ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদ। ফাইল ছবি
টিআইবির রিপোর্ট নিয়ে যা বললেন দুই মন্ত্রী
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:২৪
(প্রিয়.কম) প্রার্থীরা সমান সুযোগ না পাওয়াসহ বিভিন্ন ত্রুটির কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত’ বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে প্রচার কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থাটির মতে, এ ধরনের নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নয়।
গতকাল (১৫ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পর্যবেক্ষণে তা বলা হয়েছে। তবে একাদশ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করা অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি টিআইবির প্রতিবেদন সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে। অপর দিকে জনগণের অভূতপূর্ব রায় যারা প্রত্যাখ্যান করে তাদের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
১৬ জানুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিশেষ বর্ধিত সভায় নির্বাচনে জাল ভোটসহ ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে বেসরকারি সংস্থা টিআইবির প্রতিবেদন প্রকাশ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘টিআইবি এখন রূপকথার কাহিনী শোনাচ্ছে। নির্বাচন চলে গেছে এতদিন হলো, তাদের কোনো খোঁজ ছিল না। এতদিন তারা কিছু বলেননি। তখন তারা কোনো ত্রুটি ধরতে পারেনি। এর জবাব জনগণ দেবে।’
ভোটে জয়ী আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে সরকার গঠন করলেও নির্বাচনে অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বিএনপি জোটের নেতারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃভোট দাবি করেছে বিএনপি।
বুধবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন ক্রটিপূর্ণ, একপেশে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন যে শান্তিপূর্ণ হয়েছে সে কথা টিআইবির প্রতিবেদনে নাই। এগুলোতে স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে একপেশে মনগড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এবং পরাজিত পক্ষকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য একটি প্রতিবেদন ছাড়া অন্য কিছু না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির জামায়াতের পক্ষে টিআইবি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে মাত্র অন্য কিছু না।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রতিবেদন নিয়ে মতামত দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি টিআইবি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাকে ‘পূর্বনির্ধারিত ও মনগড়া’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টিআইবি যেটিকে গবেষণা বলে দাবি করছে, তা কোনো গবেষণা নয়, প্রতিবেদন মাত্র। কেননা গবেষণা করতে যেসব পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়, তা এখানে প্রয়োগ করা হয়নি। এটি সম্পূর্ণরূপে মনগড়া প্রতিবেদন। এ ছাড়া বলা হয়েছে, এটা তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন। তার অর্থই হচ্ছে, এই প্রতিবেদন পূর্বনির্ধারিত।’
‘ভোটের কারচুপির তথ্য নিলে অবশ্যই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য নিতে হবে বা লিখিত কোনো ডকুমেন্ট থেকে তথ্য নিতে হবে। কিন্তু টিআইবি তা করেনি। কোন সোর্স থেকে কী প্রক্রিয়ায় তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। কাজেই এটা কোনো গবেষণা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, বলা হয়েছে বাছাইকৃত প্রার্থীদের কাছ থেকে তারা তথ্য নিয়েছে। এক্ষেত্রে জামায়াতের প্রার্থীদের কাছ থেকে তথ্য নিলেও গবেষণা প্রতিবেদন এক রকম হবে। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছ থেকে নিলে আরেক রকম হবে। টিআইবির গবেষণায় এগুলো স্পষ্ট নয়। আমরা এই প্রতিবেদন আমলে নিচ্ছি না। যদি গবেষণা হতো, তবে আমলে নিতে পারতাম।’
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভোট হওয়া ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে দলটি, জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অপরদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা সব মিলিয়ে মাত্র আটটি আসন পেয়েছে।
ভোট নিয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা গেলেও তা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারেনি।
এই প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে টিআইবি কর্মকর্তারা জানান, ৩০০টি আসনের মধ্যে ৫০টি আসন দৈবচয়নের ভিত্তিতে বেছে নিয়ে সেখানে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেন তারা। প্রধান দুটি জোটের এবং ক্ষেত্র বিশেষে তৃতীয় প্রার্থীর ওপর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। মোট ১০৭ জন প্রার্থীর তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রিয় সংবাদ/কামরুল