কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ফাইল ছবি

জুলহাস-তনয় হত্যা মামলায় আরেক ‘জঙ্গী’ গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিয়.কম
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:২৬
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:২৬

(প্রিয়.কম) রাজধানীর কলাবাগানের একটি বাসায় খুন হওয়া সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যা মামলায় এক যুবককে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। তার নাম আসাদুল্লাহ (২৫)। তিনি এই হত্যার সাথে জড়িত বলে দাবি করেছে সিটিটিসি। সেইসঙ্গে আসাদুল্লাহ জঙ্গী সংগঠন আনসার উল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য।

১৫ জানুয়ারি, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তাকে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ওবায়দুর রহমান।

গ্রেফতারকৃত আসাদুল্লাহর বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুরের মদনপুরে। তার বাবার নাম এমদাদুল হক। তার বাবা চুয়াডাঙ্গার মাধবপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। কিছুদিন ধরে টঙ্গীর মরকুন কবরস্থান গেইট এলাকায় থাকছিলেন আসাদুল্লাহ।

এই ঘটনায় পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসাদুল্লাহ ছাড়া বাকি তিনজন হলেন আরাফাত ওরফে শামস ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ, সায়মন ওরফে শাহরিয়ার এবং আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের।

২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের এক বাসায় ঢুকে ইউএসএইড কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু থিয়েটারকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় খুনিরা পালানোর সময় ওই বাড়ির দারোয়ান পারভেজ মোল্লাও তাদের হামলার শিকার হন। তবে পালিয়ে যাওয়া যুবকদের একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে রাখেন কলাবাগান এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মমতাজ। যার ভেতরে একটি পিস্তল, একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও মোবাইল ফোন পাওয়া গিয়েছিল।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক দীপু মনির খালাত ভাই জুলহাজ সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। পরে তিনি যোগ দেন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডে। তিনি রূপবান নামে একটি সাময়িকীর সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন। জুলহাজের বন্ধু নিহত মাহবুব রাব্বী তনয় নাট্য সংগঠন লোকনাট্য দলের কর্মী ছিলেন। শিশু সংগঠন পিপলস থিয়েটার এ ‘শিশু নাট্য প্রশিক্ষক’ হিসেবেও কাজ করতেন তিনি।

এ ঘটনার রাতে জুলহাজের ভাই মিনহাজ মান্নান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে আরও একটি মামলা করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। সেটি করেন কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শমীম আহমেদ। তাতে এএসআই মমতাজের ওপর হামলা এবং অস্ত্র পাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়।

পুলিশের দাবি, আসাদুল্লাহ নিষিদ্ধ জঙ্গি দল আনসার উল্লাহ বাংলাটিমের সামরিক শাখার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধারন করে চলতেন। কখনো ফখরুল, ফয়সাল, জাকির বা সাদিক নাম নিয়ে তিনি সাংগঠনিক চালাতেন। জুলহাস-তনয় হত্যায় তিনিসহ পাঁচজন অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কারা তাদের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।

১৬ জানুয়ারী ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই আসাদুল্লাহ ২০১৬ সালে উত্তর বাড্ডার সাঁতারকুলে পুলিশের ওপর হামলা করে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাতেও জড়িত ছিলেন। তবে জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল ১৩ জন। ঘটনাস্থলে ছিল ৭ জন। তাদের মধ্যে ৫ জন ভেতরে যায়। অর্থাৎ কিলিং মিশনে পাঁচজন ছিল। আাসাদুল্লাহ ওই পাঁচজনের একজন।’

মনিরুল দাবি করেন, তার পরিবার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি আনসার উল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেওয়ার আগে নোয়াপাড়া ইউনিয়নে শিবিরের সাথী ছিলেন। সে মদনপুর দাখিল মাদ্রাসা এবং যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে লেখাপড়া করেছেন।

ঘটনার দিন টঙ্গী থেকে বাসে করে ঢাকায় আসেন আসাদুল্লাহ। সাতজনের ওই দলের মধ্যে পাঁচজন জুলহাজদের বাড়িতে ঢোকেন। ভুয়া পার্সেল হাতে ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় জুলহাজদের ফ্ল্যাটে যান তাদের মধ্যে তিনজন। বাকি দুজন বাড়ির ফটকে থাকা দারোয়ান পারভেজ মোল্লাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে এবং তাকে আটকে রাখে। ওই দুইজনের দলে ছিলেন আসাদুল্লাহ বলে জানান মনিরুল।

আসাদুল্লাহকে গ্রেফতারের পরদিন বুধবার ১৬ জানুয়ারি আদালতে তুলে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর আদালতের হাকিম মামুনুর রশিদ তার তিনদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।