কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

১৮০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯ নম্বরে। ছবি: ফাইল

দুর্নীতিতে চার ধাপ অবনতি বাংলাদেশের: টিআইবি

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৪৪
আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৪৪

(প্রিয়.কম) বাংলাদেশে আগের চেয়ে দুর্নীতি বেড়েছে। দুর্নীতিতে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম, যা এক বছর আগে ছিল ১৭তম স্থানে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রকাশ করা দুর্নীতির ধারণা সূচকে (করাপশন পারসেপশনস্ ইনডেক্স—সিপিআই) বাংলাদেশের চার ধাপ অবনতির কথা জানানো হয়েছে।

দুর্নীতির ধারণা সূচক অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। ওই বছর বাংলাদেশ সূচকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর করেছে ২৬। আগের বছর স্কোর ছিল ২৮। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থান ছিল নিচের দিক থেকে ১৭। ২০১৮ সালে হয়েছে ১৩। উপরের দিক থেকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯। ধারণা সূচকে পাকিস্তানের স্কোর ৩৩, উপরের দিক দেশটির অবস্থান ১১৭। ভারতের অবস্থান ৭৮, তাদের স্কোর ৪১।

২৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

গত তিন বছরের দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের দুনীর্তির চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক প্রণীত ও প্রকাশিত এ সূচকে দুর্নীতির বিশ্বব্যাপী ব্যাপকতার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। একটি দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে বিরাজমান দুর্নীতির ব্যাপকতা সম্পর্কে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সংশ্লিষ্ট খাতের গবেষক ও বিশ্লেষকবৃন্দের ধারণার ওপর ভিত্তি করে অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের দুর্নীতির অবস্থান নির্ণয় করা হয়।

১৯৯৫ সাল থেকে টিআই এই সূচক প্রকাশ করে আসছে। প্রতিবছরই কোনো না কোনো দেশ এ সূচকের তালিকাভুক্ত হয়। শুরুর দিকে মাত্র ৪৫টি দেশ এ সূচকের মানদণ্ডে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০০১ সালে টিআই প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশ প্রথম তালিকাভুক্ত হয়। তখন এ তালিকায় মোট ৯১টি দেশ ছিল। ২০১৬ সালে মোট দেশের সংখ্যা ছিল ১৭৬টি। আর ২০১৭ সাল থেকে এই সূচকে দেশের সংখ্যা ১৮০টি।

১৮০টি দেশের উপর চালানো জরিপে ০ থেকে ১০০ নম্বরের স্কেলে দেশগুলোকে নম্বর দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম নম্বর (১০ স্কোর) পেয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে সোমালিয়া। তার পরেই রয়েছে (১৩ স্কোর) সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান। এ ছাড়া তৃতীয় অবস্থানে (১৪ স্কোর) রয়েছে ইয়েমেন ও উত্তর কোরিয়া।

আর সবচেয়ে বেশি (৮৮ স্কোর) পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বিবেচিত হয়েছে ডেনমার্ক। কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে এর পরেই রয়েছে (৮৭ স্কোর) নিউজিল্যান্ড। তৃতীয় অবস্থানে (৮৫ স্কোর) রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুজারল্যান্ড।

সমান ২৬ স্কোর পেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ১৩ নম্বর অবস্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও উগান্ডা।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ আফগানিস্তান (১৬ স্কোর)। আর সবচেয়ে কম দুর্নীতি ভুটানে (৬৮)। এই এলাকায় দুর্নীতির দিক থেকে আফগানিস্তানের পরই রয়েছে বাংলাদেশ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতিতে আমাদের অবস্থান বৈশ্বিক অবস্থানের চেয়ে অনেক নিচে। এখানে আত্মতুষ্টির কোনো অবস্থা নেই।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার কারণ এখানে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও ঘোষণা থাকলেও এটার বাস্তবায়ন সেভাবে নেই। উচ্চ পর্যায়ের লোকদের বিচারের আওতায় আনার সেরকম উদাহরণ কম। ব্যাংক খাতে অবারিত দুর্নীতি, জালিয়াতি, ভূমি-নদী-জলাশয় দখল, সরকারি ক্রয় খাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কারণে দুর্নীতি একধরনের ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।

একনজরে সিপিআই ২০১৮

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক ও অন্যান্য জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল। গণমাধ্যম ও নাগরিক প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগতভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুদকের কাজ নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে সীমাবদ্ধ উচ্চ পর্যায়ে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর “জিরো টলারেন্সের” যে ঘোষণা আছে সেটা কার্যকর করার জন্য পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়ন করা দরকার। সংসদকে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা দরকার। আসামিদের পরিচয় ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

অনুষ্ঠানে টিআইবির ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।