমাকে পরিশ্রম করতে হয়। যখন পরিশ্রম করতে হবে তখন আমাকে টাইম ও অ্যাফোর্ড দিতে হবে। আমি সেটাই করি।’
ক্যারিয়ারে সজল অভিনয় করেছেন ‘রান আউট’ ও ‘নিঝুম অরণ্যে’ নামে ছবিতে। এরপর আর কোনো ছবিতে দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি একটি ছবিতে অভিনয়ের বিষয়ে তার সঙ্গে একজন পরিচালকের কথাবার্তা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিকল্পনায় কখনো ছিল না বছরে দুই-তিনটা ছবিতে অভিনয় করব। যদি সে রকম কিছু ভাবতাম, তাহলে আমার ক্যারিয়ারে আরও অনেক ছবির নাম যোগ হতে পারত। নতুন ছবিতে অভিনয়ের বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। তবে এখনই সে বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। আরেকটু সময় লাগবে। কারণ চিত্রনাট্যটা এখনো হাতে পাইনি।’
রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল নাকি কম্পলিকেটেড—এ বিষয়ে কথা তুলতেই সজল বললেন, ‘বিষয়টা পাবলিক না করাই ভালো। কিছু বিষয় ব্যক্তিজীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা ভালো।’
সজলের ভাষ্য, ‘আমার পরিবার সব বিষয়ে আমাকে ভীষণ সাপোর্ট করে। তাদের কথা একটাই, যখন যা করবে সেটা যেন পারফেক্টলি হয়। নিজে আরেকটু গুছালো হই। তারপর না হয় সামনে এগুনো যাবে। প্রত্যেকটা বয়সে প্রত্যেকটা শিল্পীর জীবনে আলাদা একটা জায়গা থাকে। আমিও ভাবছি জীবনটাকে কীভাবে আরও গুছালোভাবে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়।’
‘জীবন কিন্ত অনেক ছোট। এই এক জীবনে কে কী করতে চায়, সেটা আসলে সে নিজেই নির্ধারণ করে। আমিও তেমন একজন মানুষ। আর আমি আসলে উচ্চাকাঙ্খী মানুষ না। আমার এক্সপেকটেশন লেভেল কখনোই আকাশচুম্বী ছিল না। আমি খুবই সাধারণ একজন। আমি সামনের ১০-২০ দিন দেখি। আমি যেন সামনের এ কয়েকটা দিন ভালো করে বাঁচতে পারি। এটাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
পেশাগত জীবনে ব্যস্ততার ভিড়ে নিজেকে কেমন সময় দেওয়া হয়—এমন প্রশ্নে সজল বলেন, ‘কম পাই। তবে যখনই সময় পাই নিজেকে নিজের মতো করেই এন্টারটেইন করি। সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দিই ঘুমকে। এ ছাড়া সিনেমা দেখি, বই পড়ি, ঘুরতে যাই। আর কিছু পাগলামি তো আছেই। আমার পারিবারিক জীবনযাপনটা অনেক আনন্দের। সে জন্য কোনো জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় না।’
প্রিয় বিনোদন/রিমন