কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ঢাকার আশুলিয়ায় রোজিনা হত্যা মামলায় শুক্রবার রাতে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

আশুলিয়ায় হত্যা মামলার বাদীই ‘মূল পরিকল্পনাকারী’

জনি রায়হান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৫২
আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৫২

(প্রিয়.কম) ঢাকার আশুলিয়ায় বাবাকে বাস থেকে ফেলে মেয়ে জরিনা খাতুনকে (৪৫) হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনার পর দায়েরকৃত হত্যা মামলার বাদী ও জরিনার জামাতা নূর ইসলাম নিজেই এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

১৭ নভেম্বর, শনিবার দুপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পিবিআই প্রধান ও পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার।

এর আগে ১৬ নভেম্বর, শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে নূর ইসলাম (২৯), তার মা আমেনা বেগম (৪৮) ও নূরের বিয়ের ঘটক স্বপনকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

পুলিশের ভাষ্য, জরিনার মেয়ে রোজিনা খাতুনের সঙ্গে নূর ইসলামের বিয়ের ঘটক ছিলেন স্বপন। জামাতা নূর ইসলামের অনুরোধে মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে জরিনা হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে সহায়তা করেন স্বপন।

অাসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিঅাইজি জানান, ৫ বছর আগে ঘটক স্বপনের মধ্যস্থতায় রোজিনা ও নূর ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই দুজনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ লেগে থাকত। আর এই বিবাদ মেটাতে প্রায়ই রোজিনার মা জরিনা আশুলিয়ায় জামাতা নূর ইসলামের বাড়ি যেতেন।

সম্প্রতি নূর ও তার স্ত্রীর কলহ প্রকট আকার ধারণ করে। সে জন্য শাশুড়ি জরিনাকে দায়ী করেন নূর। বিষয়টি নিয়ে তিনি (নূর) ও তার মা আমেনা বেগম ঘটক স্বপনের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারা পরিকল্পনা করেন, শাশুড়ি জরিনাকে এমন শিক্ষা দিতে হবে, যেন তিনি আর তাদের বাড়িতে না আসেন। এ জন্য ঘটক স্বপন ১০ হাজার টাকা চান দুজনের কাছে।

ঘটনার দিন দুপুরে সিরাজগঞ্জের নিজের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি আশুলিয়ায় যান জরিনা ও তার বাবা আকবর আলী মণ্ডল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিকেল পাঁচটার দিকে বাবাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন জরিনা। জামাতা নূর ইসলাম তাদের টাঙ্গাইলগামী একটি মিনিবাসে তুলে দেন। এর কিছুক্ষণ পরই বাসের হেলপার ও সুপারভাইজার আকবর আলীকে মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেন। তখন জরিনা বাসের ভেতর ছিলেন। পরে আকবর বিষয়টি নূর ইসলামকে জানালে স্বজনসহ পুলিশ গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে ৫০০ গজ দূর থেকে জরিনার লাশ উদ্ধার করে।

ঘটনার পরিকল্পনা নিয়ে ডিআইজি বনজ কুমার বলেন, ‘ঘটক স্বপন টাকার বিনিময়ে একটি অফ রুটের গাড়ি ঠিক করে। সাধারণত সেসব গাড়ির নির্দিষ্ট রুট নেই, যখন যে দিকে যাত্রী পায়, তখন সেই দিকে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নূর ইসলাম শাশুড়ি জরিনা ও নানা শ্বশুর আকবর আলীকে ওই বাসে তুলে দেন। বাসে দুইজন হেলপার, একজন সুপারভাইজার ও ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ ছিল না।’

‘এরপর চুক্তি অনুযায়ী হেলপার ও সুপারভাইজাররা মিলে আকবর আলীকে মারধর করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর জরিনাকে হত্যা করে আরেকটু দূরে ফেলে পালিয়ে যায়। যেহেতু জরিনার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমরা হাতে পাইনি এবং সরাসরি হত্যায় অংশ নেওয়া চার জনকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাসরোধ করে জরিনাকে হত্যা করা হয়েছে।’

অন্য অাসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাসে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চার জনের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা প্রতিনিয়ত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে। তবে আশা করছি শিগগিরই তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে বাসটি আটক করা হয়েছে।’

গত ৯ নভেম্বর দুপুরে জরিনা তার বাবাকে নিয়ে আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকায় মেয়ের বাড়িতে যান। রাতে তিনি খুন হন।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি ১০ নভেম্বর রাতে আশুলিয়া থানা থেকে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পরের দিন পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পায় পিবিআই।

প্রিয় সংবাদ/নোমান/আজহার