কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা। ছবি: প্রিয়.কম

প্রধানমন্ত্রী নিজেই আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন: রিজভী

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:০৭
আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:০৭

(প্রিয়.কম) প্রধানমন্ত্রী নিজেই নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

রিজভী  বলেন, ‘একের পর এক নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি ন্যূনতম অনুসরণ করছেন না। আর এ বিষয়ে পুরোপুরি নির্বিকার সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। আচরণবিধিমালা ১৪ (২) ভঙ্গ করে শেখ হাসিনা গণভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন।’

১৭ নভেম্বর, শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র ‘হাসিনা: এ ডটারস টেল’ ডকুমেন্টরি ফিল্মটি চারটি সিনেমা হলে ১৬ নভেম্বর শুক্রবার মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস, মধুমিতা ছাড়াও চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছবিটি। এ বিষয়ে রুহুল কবির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে একজন প্রার্থী। শেখ হাসিনা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সেই কারণে ইতিহাসের নানা ঘটনা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ক্ষমতার পালাবদল, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি এককেন্দ্রিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আচরণবিধির চরম লঙ্ঘন।’

রিজভী বলেন, ‘আচরণবিধিতে বলা আছে, এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাবে না। এতে প্রচারণা শুরুর আগেই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে। নিজে প্রার্থী হয়ে নিজেই কীভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ করেন তা বোধগম্য নয়।’

রিজভী আরও বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালার ১২ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, ভোট গ্রহণের তিন সপ্তাহ পূর্বে কোনো প্রকার প্রচার শুরু করা যাবে না। একই সঙ্গে বিধিমালার ১০ (ঙ) ধারানুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারণার জন্য প্রার্থীর ছবি বা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। এই ডকুমেন্টরি ফিল্মটি কি প্রচারণামূলক নয়?’

‘বিধিমালার ৭-এ পোস্টার ব্যহারের বিধি-নিষেধও আছে। সেখানে বলা আছে, সিটি করপোরেশন এবং পৌর এলাকার কোথাও পোস্টার সাঁটানোর কোনো সুযোগ নেই। অথচ ডকুফিল্মটি সিটি করপোরেশন এলাকায় অর্থাৎ সিনেমা হলগুলোয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত পোস্টারসহ রীতিমতো মহড়া আকারে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’

‘ধানমন্ডির সুধা সদনে অবস্থিত সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) পক্ষে ডকুফিল্মটি প্রযোজনা করেছেন রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ঢাকঢোল পিটিয়ে এসব করা হলেও নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন টেলিভিশন ও রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে সিটি করপোরেশনের স্থাপিত টিভি স্ক্রিনে শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আচরণবিধি ভঙ্গের অসংখ্য প্রমাণ থাকলেও নির্বাচন কমিশনের নীরব ভূমিকার কারণে নির্বাচনে ন্যূনতম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। বরং আচরণবিধি লঙ্ঘন না করলেও পরিকল্পিতভাবে ঘটনা তৈরি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এসব কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে কোনোভাবেই সুষ্ঠূ নির্বাচন সম্ভব নয়।’

‘অবিলম্বে শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত ডকুফিল্মটি সিনেমা হলগুলো থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। কোনোভাবেই নির্বাচনকালীন এসব প্রচারণা চালানো যাবে না। পাশাপাশি গণভবনকেও নির্বাচনি কাজে ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচন কমিশন কেন এসব বিষয়ে দ্রুত আচরণবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারের প্রতি নতজানু বলেই নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে কমিশন আগ্রহী নয়।’

নির্বাচন পেছানোর দাবি প্রসঙ্গে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট এমনকি আওয়ামী জোট ছাড়া অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করছে। কারণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের যাবতীয় কার্যক্রম এখনো বাকি রয়েছে, তফসিল ঘোষণার সপ্তাহ পরে চলছে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। অন্যান্য নির্বাচনি কর্মকর্তা নিয়োগই দেওয়া হয়নি।’

‘নির্বাচনি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দলবাজ কর্মকর্তারা বহাল আছেন, তাদের সরিয়ে দিয়ে নিরপেক্ষভাবে প্রশাসন সাজানো হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে সাজানো হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম কোনো পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি কমিশন। মানুষের মন থেকে ভীতি দূর করতে পারেনি। ভোট দেওয়া দূরে থাক, মানুষ নির্ভয়ে মুখ খুলে কথা বলবে—এমন পরিস্থিতিও দেশে নেই। বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। কিন্তু এখনো বর্তমান সরকার বহাল আছে।’

‘একবার বলা হয় নির্বাচনকালীন সরকার ছোট করা হবে, আবার বলা হয় এ সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার, অথচ নির্বাচনকালীন সরকার বলতে সংবিধানে কিছুই নেই। সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করার পরও আওয়ামী লীগ নির্বাচনি প্রচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যরা উন্নয়ন কার্যক্রম উদ্বোধনসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’

‘স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন লাভজনক পদে তারা এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রী-এমপিদের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কোনো আচরণবিধি এখনো তৈরি হয়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তারা যারা ডিসি পদমর্যাদার লোক, তারা কীভাবে মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে—এ প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। তারা সর্বদা মন্ত্রী-এমপিদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আছেন।’

রিজভী বলেন, ‘চকবাজার থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রাসেল ১৬ নভেম্বর বিকেল ৩টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোথাও তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে তার পরিবার-পরিজন ও দলের নেতাকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনই তাকে আটক করেছে।’

এ পর্যন্ত বিএনপির ৪৫৮০টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আমরা এখনো জমা নিচ্ছি। জমা নেওয়া শেষ হলে সে পরিসংখ্যান জানানো হবে।’ নিজের (রিজভী) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করায় দলের মধ্যে কোনো গুজব নেই বলেও জানান তিনি।

রুহুল কবির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে, তা মোটেও সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও সহিংসতায় তফসিল ঘোষণার পর ছয় জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অর্ধশত। কই দেখলাম না তো নির্বাচন কমিশনকে কোনো ব্যবস্থা নিতে! সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিন্দু পরিমাণ কোনো পরিবেশ নেই। এতসব ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন পিছিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করা অত্যাবশ্যক।’

রিজভী বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, একজন কমিশনারের মেয়ের বিয়ে, তাই ৩ জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমিশন একমত হলে উক্ত কমিশনার বাদ সাধেন। এ ছাড়া জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বিশ্ব ইজতেমা, তাই নির্বাচন পেছানো যাবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছে। তাই বিরোধী দলগুলোর দাবি অনুযায়ী নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানাচ্ছি।’

প্রিয় সংবাদ/আজাদ/আজাদ চৌধুরী