কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

টিয়াগোর সঙ্গে জাগুয়ারের এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হযয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

জাগুয়ারের সঙ্গে খেলা করে সময় কেটেছে এই কিশোরের

প্রিয় ডেস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:০৫
আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:০৫

(প্রিয়.কম) ব্রাজিলের ১২ বছরের কিশোর টিয়াগো সিলভিয়েরা। ওই কিশোরের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক জোড়া জাগুয়ারের সঙ্গে ওই কিশোর এক হ্রদের মধ্যে। যেখানে একটি জাগুয়ার তার গলা জড়িয়ে ধরে আছে।

কিন্তু অনেকেরই সন্দেহ ছবিটি ভুয়া নয় তো? কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় যে ছবিগুলো ভুয়া নয়। টিয়াগো প্রায়ই এ ধরনের ছবি তুলে থাকে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। 

টিয়াগো অনেক ছোটবেলা থেকেই জাগুয়ারদের সঙ্গে খেলাধুলা করে বড় হয়েছে। ওদের সঙ্গেই বেশির ভাগ সময় কাটায় সে।

টিয়াগো জানান, তার কয়েকজন বন্ধু তাকে বলেছিল ছবিগুলো ভুয়া। কিন্তু ছবিটি আসল। ছবিটি দারুণ লেগেছে। আবার অনেকেই জাগুয়ার দুটো দেখতে চেয়েছে। 

টিয়াগো বলেন, ‘সবাই তো আমার মতো ভাগ্যবান নয়, তাই ওদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা আমি অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিয়াগোর বাবা লিয়ান্দ্রো সিলভিয়েরা আর মা আনা জাকামো দুজনেই ব্রাজিলের জাগুয়ার ইনস্টিটিউটে কাজ করেন। তারা দুজনই বিজ্ঞানী। ওই দম্পতির লক্ষ্য বাঘ, চিতাবাঘ ও জাগুয়ার জাতীয় বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণা করা ও তাদের সংরক্ষণ করা।

টিয়াগোর বাবা লিয়ান্দ্রো সিলভিয়েরা জানান, টিয়াগো এমন একটা পরিবেশে জন্মেছে যেখানে শিশু বয়স থেকে সে জাগুয়ারদের সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছে। তাদের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে চলতে হয় সেটাও সহজাতভাবেই শিখেছে। তবে ওকে সব কিছু করতে দেওয়া হয় না। কিন্তু ও নিজেই জানে কী করা উচিত বা উচিত না।

জাগুয়ারদের সঙ্গে কীভাবে মেলামেশা করতে হবে তা টিয়াগোকে শিখিয়েছে তার বাবা-মা। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, টিয়াগোর যখন জন্ম হয় তখন তার বাবা-মা তিনটা জাগুয়ার ছানাকে বড় করছিলেন। তারা কোথাও বেড়াতে গেলে টিয়াগোর সঙ্গে জাগুয়ার ছানাগুলোও থাকত।

টিয়াগো বলেন, ‘আমাদের এটা ভালোবাসা আর সম্মানের একটা সম্পর্ক। জন্তু জানোয়ারের দেখাশোনায় আমি বাবা-মাকে সবসময় সাহায্য করেছি। ওদের সঙ্গ আমার খুব ভালোলাগে।’

সাধারণ মানুষকে জাগুয়ারের মুখোমুখি হলে কী করতে হয় বলে যে পরামর্শ দেন, ছেলেকেও একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন টিয়াগোর বাবা। টিয়াগোর বাবা আরও জানান, এ ধরনের প্রাণি মানুষকে খাওয়ার জন্য মারে না। এরা যা করে তা শুধু মানুষের আচরণের প্রতিক্রিয়ায়। ওদের শরীরের ভাষা দেখে আপনাকে বুঝে নিতে হবে আপনি ওদের কত কাছে যাবেন।

টিয়াগোর মা আনা জাকামো জানান, তার ছেলে ও জাগুয়ারদের নিয়ে তাকে কোনোদিন বিপদে পড়তে হয়নি। তবে তারা কোনো সময় ছেলেকে কখনো জাগুয়ারদের সঙ্গে কোনো সময় একা ছেড়ে দেননি। 

টিয়াগোর অনেক মিস করে জাগুয়ারদের। ছবি: সংগৃহীত

সিলভিয়েরা ও জাকামোর অভয়ারণ্যটি ১২৩ একর জমির ওপর তৈরি। পর্যটকদের সেখানে প্রবেশ নিষেধ। কারণ তারা জন্তুদের বিরক্ত করতে চান না।

২০০২ সালে জাগুয়ার নিয়ে গবেষণার জন্য তারা এই এলাকটি তৈরি করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ব্রাজিলের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংস্থার অনুরোধে অনাথ জাগুয়ার ছানাগুলোর দায়িত্ব নেন তারা। বর্তমানে তাদের অরণ্য এলাকা মূলত জাগুয়ারদের প্রজনন ভূমি।

বর্তমানে ১৪টি জাগুয়ারের দেখাশোনা করছেন তারা। এর মধ্যে শিশু জাগুয়ার রয়েছে চারটি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের সংরক্ষণ ভূমিতে যেসব জাগুয়ার আসে তাদের ওরা বনে আর ফেরত পাঠায় না। কারণ ওরা মানুষের সঙ্গে বড় হওয়ায় তাদের সঙ্গে মানুষের একটা ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে ওঠে। সিলভিয়েরার মতে, ওই সব জাগুয়ারদের বনে পাঠালে ওরা মানুষের খোঁজে শহরে চলে আসবে এবং মানুষের হাতে প্রাণ হারাবে।

গত বছর টিয়াগো পড়ালেখা করতে তাদের বাড়ি থেকে দূরে চলে যাওয়ায় জাগুয়ারের সঙ্গে তার দেখা হয় কম। টিয়াগো তাদের দারুণ অনেক করে।

ভাইরাল হওয়া ছবিটি তোলা হয়েছিল গত ১৫ নভেম্বর যখন টিয়াগো বাড়িতে এসেছিল।

প্রিয় সংবাদ/আশরাফ